ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

দল ছেড়ে রাজনৈতিক ইতি টানছেন সোনিয়া গান্ধী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৩২, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

১৯ বছর পর ছেলের হাতে দলের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে সন্ন্যাসে যাচ্ছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। আগামীকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দলের সব ধরনের পদ ছাড়ছেন গান্ধী পরিবারের বধূ সোনিয়া গান্ধী। আর এরই মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি ইতি টানতে যাচ্ছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজের একটি প্রতিবেদনে এমনটি জানানো হয়েছে।

সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে সোনিয়া বলেন, “এবার আমি অবসর নেব। কয়েকবছর ধরে দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রাহুলই।” উল্লেখ্য, আগামীকাল ভারতের প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক দলের প্রধানের দায়িত্ব নিচ্ছেন রাহুল গান্ধী। গত সোমবার দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। পদ ছাড়ার একদিন আগে আজ শুক্রবার রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা এ নেত্রী।

সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে কংগ্রেস নেতা বীরাপ্পা মইলি বলেন, ২০০৪ সালে যেভাবে সোনিয়া গান্ধী জোট গঠনের প্রক্রিয়া সামলিয়েছিলেন এবং ২০০৯ সালে ইউপিএ (ইউনাইটেড পিপলস অ্যালায়েন্স) সরকার গঠনে যে ভূমিকা নিয়েছিলেন এর জন্য তিনি আজীবন প্রশংসিত হবেন।

১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের খারাপ সময় দলের হাল ধরেন সোনিয়া গান্ধী। তারই নেতৃত্বে ২০০৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়। তখনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ আসে সোনিয়া গান্ধীর । কিন্তু বিজেপিসহ একাধিক দল অভিযোগ করে, তিনি বিদেশি, তাই তার ভারতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোন অধিকার নেই।

সোনিয়া গান্ধী নিজে প্রধানমন্ত্রী না হয়ে তখন মনমোহন সিংহকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসান।

সোনিয়া গান্ধী ভারতের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। ভারতীয় বংশোদ্ভূত না হয়েও ভারতের রাজনীতিতে তার সফল পদচারণা রেখে গেছেন। শুধু তাই নয় নারী শক্তির প্রতীক হিসেবেও তার খ্যাতি সমাদৃত। ১৯৪৬ সালের ৯ ডিসেম্বর সোনিয়া গান্ধী ইতালিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর স্ত্রী।

১৯৯১ সালে স্বামী হত্যার পর কংগ্রেসের নেতাদের বারণ সত্ত্বেও দীর্ঘদিনের জন্য রাজনীতি থেকে বিদায় নেন তুমুল জনপ্রিয় ওই নেত্রী। পরে ১৯৯৭ সালে আবারও রাজনীতিতে যোগদান করেন তিনি। বছর না ঘুরতেই কংগ্রেসের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হন তিনি। বনে যান কংগ্রেস সভাপতি। ২০১০ সালে নির্বাচনে বিজয় লাভের পর আবারও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ আসে সোনিয়ার। তবে সমালোচকেরা তাকে বিদেশি বলে বিতর্কের জন্ম দেন। পরে নিজে প্রধানমন্ত্রী না হয়ে আবারও মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেন তিনি। তবে ক্ষমতার কেন্দ্রে কার্যত থাকেন নিজে।

তিনি কেবল দেশেই ক্ষমতাধর হয়ে উঠেননি, পাশাপাশি হয়ে উঠেছিলেন একজন আন্তর্জাতিক নেত্রীও।  ২০১০ সালে বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস সোনিয়া গান্ধীকে বিশ্বের ৯তম শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেন।

ইতালির ভেনেসে থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে একটি ঐতিহাসিকভাবে সিমব্রিয়ানভাষী গ্রাম লুসেনিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন এ নেত্রী। ১৯৬৪  সালে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যয়ন করতে গিয়েছিলাম। ১৯৬৫ সালে গ্রিক রেস্তোরাঁতে (কেমব্রিজের  রেস্টুরেন্ট) রাজিব গান্ধীর সঙ্গে দেখা হয় । দেখা থেকে প্রেম । এরপর গান্ধী পরিবারের নবাব রাজীব গান্ধীকে বিয়ে করেন তিনি।

ওই দম্পত্তির দুই সন্তানের একজন রাহুল গান্ধী (জন্মসাল ১৯৭০) এবং অপরজন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী (জন্মসাল ১৯৭২)। প্রভাবশালী নেহেরু পরিবারে থাকা সত্ত্বেও সোনিয়া ও রাজিব রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। সোনিয়া গান্ধী নিজে যেমন রাজনীতি পছন্দ করতেন না, তেমনি তার স্বামীকেও রাজনীতিতে জড়াতে দিতে চাইছিলেন না। তবে  ১৯৮০ সালের ২৩ জুন ছোট ভাই সঞ্জয় গান্ধী এক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলে ১৯৮২ সালে রাজনীতিতে আসেন রাজীব গান্ধী।

স্বামী-স্ত্রীর সুখী দাম্পত্য জীবনের পাশাপাশি শাশুড়ির মৃত্যু দিয়ে রাজনীতিতে আসেন সোনিয়া গান্ধী । এছাড়া স্বামী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই রাজনীতি তাকে টানতে থাকে। তবে স্বামী আর শাশুড়ির হত্যাকাণ্ড মানতে পারেননি এ নেত্রী। একপ্রকার রাগ করেই রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান তিনি। ১৯৯১ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর কংগ্রেস নেতারা তাকে প্রধানমন্ত্রী পদ গ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানালেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। পরে পিও ভি নরসিংহ রাও নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তবে গান্ধী পরিবার ছাড়া কংগ্রেস যে অসহায় সে চিত্র উঠে আসে পরবর্তী বছরগুলোতে। এতে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস সুচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। একইসঙ্গে কংগ্রেসে বেজে উঠে ভাঙ্গনের সুর। দলের অন্যতম কান্ডারী রাজেশ পাইলট, নারায়ণ দত্ত তিওয়ারী, অর্জুন সিং, মমতা ব্যানার্জী, জি কে মোওরার, পি চিদম্বরম এবং জয়ন্তী নটরাজনের মতো অনেক ঊর্ধ্বতন নেতা পিও ভি নরসিংহ রাও এর বিরোধীতায় মাঠে নামে। এমন সময়ে কংগ্রেস যখন মৃতপ্রায় তখনই ১৯৯৭ সালে কলকাতায় পূর্ণাঙ্গ সেসনে কংগ্রেসের সদস্যপদ নেন সোনিয়া গান্ধী। পরে ১৯৯৮ সালে দলের কাণ্ডারি হয়ে উঠেন সোনিয়া গান্ধী।

সোনিয়া গান্ধী তার নিজ দল এবং বিরোধীদল উভয়ের কাছেই একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। শুধু তাই নয়, সব বাধাকে তুচ্ছ করে এগিয়ে যাবার যে উদ্যম তিনি দেখিয়েছেন কংগ্রেস সেই পথে আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করে ভারতীয়রা। তবে কংগ্রেসের অনেক নেতাই বলছে, সোনিয়া গান্ধী দল থেকে অবসর গ্রহণ করলেও দলের দুর্দিনে তিনি পরামর্শ দিয়ে যাবেন।

 

এমজে/এসএইচ

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি