ঢাকা, সোমবার   ২০ মে ২০২৪

ক্ষুধামুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:১৫, ৫ নভেম্বর ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে একটি দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আজ রোববার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদ, বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় সরকারসহ আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করেছি। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অতন্দ্র প্রহরী স্বাধীন এবং শক্তিশালী গণমাধ্যম। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছে, নিশ্চিত করা হয়েছে তাদের (গণমাধ্যম) অবাধ স্বাধীনতা। মানুষের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ দায়িত্ব পালন করছেন। নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য নিরসনে আমাদের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ভিত শক্তিশালী করার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে আমরা রূপকল্প-২০২১ প্রণয়ন করি। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে আমরা আমাদের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, ’সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ -এই নীতির ভিত্তিতে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হয়। বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশসমূহের সঙ্গে আমরা সব সময়ই সুসম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এর ফলে আমরা ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি এবং স্থল সীমানা চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করতে পেরেছি। একইভাবে মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর অমানবিক নির্যাতন এবং তাদের জোরপূর্বক বিতাড়িত করে দেয়া শুধু এ অঞ্চলে নয়, এর বাইরেও অস্থিরতা তৈরি করছে। সাম্প্রতিককালে মিয়ানমার সরকারের এই নির্যাতনমূলক আচারণের ফলে সেখান থেকে ৬ লাখ ২২ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। ১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে আরও প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুধা-দারিদ্র্য নিরসনের সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ মোকাবেলার নতুন সংগ্রাম। কিছু মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের ফলে নিরীহ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ আজ আর কোনো নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে।

জলবায়ু বিষয়ে তিনি বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের ফলে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এ বছর অতিবৃষ্টিসহ কয়েকবার বন্যায় আমাদের বিশাল জনপদ ভেসে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার জন্য যেসব সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিজি বাস্তবায়নের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আমরা এসডিজি বাস্তবায়ন করছি। আমাদের চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এসডিজির বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছি। আমাদের প্রত্যাশা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ ও ২০৪১ সালে ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ১৯৭৩ সালে সিপিএর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সিপিএর নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। বিশ্বব্যাপী কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংসদ সদস্যগণের প্রদত্ত এই স্বীকৃতি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চা ও মূল্যবোধের স্বীকৃতির একটি প্রামাণিক দলিল বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন, ডাক দেন অসহযোগ আন্দোলনের। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইটের মাধ্যমে গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ৯ মাসের রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

 

/ এমআর / এআর


Ekushey Television Ltd.





© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি