ঢাকা, বুধবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৫

অসহায় বাবার আর্তনাদ

আমার ছেলেকে বাঁচান!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৩১, ১১ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২০:০৯, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

প্লে-থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সেরা ছাত্র রেহমান সুবহান অয়ন। স্কুলে উপস্থিতি, গান গাওয়া, ছবি আঁকাসহ অন্য বিষয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে।  অনেক গুণের অধিকারী ৭ বছর বয়সী অয়নকে স্কুলের সব ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা এক নামেই চেনে।

অয়ন সিলেট নগরীর আম্বরখানা এলাকার ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি মো. আলম ও গৃহিনী রুমানার ছেলে। আম্বরখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র অয়ন ক্লাসের সেরা ছাত্রও। কিডনি জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৮ দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) ২০৮ নম্বর ওয়াডের ৭ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে অয়ন। ডাক্তার অধ্যাপক লায়লা ইয়াসমিনের অধীনে চিকিৎসা চলছিলো অয়নের।

চিকিৎসক লায়লা ইয়াসমিন জানান, অয়নের কিডনির চারিপাশে একাধিক পাথর হয়েছে। অয়নের চিকিৎসার বিষয়ে মঙ্গলবার আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সভা বসে। অয়নের চিকিৎসা দেশে করার সম্ভব নয় বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই অয়নকে ভারতের তামিলনাড়ুর বেলোর ক্রিস্টাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার পরিবারকে পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

ছেলের চিকিৎসার অয়নের বাবা আলম ইতোমধ্যে সাড়ে ৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন। একের পর এক হাসপাতালে ভর্তি, ডাক্তার বদল ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেই খরচ হয়েছে এসব টাকা। যে ডাক্তারের কাছে ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছেন সেখানেই অসংখ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হচ্ছে এরপর রেফার্ড করে দেওয়া হচ্ছে অন্য হাসপাতালে। সেখানেও একইভাবে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা। অসংখ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতেই নিঃস্ব হয়ে গেছে অয়নের বাবা। এখন ভারতে নিয়ে যাওয়ার কোন অর্থই তার নেই।

সন্তানের অসুস্থতার বর্ণনা দিয়ে মো. আলম বলেন, “অয়নের আড়াই বছর বয়সে প্রসাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া শুরু হয়। ওই সময় তাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে ৪ দিন ভর্তি থাকার পর অয়নকে নেওয়া হয় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে নেওয়ার পর ডাক্তার জানালো অয়নের কিডনিতে পাথর হয়েছে। এ কারণে প্রসাব করার সময় রক্ত বের হয়েছে।

এরপর ঢাকার ল্যাব এইডে ডাক্তার নজরুল ইসলামের কাছে অয়নকে নেওয়া হলে তিনিও একই কথা বলেন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের কিডনি বিভাগে দেখানো হয় অয়নকে। সেখানেও নতুন করে সব কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তার জানান, অয়নের দুটি কিডনির চারপাশে প্রতিনিয়ত নতুন করে পাথর জন্মাচ্ছে। এসব পাথর প্রসাবের রাস্তায় চলে আসায় চাপ দিয়ে প্রসাব করার কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

অয়নের বাবা জানান, রক্তরক্ষণের পর ওষুধ প্রয়োগ করলে কিছুদিন সুস্থ থাকছে। এরপর আবারও একই সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

গত রোববার অয়নকে নিয়ে বোর্ড মিটিং করেছে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা। এরপর আবারও ৬টি পরীক্ষা নিরীক্ষা দেয় যার তিনটি করতে প্রায় ১২ হাজার টাকা লাগবে। বাকি তিনটি বাংলাদেশে হয় না। সেগুলো হয় ভারতে। মঙ্গলবার চিকিৎসকরা তাকে পরামর্শ দিয়েছেন অয়নকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

অথচ মেডিক্যাল পরীক্ষাগুলো করার টাকাও নেই তার কাছে। এছাড়া প্রতিমাসে তাকে বি নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত দিতে হচ্ছে। বি নেগেটিভ  গ্রুপের রক্ত অপ্রতুল হওয়ায় খুবেই সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ডাক্তার বলেছেন তাকে সুস্থ করতে চাইলে দুটি কিডনিই বদলাতে হবে।

অয়নের বাবা আলম বলেন, “কিন্তু কীভাবে সেটি সম্ভব? তিনি বলেন, দীর্ঘ এই চিকিৎসাকালীন সময়ে ছেলের কোনো চিকিৎসায় হয়নি। হয়েছে শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তাতেই আমার সাড়ে ৫ লাখ টাকা শেষ হয়ে গেছে। সময় ক্ষেপণ না করে আগেই ছেলেটাকে এই টাকা দিয়ে ভারতে নিয়ে গেলে হয়তো সুস্থ হয়ে যেত!

আলম জানান, “আমার বিশ্বাস আমার ছেলের চিকিৎসা সরকারের নির্দেশে হলে ডাক্তাররা আরো গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করতো। এতদিন হয়তো সুস্থ হয়ে যেত ছেলেটি। সরকারের কাছে আমি অনুরোধ করে বলতে চাই, আমি আমার ছেলের চিকিৎসা আর করাতে পারছি না। দয়া করে আমার ছেলেকে বাঁচান। “

অয়নের বিষয়ে আম্বরখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা দিলরুবা বলেন, অয়ন স্কুলের সব শিক্ষকের প্রিয় ছাত্র। অসুস্থতার কারণে সে অনেক দিন থেকে স্কুলে আসতে পারছে না। এ কারণে সে নতুন বইও নিতে পারেনি। সে খুবই মেধাবী। তার বইগুলো আমরা আলাদা করে রেখেছি। আমরা চাই সরকারিভাবে অয়নের চিকিৎসা হোক। সে আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসুক।

অয়নকে সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন তার বাবা মো. আলমের ০১৯১৫-৪৮৫৬৪৭ নম্বরে। সাহায্য পাঠাতে পারেন মো. আলম, অগ্রণী ব্যাংকের হিসাব নম্বর : ০৫১৪০৭, আম্বরখানা শাখা সিলেট।

 

আর/টিকে


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি