ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

আসাম ইস্যুতে সীমান্তে সতর্ক বাংলাদেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:১১, ৩১ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ২২:৪১, ৩১ আগস্ট ২০১৯

আসামের নাগরিক তালিকা-এনআরসি থেকে ১৯ লাখ অধিবাসীকে বাদ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানানো হলেও সীমান্তে জারি করা হয়েছে সতর্কতা।

বাংলাদেশ অবশ্য বরাবারই জানিয়ে এসেছে, আসামের নাগরিক পঞ্জি একেবারেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এ নিয়ে বাংলাদেশের কোনও মন্তব্য নেই। কিন্তু ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির পক্ষ থেকে বারবার তালিকায় বাদ পড়াদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ‘অবৈধ অভিবাসী’ বলে আখ্যা দেয়ায় এ নিয়ে সীমান্তে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা বাড়ছে।

এ নিয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির অবস্থানের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো উচিত বাংলাদেশের।

এদিকে, আজ শনিবার প্রকাশিত আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকায় বাদ পড়া অধিবাসীর সংখ্যা ৪১ লাখ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৬ হাজারে। তবে বাদ পড়ারাও ১২০ দিনের মধ্যে আপিলের সুযোগ পাবেন। 

অন্যদিকে, এবারের তালিকা থেকে বাদ পড়াদের ধর্মীয় পরিচয় বিশ্লেষণ এখনও স্পষ্ট না হলেও আগের তালিকা থেকে স্পষ্ট যে, আসামের মুসলমানরাই এর প্রধান টর্গেট। এই ইস্যুতে আসামে বিজেপি হাতে নিয়েছে ডিটেক্ট, ডিলিট ও ডিপোর্ট, যা থ্রি-ডি ফর্মুলা নামে পরিচিত। কিন্তু এর প্রভাব কি বাংলাদেশে পড়বে? পড়লে বাংলাদেশের কী করা উচিত?

আসামের এই নাগরিক তালিকাকে বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক চাল বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শান্তনূ মজুমদার। নাগরিকত্বের এই ইস্যুটিকে ঝুলিয়ে রেখে বিজেপি আসামে তার অবস্থান শক্ত করতে চায়।

পাশাপাশি আসামের প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও এ নিয়ে ইস্যু তৈরি করে বিজেপি ফায়দা লুটতে চায় বলে মনে করেন তিনি। শান্তনূ মজুমদারের মতে, ‘‘বিজেপি সরকার এটাকে দীর্ঘকাল ঝুলিয়ে রেখে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করবে। কারণ যাদের নাগরিক তালিকার বাইরে রাখা হচ্ছে, তারা যুগ যুগ ধরে সেখানে আছেন। যে তালিকা করা হয়েছে, ওই তালিকার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন আছে।”

তবে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় এত বড় ঘটনা ঘটছে, তার ওপর আমাদের তো নজর রাখতেই হবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আসামে মুসলমানদের টার্গেট করা হয়েছে। সেটাও দেখার বিষয় আছে৷”

বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম তৌহিদ হোসেনও মনে করেন, নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি হবে। তিনি বলেন, ‘‘ট্রাইবুন্যালে আপিল করা যাবে। হাইকোর্টে যাওয়া যাবে। তবে কতজনের সেটা করার আর্থিক সক্ষমতা আছে তা দেখার বিষয়। ভারত বলছে, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশে সরকারও এটাতে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবেই দেখছে। যতদিন এটা বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি না করছে, ততদিন এটা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই৷”

তবে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির বক্তব্য নিয়ে উদ্বেগের কারণ আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি ভারতের ক্ষমতায়। দলটির ক্ষমতাবান নেতা এবং এখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলেছেন তা উদ্বেগের বিষয়। আমাদের আগেই উচিত ছিল বিজেপির বক্তব্যের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া, প্রতিবাদ জানানো। এখনও সময় আছে। সরকার নয়, দল হিসেবে বিজেপি'র বক্তব্যের প্রতিবাদ করা দরকার। কারণ দলটি ভারতের ক্ষমতায় আছে। অমিত শাহ যখন বলেন- এরা বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারী। উইপোকার মত তাদের বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে দেয়া হবে। বন্ধু রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন দলের সভাপতির মুখ থেকে যখন এই কথা আসে তখন বাংলাদেশের একদম চুপ থাকা আমি সমীচীন মনে করি না।”

এদিকে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা, বিশেষ করে সিলেট সীমান্তে বিজেবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। আসামে যাদের নাগরিক তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে, তাদের যাতে ভারত কোনোভাবে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

বিজিবি'র ১৯ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল সাঈদ হোসেন বলেন, ‘‘তারা তিন ধাপে নাম প্রকাশ করলো। প্রথম ধাপে যখন তারা নাম প্রকাশ করে তখন থেকেই বিজিবি সতর্ক অবস্থায় আছে। শুধু বিজিবি নয়, সীমান্তের সাধারণ মানুষ, জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসন সবাইকে নিয়েই বিজিবি কাজ করছে। আমরা যে কোনও ধরনের পুশ-ইন প্রতিহত করতে প্রস্তুত আছি।”

তিনি বলেন, ‘‘আমরা গত প্রায় দেড় বছর ধরে সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষকে সচেতন করেছি। ভারত যাদের অবৈধ বলছে তাদের যদি পুশ-ইনের চেষ্টা করে, তাহলে আমরা সবাই মিলে যাতে প্রতিহত করতে পারি। এ ধরনের কোনও চেষ্টা বিজিবির নজরে না পড়লেও যদি সাধারণ মানুষের নজরে পড়ে, তাহলে সঙ্গে সংঙ্গে আমাদের জানানোর জন্য সবাইকে সতর্ক করে দেয়া আছে।” সূত্র-ডয়চে ভেলে।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি