ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

কী আছে কাশ্মীরের নেপথ্যে?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩২, ১৬ আগস্ট ২০১৯

দেশ ভাগের পর ১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তান তিনবার যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে দু’বারই কাশ্মীর নিয়ে। এ ছাড়া দেশ দুটির মধ্যে বহুবার কাশ্মীর নিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু তেমন কোনো আশার আলো দেখা যায়নি। 

চলতি মাসের ৫ আগস্ট ভারতের সংবিধানে দেয়া কাশ্মীরিদের বিশেষ মর্যাদা উঠিয়ে দিলে নতুন করে পারমাণবিক শক্তিধর এ রাষ্ট্র দুইয়ের মধ্যে ফের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। কাশ্মীরকে ঘিরে নতুন করে যাতে যুদ্ধ না বাঁধে, সে জন্য উভয়কে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ। গতকালও, চলমান এ সংকট নিয়ে উভয় বাহিনীর ৮ সেনা নিহত হয়েছে। এমতাবস্থায়, জরুরি বৈঠক ডেকেছে  জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। 
ফলে সবার মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, দীর্ঘদিনেও কেন কাশ্মীর নিয়ে সমস্যার সমাধান হচ্ছেনা। অথবা কী আছে কাশ্মীরের নেপথ্যে? 
বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মূলত কাশ্মীর সংকটের বীজ বহু পুরনো। ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তানের স্বাধীনতার লগ্ন থেকেই এ বীজ লুক্কায়িত।
‘ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স এ্যাক্ট’ নামে ব্রিটিশ ভারত বিভক্তির যে পরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল, কাশ্মীর তার ইচ্ছে অনুযায়ী ভারত অথবা পাকিস্তান যে কোনো রাষ্ট্রেই যোগ দিতে পারবে। কাশ্মীরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং চাইছিলেন স্বাধীন থাকতে অথবা ভারতের সঙ্গে যোগ দিতে। অন্যদিকে পশ্চিম জম্মু এবং গিলগিট-বালতিস্তানের মুসলিমরা চেয়েছিল পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিতে।

১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে হরি সিং ভারতে যোগ দেবার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন এবং ভারতের সামরিক সহায়তা পান। পরিণামে ১৯৪৭ সালেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ যা চলেছিল প্রায় দু’বছর ধরে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ১৯৪৮ সালে ভারত কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে। জাতিসংঘের ৪৭ নম্বর প্রস্তাবে কাশ্মীরে গণভোট, পাকিস্তানের সেনা প্রত্যাহার এবং ভারতের সামরিক উপস্থিতি ন্যূনতম পর্যায়ে কমিয়ে আনতে আহ্বান জানানো হয়। কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি বলবৎ হয় ১৯৪৮ সালে, তবে পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই কাশ্মীর কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়।

অন্যদিকে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে চীন কাশ্মীরের আকসাই-চিন অংশটির নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে, আর তার পরের বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন থেকে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত ও চীন এই তিন দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে। দ্বিতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয় ১৯৬৫ সালে, এরপর আরেকটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ১৯৭২-এর সিমলা চুক্তির মধ্য দিয়ে বর্তমানের ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ বা নিয়ন্ত্রণ রেখা চূড়ান্ত রূপ পায়।

গোটা কাশ্মীর তিন দেশ শাসন করলেও ভারত শাসিত কাশ্মীরে সংঘাতের পরিস্থিতি বিরাজ করে থাকে। এর কারণ হলো দিন যত গেছে কাশ্মীরের প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আরও কঠোর হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যাধিক্য, স্থানীয়দের ওপর নির্যাতনের অভিযোগসহ কাশ্মীরিদের স্বায়ত্তশাসন বারবার খর্ব হয়েছে। এতে সেখানে জঙ্গি সংগঠনগুলো বেড়ে ওঠার পরিবেশ পেয়েছে। 
আর এ সুযোগ নিয়েছে পাকিস্তান। যদিও পাকিস্তান তা মুখে অস্বীকার করে থাকে কিন্তু জঙ্গি নেতাদের ‘যত’ বন্ধে তাদের তেমন ভূমিকা দেখা যায় না। এসব কারণে কিছু দিন পরপর জঙ্গি হামলা হয় আর এর দায় পড়ে পাকিস্তানের ওপর। পাকিস্তান মুখে আলোচনার কথা বললে ভারত বলে আগে জঙ্গি দমন কর। এভাবে বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে কিন্তু কাশ্মীরে শান্তির নিশানা দেখা যাচ্ছে না। 
এতে করে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বি রাষ্ট্রের কাঁদা ছুঁড়াছুড়িতে দশকের পর দশক ধরে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে কাশ্মীরিরা। দেশভাগের পর ৭২ বছরে প্রায় ৯৫ হাজার কাশ্মীরিকে প্রাণ দিয়েছে নিজেদের স্বাধীনতার জন্য। 

সে সময় কাশ্মীর নিয়ে স্থায়ী কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত না হওয়ায় ভারতের সংবিধানে জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হয়। সংবিধানের ৩৫ (ক) ধারা ও ৩৭০ অনুচ্ছেদে এ অঞ্চলের মানুষকে পররাষ্ট্র, যোগাযোগ ও প্রতিরক্ষা ছাড়া বাকি সবক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। তাদের আলাদা পতাকা, প্রধানমন্ত্রী ও সংবিধান ছিল।

এতোদিন ‘৩৫-এ’ অনুযায়ী কাশ্মীরের বাসিন্দা নন এমন ভারতীয়দের সেখানে সম্পদের মালিক হওয়া ও চাকরি পাওয়ায় বাধা ছিল। এখন চাইলেই যে কোনো ভারতীয় নাগরিক সেখান ভূমিসহ অন্যান্য সম্পদ কিনতে সক্ষম হবে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত কাশ্মীরিদের বিশেষ সুবিধা অকার্যকর করার মধ্য দিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক চরিত্রে পরিবর্তন আনতে চাইছে বিজেপি। 

আর তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে ভারতের ৭০ তম স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির ভাষ্যে। যেখানে তিনি কাশ্মীরকে কেন্দ্রীয় শাসনে আনতে পারাকে ঐতিহাসিক বিজয় উল্লেখ করে বলেন, ৭০ বছরে যা করা সম্ভব হয়নি, মাত্র ৭০ দিনে তা করে দেখিয়েছি। ফলে, এটা স্পষ্ট যে, ভারত চাইছে কাশ্মীরকে নিজের করায়াত্বে আনতে। এতে যেমন ভারতের শক্তির একটা প্রমাণ মিলবে, তেমনি পাকিস্তান ও চীনের জন্য বড় হুমকির পাশাপাশি দেশটির অর্থনৈতিক ও পর্যটন ও হিন্দু জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেয়া সহজ হবে।


আই/ 
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি