ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে কাজ করবে পরিকল্পনা কমিশন

প্রকাশিত : ১৩:৪৪, ২ এপ্রিল ২০১৯

ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশন। ইতোমধ্যে ‘সাপোর্ট টু দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’নামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে সংশ্লিষ্ট সূত্রে তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে, বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে নেদারল্যান্ডস অনুদান হিসেবে দেবে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও অন্যান্য সংস্থার মানবসম্পদের দক্ষতার উন্নয়ন করা হবে।

এছাড়া পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা, ডেল্টা বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদান ও প্রয়োজনের নিরিখে নতুন জ্ঞান ও কৌশল অবলম্বনে এ পরিকল্পনাটি পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নেই। কিন্তু গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের সম্মতি নিয়ে এটি প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভা।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ এতে সভাপতিত্ব করেন। বিভাগটির প্রধান প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী জানান, এ প্রকল্পটি সরাসরি ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হবে না, তবে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য যেসব প্রকল্প নেয়া হবে সেগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা হবে। তাছাড়া ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে জিইডি।

বদ্বীপ পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব পালনকারী পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র) সচিব ড. শামসুল আলম বলেন, জলবায়ু পরির্তনের প্রভাব মোকাবেলায় এ ডেল্টা প্ল্যান বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তাই এটি বাস্তবায়ন পর্যায়েও বেশ কিছু কাজ রয়েছে।

যেমন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডেল্টা উইং প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা, ডেল্টা তহবিল গঠনে সহায়তা, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনসহ ডেল্টা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগ বা সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানা কার্যক্রম করা হবে। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরির্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ডেল্টা প্ল্যানে নদী ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং ভূমি উদ্ধারের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের ফলে একই কাঠামোর আওতায় সার্বিক সমন্বিত আকারে সব খাতের সুনির্দিষ্ট পলিসি ও প্ল্যান এবং স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনার প্রতিফলন ঘটবে। এতে সীমিত সম্পদের মধ্যে কার্যকরভাবে জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবেলা সম্ভব হবে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার আকাক্সক্ষা পোষণ করছে। ভৌগোলিক অবস্থান হিসেবে বাংলাদেশ তিনটি বৃহৎ নদী গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার অববাহিকায় অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তর বদ্বীপগুলোর অন্যতম। বদ্বীপের গঠন, নদীর গতিপথ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা, বন্যা, নদীভাঙন, খরা, ভূমিকম্প এবং ঘূর্ণিঝড় এ দেশের নিয়মিত চিত্র। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনকে বিবেচনায় রেখে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে সুসংহত ও টেকসই করার লক্ষ্যে বদ্বীপ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তা, সমন্বিত পানি ও নদী ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু অভিযোজন বিষয়ে একটি সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার জন্য নেদারল্যান্ডসের সহায়তায় শত বছরের এ বদ্বীপ পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এ মেগা পরিকল্পনার সামগ্রিক তদারকি, বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ এবং হালনাগাদের দায়িত্ব পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। এসব দায়িত্ব সুচারূভাবে পালনের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, জুনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) অনুমোদন পাওয়া বদ্বীপ পরিকল্পনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বিবেচনায় ৬টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া এসব হটস্পটে ৩৩ ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে তুলে ধরা হয়েছে।

পরিকল্পনায়, হটস্পটভিত্তিক যেসব চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হল- ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, নদী ও উপকূলীয় এলাকার ভাঙন, স্বাদু পানি প্রাপ্যতা, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং পরিবেশের অবনমন, স্বাদু পানির প্রাপ্যতা, বন্যা ও জলাবদ্ধতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পরিবেশের অবনমন ইত্যাদি।

টিআর/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি