নিজের ভাগ্য গড়ার চিন্তা কখনও করিনি : সংসদে প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত : ২১:২৪, ১২ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১০:৩৬, ১৩ জুলাই ২০১৭
দেশ ও দেশের জনগণের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ক্ষমতা আমার কাছে ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য নয়। মানুষের কল্যাণের জন্য যেকোনো অবস্থা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। আমি রাষ্ট্রপতির মেয়ে ছিলাম,মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম, নিজেও ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী। নিজের ভাগ্য কী করে গড়ব সেই চিন্তা কখনও করিনি।
বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তরের প্রথম ৩০ মিনিট প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ছিল।
ক্ষমতাকে মানুষের সেবা করার সুযোগ বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেবক হিসেবে দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগটা পাচ্ছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করে দেশের মানুষকে সেবা করার সুযোগ করে দিচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। আমার ও আমার বোনের পাঁচটি ছেলেমেয়ে। তাদেরকে একটা কথা বলে দিয়েছি, লেখাপড়া শিখেছ—ওইটুকুই তোমাদের সম্পদ। তারাও প্রতিটি কাজে আমাদের সহায়তা করছে। কখনো বিরক্ত করে না—এই ব্যবসা দিতে হবে, সেই ব্যবসা দিতে হবে। এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। এ ধরনের বিরক্ত কখনোই তারা করেনি। বরং আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ, অটিজমের জন্য কাজ করা, দলের ডাটা সেন্টারটাকে গড়ে তোলা, দেশের উন্নয়নমূলক অনেক কাজেই তারা সাহায্য করছে। ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ এই নিয়ে দুবার লন্ডনে এমপি নির্বাচিত হয়েছে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে মানুষ যখন শান্তির মুখ দেখতে শুরু করেছে, দেশের সম্ভাবনার স্বর্ণ দুয়ার খুলে গেছে, ঠিক তখনই জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি ও আমার ছোট বোন এক দিনেই নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে যাই। এই শোক ও ব্যথা সহ্য করা যায় না। তবে এই শোক ও আঘাত আমি ও আমার বোনের ভেতরে শক্তি জুগিয়েছে। মানুষের ভালোবাসার পরশ থেকে শক্তি পেয়েছি। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছি।’
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিদেশে থাকার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ৫টি বছর রিফিউজি (শরণার্থী) হিসেবে বিদেশের মাটিতে আমাদের থাকতে হয়েছে। রিফিউজি হিসেবে অন্য দেশে থাকা এটা যে কতটা বেদনাদায়ক ও কষ্টকর আমরা তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি।
তিনি বলেন, একটি বৈরী পরিবেশে আমি দেশে ফিরে আসি। আমার চলার পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই উৎরাই ও বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আমাকে এগুতে হয়েছিল। সত্য ও সততার পথে থাকলে যে কোনো বাধাই অতিক্রম করা যায়। দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে হবে, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতেই হবে—এই অদম্য আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমি যাত্রা শুরু করি। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি, ভয় পাইনি। একটা আত্মবিশ্বাস ছিল, আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। এদেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে সাহায্য করবে। দেশের মানুষও নিশ্চয় বুঝতে পারবে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে চীন হতে সাবমেরিন কেনার তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন হতে সাবমেরিন ক্রয় বাংলাদেশের একটি জাতীয় স্বার্থকেন্দ্রিক একটি সিদ্ধান্ত এবং এর ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বে কোনও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে না বলে বিশ্বাস করি।
এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাতে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক, শান্তিপ্রিয়, প্রগতিশীল এবং দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এ লক্ষ্যে আমাদের সমন্বিত কার্যক্রম আগামি দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান, ভাবমূর্তি ও অবস্থান আরও উন্নত ও সুদৃঢ় হবে।
সাংসদ আয়েন উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে (১৫ জুন পর্যন্ত) বাংলাদেশ থেকে মোট ৪৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ জন কর্মী বিদেশে গেছেন।
ডব্লিউএন
আরও পড়ুন