ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪

আজ চ্যালেঞ্জারের জন্মদিন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:১২, ১০ আগস্ট ২০২১

ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা প্রয়াত চ্যালেঞ্জারের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৯ সালের আজকের এই দিনে ঢাকার খিলগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন।

জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ও কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘হাবলঙ্গের বাজার’ নাটকের মধ্য দিয়ে টিভি নাটকে আগমন ঘটে চ্যালেঞ্জারের। যদিও অভিনেতা হওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না তার। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ তাকে অভিনেতা বানিয়েছিলেন।

এএফএম তোফাজ্জল হোসেন থেকে নাম পাল্টিয়ে হুমায়ূন আহমেদ তাকে পর্দায় হাজির করেছিলেন চ্যালেঞ্জার নামে। নাম বদলে অভিনয়ে আসার সেই চ্যালেঞ্জ বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছিলেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদের বিশ্বাস ও ভালোবাসার মূল্য দিয়ে গেছেন দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে।

হুমায়ুন আহমেদ নিজে চ্যালেঞ্জারের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। চ্যালেঞ্জারকে দিয়ে অভিনয় করানোর বিষয়ে হুমায়ূন আহমেদ তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘ফাউন্টেন পেন’-এ লিখেছেন, ‘তাকে (চ্যালেঞ্জার) আমি প্রথম যে নাটকে নিলাম তার নাম ‘হাবলঙের বাজার’। নাটকের কাহিনী হচ্ছে গরমের সময় ডাক্তার এজাজের মাথা এলোমেলো হয়। তার বিয়ের দিন মাথা খুব এলোমেলো হলো। ঠিক করা হলো, মাথা কামিয়ে সেখানে এলাজ দেওয়া হবে। শর্ট নেওয়ার আগে আগে দেখা গেল নাপিত আনা হয়নি। কীভাবে নাটক বানানো হয় তা দেখার জন্য চ্যালেঞ্জার তার স্ত্রীকে নিয়ে গেছে শুটিংস্পটে। দুজনই আগ্রহ নিয়ে নাটক বানানো দেখছেন। আমি চ্যালেঞ্জারের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তুমি তো সব কিছুকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নাও। এসো নাপিতের ভূমিকায় অভিনয় করো।’ চ্যালেঞ্জার বলল, ‘স্যার আপনি যা বলবেন তা-ই করব। মাটি খেতে বললে মাটি খাব। নাটক পারব না।’ আমি বললাম, ‘তুমি পারবে। নাও ক্ষুর হাতে নাও।’ চ্যালেঞ্জার ছোট্ট একটা ভূমিকায় অভিনয় করল। আমি সঙ্গে সঙ্গে বুঝলাম, তার ভেতর সহজাত অভিনয়ের আশ্চর্য ক্ষমতা আছে।

তাকে এক ঘণ্টার একটি নাটকে প্রধান চরিত্র করতে বললাম, নাটকের নাম ‘খোয়াবনগর’। সেখানে আমার মেজো মেয়ে শীলা অভিনয় করেছিল। নাটকের শেষে আমি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বাবা! চ্যালেঞ্জার নামের এই নতুন অভিনেতার অভিনয় তোমার কেমন লাগল?’ শীলা বলল, ‘আসাদুজ্জামান নূর চাচাকে আমার এ দেশের সবচেয়ে বড় অভিনেতা বলে মনে হয়। আমি আজ যাঁর সঙ্গে অভিনয় করলাম, তিনি নূর চাচার চেয়ে কোনো অংশে কম না।’ আমি বললাম -‘বাবা! তোমার কী মনে হয় সুপারস্টার হিসেবে তার পরিচয় হবে?’ শীলা বলল, ‘অবশ্যই’। আমার ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’তে পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করে সে নিজেকে সুপারস্টার প্রমাণিত করলো।’

আট বছরের ক্যারিয়ারে তিনি আড়াই শতাধিক নাটক ও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে হুমায়ুন আহমেদের ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘শ্যামল ছায়া’, আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’, তৌকির আহমেদের ‘দারুচিনি দ্বীপ’, শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘লাল সবুজ’ উল্লেখযোগ্য।

হুমায়ূন আহমেদের ‘হাবলঙ্গের বাজার’ দিয়ে শুরু এরপর অভিনয় করা চ্যালেঞ্জার এই লেখক ও নির্মাতার ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’, ‘চন্দ্রকারিগর’, ‘কালা কইতর’, ‘বৃক্ষ মানব’, ‘যমুনার জল দেখতে কালো’, ‘লীলাবতী’, ‘জুতা বাবা’, ‘খোয়াব নগর’, ‘চোর’, ‘পিচাশ মকবুল’সহ অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। এর বাইরেও অনেক নির্মাতার নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।

তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। সুখের দাম্পত্য জীবনে তিনি ছিলেন এক পুত্র ও এক কন্যার জনক।

২০১০ সালের ১২ অক্টোবর মস্তিষ্কের ক্যানসারে মারা যান তিনি। মাত্র ৫১ বছর বয়সেই নিভে গেল অসামান্য এক অভিনেতার জীবন প্রদীপ। মৃত্যুর পর আজও সমান জনপ্রিয় এই অভিনেতা। এখনো ইউটিউবে তার অভিনীত নাটক মানুষকে পুলকিত করে, আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে। 
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি