অবশেষে মিশর সীমান্ত দিয়ে গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ
প্রকাশিত : ১৬:২০, ২৭ জুলাই ২০২৫

দীর্ঘদিনের সংঘাত ও খাদ্য সঙ্কটে জর্জরিত গাজাবাসীর কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে অবশেষে কিছুটা অগ্রগতি দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপ ও মানবিক সংস্থাগুলোর সতর্কবার্তার প্রেক্ষিতে মিশর থেকে গাজার উদ্দেশ্যে ত্রাণবাহী ট্রাক যাত্রা শুরু করেছে। এর আগে, ইসরায়েল শনিবার গাজায় প্রথমবারের মতো আকাশপথে ত্রাণ ফেলার কার্যক্রম শুরু করে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, জাতিসংঘের যানবাহনের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে গাজায় ‘মানবিক করিডর’ চালু করা হবে এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে কার্যকর হবে ‘মানবিক বিরতি’।
মিশরের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন আল কাহেরা নিউজ জানায়, রোববার সকালে রাফাহ সীমান্ত অতিক্রম করে ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো দক্ষিণ গাজার কারাম আবু সালেম (কেরেম শালোম) ক্রসিংয়ের দিকে অগ্রসর হয়েছে। এগুলোতে টনকে টন খাদ্য সহায়তা রয়েছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দাবি করে আসছে, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজার প্রায় ২২ লাখ মানুষ তীব্র অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। মার্চে ইসরায়েল ত্রাণ সরবরাহের সব পথ বন্ধ করে দেয় এবং মে মাসে সীমিতভাবে খোলার পরেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে।
ইসরায়েল দাবি করছে, তারা গাজায় পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী ঢুকতে দিয়েছে, কিন্তু জাতিসংঘ তা সঠিকভাবে বিতরণে ব্যর্থ হয়েছে। তবে জাতিসংঘ এই অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও তারা যথাসম্ভব দক্ষতার সঙ্গে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এয়ারড্রপ কার্যক্রম আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে হচ্ছে এবং এতে আটার বস্তা, চিনি ও টিনজাত খাবারের সাতটি বড় চালান রয়েছে। ইতোমধ্যে উত্তর গাজায় ত্রাণ পৌঁছেছে বলেও ফিলিস্তিনি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার সকালে সেনাবাহিনী মানবিক করিডর ও বেসামরিক এলাকাগুলোতে মানবিক বিরতির নিয়ম মানবে। যদিও সামরিক অভিযান বন্ধ না করার কথাও তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।
এদিকে, ইতালি থেকে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রারত একটি ত্রাণবাহী জাহাজকে আটক করেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। জাহাজটির যাত্রীরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মী ছিলেন। এক্সে (Twitter) দেওয়া পোস্টে ইসরায়েল জানায়, জাহাজটিকে তাদের জলসীমায় প্রবেশের আগেই থামানো হয়েছে এবং সেটিকে নিরাপদে ইসরায়েলি উপকূলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ বলেছিল, গাজায় মানবিক বিরতির ফলে ত্রাণ সরবরাহের পরিমাণ বাড়বে। তবে তারা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল এখনো যথেষ্ট বিকল্প রুট প্রদান করছে না, যার ফলে ত্রাণ সরবরাহে জটিলতা দেখা দিচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান সংকটে গত কয়েক সপ্তাহে অপুষ্টিজনিত কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত অপুষ্টিতে মারা গেছেন অন্তত ১২৭ জন, যাদের মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।
শনিবার আইডিএফ আরও জানায়, তারা গাজায় লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধ করার একটি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে, যা প্রতিদিন প্রায় ৯ লাখ মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে প্রবেশ করে হামলা চালায়, যাতে প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫০ জন জিম্মি হয়। এর পর থেকে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে, যাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং পুরো গাজা ভূখণ্ড ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়লেও, বাস্তব পরিস্থিতিতে ক্ষুধা আর সংকটে জর্জরিত গাজাবাসীদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছে কিছু আন্তর্জাতিক শক্তি। এখন দেখার বিষয়, এই উদ্যোগগুলো দীর্ঘমেয়াদে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে।
এসএস//
আরও পড়ুন