ঢাকা, রবিবার   ২৬ অক্টোবর ২০২৫

দুর্যোগ ও জরুরি সেবায় মানসিক স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্তির তাগিদ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:০৩, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বাংলাদেশ যেন যেকোন দুর্যোগ ও সংকটময় পরিস্থিতি থেকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে, ভুক্তভোগীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী মানসিক ও সামাজিক প্রভাব কমাতে পারে, সেজন্য জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সহায়তাকে একীভূত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত "সংকট থেকে সেবা: মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সংলাপ ও পদক্ষেপ" শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে আলোচনায় তারা এই পরামর্শ দেন। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২৫ উপলক্ষে সাজেদা ফাউন্ডেশন এই আয়োজন করে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করলেও ১৭ কোটির অধিক জনসংখ্যার এই দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা তেমন গুরুত্ব পায় না, যেখানে ২ কোটি ৮০ লাখের অধিক মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।

আলোচনায় একটি উপস্থাপনাতে উল্লেখ করা হয়, দেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় একটি বড় ঘাটতি রয়েছে কারণ দেশে মাত্র ১ হাজার ৫২৫ জন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মী রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৬০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, ৫৬৫ জন মনোবিজ্ঞানী এবং ৭০০ জন নার্স (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য মূল্যায়নে বিশেষ উদ্যোগ-২০২০) ।

আলোচনায় বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক, স্বাস্থ্য পেশাজীবি ও উন্নয়ন খাতের কর্মীরা যোগ দেন যেখানে তারা দুর্যোগ ও সংকটের সময় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ, ন্যায্যতা ও মনোসামাজিক সহায়তার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং জরুরি পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সুযোগ ও বাধা-বিপত্তিগুলো আলোচনা করেন। 

উদ্বোধনী বক্তব্যে, সাজেদা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদা ফিজ্জা কবির বলেন, দুর্যোগের পরেই কেবল মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবা উচিত নয়, বরং বিষয়টিকে দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থায় অঙ্গীভূত করা উচিত যাতে প্রয়োজনের সময় যথাযথ সেবা দেওয়া যায়।"

তিনি মানসিক স্বাস্থ্য খাতে আর্থিক ও মানবসম্পদের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন এবং সবার জন্য, বিশেষ করে দুর্যোগের সময়ে, মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারি, বেসরকারি, এনজিও ও উন্নয়ন খাতকে একসাথে কাজ করার জন্যে আহ্বান জানান।

তিনি মানসিক স্বাস্থ্যখাতে একটি একক নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অভিন্ন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরের (এসওপি) প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন এবং বলেন, ভালো ফলাফলের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এসওপি মেনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আওতায় কাজ করতে হবে।

স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এসএম মুস্তাফিজুর রহমান মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের জন্য আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি, বহুপক্ষীয় সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিকেন্দ্রীকরণের উপর জোর দেন। 

সম্পদের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে তিনি বলেন, মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ০.৫ শতাংশ পায় মানসিক স্বাস্থ্যখাত এবং এই অর্থের বেশিরভাগ আবার যায় প্রাতিষ্ঠানিক বরাদ্দ হিসাবে। 

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আরও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শাহানুর হোসেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ খান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক ডা. শাহরিয়ার ফারুক, সাজেদা ফাউন্ডেশনের ডেপুটি সিইও মোহাম্মদ ফজলুল হক, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের উপদেষ্টা সৈয়দ মোহাম্মদ নুরুদ্দিন, জাতিসংঘের নারী উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন-এর সমন্বয় ও অংশীদারিত্ব বিশ্লেষক সৈয়দা সামারা মোর্তদা এবং ইউনিসেফের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপক ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ এমদাদুল হক।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সাজেদা ফাউন্ডেশনের যে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো (সাইকোলজিকাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস কেয়ার লিমিটেড, ইনার সার্কেল প্রাইভেট লিমিটেড, নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি হাব লিমিটেড, হোম অ্যান্ড কমিউনিটি কেয়ার লিমিটেড)  কাজ করছে,  অংশগ্রহণকারীরা তাদের বুথগুলো ঘুরে দেখেন। 

মনোজ্ঞ শিল্প-প্রদর্শনী ও যন্ত্রসঙ্গীতের একটি আয়োজনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপনী হয়। এর মাধ্যমে সাজেদা ফাউন্ডেশন আবার প্রমাণ করে যে, তারা সংকট-পরবর্তী সেবা এবং দীর্ঘমেয়াদি মানসিক স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে এক সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এমআর// 
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি