ঢাকা, শনিবার   ১১ অক্টোবর ২০২৫

দেশের কীটনাশকের বাজার বহুজাতিক কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩৯, ৮ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:০৬, ৮ অক্টোবর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বহু দেশে ওষুধ রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে দেশ। তবে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রযুক্তির কীটনাশক উৎপাদনে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। দেশে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বালাইনাশকের বাজার রয়েছে। যার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি।

বর্তমানে দেশে কীটনাশকের বাজার সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার। যার ৫৫ শতাংশ বা ৪ হাজার ১২৫ কোটি টাকার বাজার রয়েছে সাতটি বহুজাতিক কোম্পানির হাতে। আর স্থানীয় আমদানিকারকেরা চাহিদার প্রায় ৪১ শতাংশ বা ৩ হাজার ৭৫ কোটি টাকার কীটনাশক আমদানি করছে। কীটনাশকের বাজারে দেশি উৎপাদনকারীদের হিস্যা মাত্র ৪ শতাংশ বা ৩০০ কোটি টাকার।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কীটনাশকের আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার ৫ শতাংশ। এর বিপরীতে কীটনাশক উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার ৩০ থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত। এ কারণে চাহিদার বড় অংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার বালাইনাশকের কাঁচামাল এবং ‘ফিনিশড’ বালাইনাশক আমদানি করা হয়। এরপর বিভিন্ন হাত ঘুরে নানা প্রক্রিয়া শেষে দেশীয় বাজারে যায়, যার বিক্রির পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী ও ব্যবহারকারী দেশ চীন। এরপর উৎপাদনে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ভারত ও জাপান।

তবে ফিনিশড পণ্যের অন্তত ৮০ ভাগ আমদানি করা হয় চীন থেকে এবং ২০ ভাগ আমদানি করা হয় ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে। 

তথ্য বলছে, সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি বহুজাতিক কোম্পানি সবচেয়ে বেশি বালাইনাশকের ফিনিশড পণ্য আমদানি করে। সে হিসাবে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা রয়েছে তাদের। তবে কোম্পানিটির ৪৬ ভাগ মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের।

এর বাইরে জার্মানভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি বায়ার ক্রপসায়েন্স। প্রতি বছর প্রায় ৪শ থেকে ৫শ কোটি টাকার ফিনিশড পণ্যের ব্যবসা করে তারা। এ ছাড়াও ভারতীয় বহুজাতিক কোম্পানি ইউপিএল, জার্মানভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি বিএএসএফ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি এফএমসি করপোরেশন পরোক্ষভাবে এখানে ব্যবসা করছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফিনিশড পণ্যের পরিবর্তে যদি কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে অবাধ এবং সহজ করা হতো সেক্ষেত্রে এসব পণ্যের দাম কমপক্ষে ৩০ ভাগ কমে কৃষকের কাছে পৌঁছানো যেতো। 

শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বাংলাদেশ নিম্নআয়ের দেশ হওয়ার কারণে ওষুধ এবং বালাইনাশকের একচেটিয়া বাজার করার সুযোগ নেই। 

এদিকে কীটনাশকের বাজারকে আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক করতে চলতি মাসে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বামার প্রধান উপদেষ্টা আনিস-উদ-দৌলার নেতৃত্বে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সংগঠনের সভাপতি ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান ও সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর খান।

বালাইনাশক মূলত ফসলের ক্ষতিকর উদ্ভিদ বা প্রাণী, যেমন—পোকামাকড়, জীবাণু, আগাছা, ইঁদুর ইত্যাদি দমনে ব্যবহৃত হয়।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কৃত্রিম বাধাগুলো দূর করা দরকার। জাতীয় স্বার্থে দেশিয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎপাদনে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।

কৃষকরা বলেন, ক্ষেতে পোকার আক্রমণ হলে কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া উপায় নেই; তা নাহলে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তবে এর দাম বেশ চড়া।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি