ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

থানায় দু’দিন আটক রাখার পর স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২৩:৩৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন উপসহকারী কর্মকর্তাকে দুই দিন থানায় আটকে রাখে পুলিশ। পরে আপোষ-রফা না হওয়ায় মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার শাজাহানপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে আব্দুল হানান্ন নামের ওই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা তার কর্মস্থল সারিয়াকান্দি উপজেলা থেকে শাজাহানপুর উপজেলার নয়মাইল বাজার এলাকায় আসেন। সেখানে মহাসড়ক সংলগ্ন আখের রসের দোকান থেকে একটি কাঁচের গ্লাসে রস পান করছিলেন।

ঠিক সেই সময় একটি মাইক্রেবাস যোগে ডা. আব্দুর রব ওরফে রায়হানসহ কয়েকজন এসে চড়াও হয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের ওপর। আব্দুল হান্নানকে তারা টেনেহেঁচড়ে মাইক্রেবাসে তোলার চেষ্টা করে।

এ সময় আব্দুল হান্নানের হাতে থাকা কাঁচের গ্লাসটি দ্বারা ডা. আব্দুর রবের মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়। স্থানীয়রা ছুটে আসলে আব্দুর রব ওরফে রায়হান আহতাবস্থায় মাইক্রোবাস যোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আখের রস বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল হান্নান রস পান করছিলেন। এসময় একটি মাইক্রোবাস থেকে দু'জন নেমে তাকে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। এসময় ডা. আব্দুর রব রায়হান নামের ব্যক্তি মাটিতে পড়ে যান। তখন তার মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় কমিনিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রউফ বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান আর ডা. আব্দুর রব রায়হান আপন চাচা-ভাতিজা। ঘটনার দিন শতশত মানুষের সামনে চাচা আব্দুল হান্নানকে টেনেহেঁচড়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে ভাতিজা আব্দুর রব। সে সময় আব্দুর রব রায়হান নিজেই সড়কে পড়ে যান। আর তখনি তার মাথায় আঘাত লাগে। এখানে আব্দুল হান্নানের কোন দোষ নেই। বরং অপরাধী ডা. আব্দুর রব রায়হান।

এদিকে, মামলার বাদি আহত ডা. আব্দুর রবের পিতা প্রবাসী আব্দুল মান্নানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগে করা হলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে মাইক্রোবাসে আমি নিজে ছিলাম। মাইক্রোবাস যোগে একটি বিয়ের দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফেরার সময় দেখা হয় ছোট ভাই হান্নানের সঙ্গে। পারিবারিক জমি সংক্রান্ত কথা বলার জন্য ওখানে গাড়ি দাঁড় করেছিলাম। আমার ছেলে আর ছেলের বউ এবং ড্রাইভার ছিল গাড়িতে। বহিরাগত কেউ ছিলনা। আমার ছেলের সঙ্গে কথা চলছিল। এক পর্যায়ে হান্নান আমার ছেলেকে আঘাত করলে তার মাথা ফেটে যায়। চিকিৎসার জন্য দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই।

এ ঘটনার পর সোমবার রাতেই উল্টো পুলিশ আব্দুল হান্নানকে তার শেরপুরের বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে আসেন এবং হাজতখানায় আটকে রাখেন।

এদিকে, সোমবার দিবাগত রাত থেকে বুধবার বেলা ১টা পর্যন্ত অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার অধিক সময় তাকে শাজাহানপুর থানায় আটকে রাখেন পুলিশ। পরে দুদিনের মাথায় বুধবার থানা পুলিশ মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানকে।

আব্দুল হান্নানের পরিবারের অভিযোগ, অপরাধ করে উল্টো অপরাধীরা পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে পরে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত মামলা ছাড়া ২৪ ঘণ্টার অধিক সময় কাউকে থানায় আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করে পুলিশ অন্যায় করেছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন আব্দুল হান্নানের পরিবার।

প্রতিপক্ষ আব্দুল মান্নানের দায়ের করা এজাহারের লেখা বিশ্লষণ করে দেখা গেছে, মামালটি রেকর্ডভুক্ত হয়েছে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে। কিন্তু আব্দুল হান্নানকে আটক করেছেন মামলা হওয়ার আগে সোমবার রাতে। অর্থাৎ মামলা ছড়াই আটক করা হয় আব্দুল হান্নানকে। এরপরও ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও থানা হাজতে আটক থাকেন আব্দুল হান্নান। পরদিন বুধবার দুপুর ১টার পর জেলহাজতে পাঠানো হয় তাকে।

যদিও পুলিশী আইনে বলা হয়েছে- ২৪ ঘণ্টার আগেই কোন আটক ব্যক্তিতে আদালতে সোপর্দ করা। এই আইন সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘন করেছেন শাজাহানপুর থানা পুলিশ।

এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় থানা হাজতে রাখা এবং মামলা ছাড়া আব্দুল হান্নানকে আটক করার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, মামলার বাদি আর আসামি আপন ভাই। বিষয়টি পরে দেখা যাবে।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি