ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৬ মে ২০২৪

‘প্রণোদনার সুফল নির্ভর করবে ব্যবস্থাপনার ওপর’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৫৮, ১৬ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১৯:৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ঘোষিত সামগ্রিক প্রনোদণা প্যাকেজের বিষয়ে বেসরকারি সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)’র প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান । তিনি বলেন, করোনাভাইরাস জনিত সংকট এবং একটি আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যেটি আমাদের জিডিপি-র তিন শতাংশেরও বেশি। আমি মনে করি সামনের দিনগুলোতে এটির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। সানেমের পক্ষ থেকে আমরা এই প্রণোদনা প্যাকেজ-কে স্বাগত জানাই। 

বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রনোদণা প্যাকেজের বিষয়ে সানেমের এ প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, এই প্রণোদনা প্যাকেজের সাফল্যে নির্ভর করছে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। মনে রাখা দরকার যে বাংলাদেশের এ ধরণের বিশাল পরিমাণের বা বিশাল পরিসর এর প্রণোদনা প্যাকেজ প্রয়োগ করার অতীত অভিজ্ঞতা নেই। বাংলাদেশের যে সাফল্য আছে দুর্যোগ মোকাবেলায়, বিশেষ করে সাইক্লোন বা বন্যা সংক্রান্ত দুর্যোগ মোকাবেলায়,  সেটির থেকে করোনাভাইরাস জনিত যে সংকটটা আমরা দেখছি তার ধরণ একেবারেই ভিন্ন। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেরই এই ধরণের অভিজ্ঞতা নেই। বাংলাদেশের তো অবশ্যই এই ধরণের অতীত অভিজ্ঞতা ছিল না। সুতরাং এই ধরণের একটা সংকটের সময়ে এরকম একটা বিশাল পরিমাণের অর্থ যখন অর্থনীতিতে চালনা করা হচ্ছে, নানা ধরণের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, সেখানে এটার সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজটির ব্যবস্থাপনার ওপর। এক্ষেত্রে প্রথমত যেটি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে এই প্রণোদনা প্যাকেজ-এর অর্থের সংকুলান কীভাবে হবে। 

অর্থের সংকুলানের জন্য আমি চারটি উৎস দেখি। প্রথমটি অবশ্যই হচ্ছে সরকারের যে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় খরচ আছে, বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাজেটে যে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো আছে সেগুলোকে অবিলম্বে স্থগিত বা বাতিল করা দরকার। সেখান থেকে যে পরিমাণ টাকা সঞ্চয় হবে সেটাকে অবশ্যই প্রণোদনা প্যাকেজ-এর জন্য কাজে লাগাতে হবে। 

দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ, তাদের কাছ থেকে ঋণ নেয়া। আমরা জানি বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যংকের শ্রেণীকরণ অনুযায়ী নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার কারণে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার সুবিধা অনেকটা হারিয়েছে। কিন্তু এরকম একটি সংকটের সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এর সাথে সমঝোতা করার চেষ্টা করতে পারে যে কিভাবে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া যায়। আমরা কোনো কঠিন শর্ত চাই না। সে দিক থেকে বাংলাদেশের এ ব্যাপারে আলোচনা চালানোর সুযোগ আছে।    

তৃতীয় উপায়টি হয়ত খুব সুখকর না। কিন্তু, তারপরও সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেবে। আমরা জানি যে ব্যাংকিং খাতের এখন যে অবস্থা এবং দীর্ঘদিনের যে চলমান সংকট তার মধ্যেই সরকার জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে, পুরো বছরে যা নেয়া দরকার তার চেয়েও বেশি পরিমাণে সরকার নিয়ে নিয়েছে। তারপরও যদি অর্থের প্রয়োজন হয়, সরকারকে সেই ব্যাংক থেকে টাকা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি যথেষ্ট সতর্কতার সাথে ব্যাংক থেকে টাকা নেয়া দরকার। 

এই তিনটি ক্ষেত্র থেকেও যদি না হয় তাহলে চতুর্থ যে উপায়টি সেটি হচ্ছে টাকার সংকুলান করার জন্য টাকা ছাপাতে হবে। তবে আমি মনে করি এটিকে একদমই শেষ উপায় হিসেবে রাখা দরকার। 

কিন্তু টাকার সংকুলান হলেই তো হোলো না। খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে টাকাটা ব্যবহার হচ্ছে কিভাবে। প্রণোদনা প্যাকেজের দুটি দিক আছে। একটা হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পগুলোর জন্য সহায়তা প্রদান করা এবং আরেকটি হচ্ছে দরিদ্র এবং অসহায় জনগোষ্ঠীর খাদ্য সংকট ও অন্যান্য সমস্যা মোকাবিলা। এই দুইটি ক্ষেত্রে কীভাবে অর্থ বিতরণ করা হবে, কে পাবে এবং কিভাবে পাবে, এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে যথার্থ ভাবে কার্যকরী হতে হবে। খেয়াল করা দরকার যে, আমাদের আমলাতন্ত্রের দক্ষতা, সরকারি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা নিয়ে নানা ধরণের সমালোচনা আছে। আমরা জানি বিভিন্ন বৈশ্বিক সূচকে আমলাতান্ত্রিক দক্ষতা বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা নিয়ে নানা ধরণের প্রশ্ন আছে। এগুলো এড়িয়ে যাওয়ার কোনো ধরণের সুযোগ নেই। খেয়াল করা দরকার যে, যখন বিশাল পরিমাণ অর্থ ছাড়া হবে তখন এটির অন্যায় সুযোগ নেয়ার জন্য অনেকেই ওৎ পেতে থাকবে। তার কিছু কিছু আলামত আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি। সুতরাং নিশ্চিত করতে হবে যে এই বিতরণ প্রক্রিয়ায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যেন সত্যিকার অর্থে সাহায্য পায়। এই পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে, বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পগুলো এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার জন্য খাদ্য ও অর্থ যোগান দেয়ার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।   

পুরো প্রক্রিয়াটিকে মনিটর করার জন্য সানেমের পক্ষ থেকে আমরা প্রস্তাব করছি একটি মনিটরিং ইউনিট স্থাপন করার। কারণ সরকার যদি নিজেই খরচ করে, নিজেই মনিটর করে তাহলে এটার কোনো চেক এন্ড ব্যালেন্স থাকবে না। আমি সানেমের পক্ষ থেকে আবেদন জানাচ্ছি যে, অবিলম্বে একটি জাতীয় মনিটরিং কমিটি গঠন করা দরকার, যেখানে সরকারের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা, এনজিও দের প্রতিনিধিরা, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিধিরা, এবং শ্রমিক সংগঠন থেকে প্রতিনিধিরা থাকবেন। এ ধরনের একটি মনিটরিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি।  

সব শেষে আমি মনে করি যে, যে ধরণের সংকট আমরা অতিবাহিত করছি, সামনের দিনগুলোতে এই সংকটের কারণে আর্থিক যে বিশাল ধাক্কা আমরা খেতে যাচ্ছি, সেটি সামলে ওঠার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়। এটা থেকে সামলে ওঠার দায়িত্ব আমাদের সবার। আমরা সবাই যদি একসাথে কাজ করি সরকার, এনজিও, সিভিল সোসাইটি, বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন, তাহলে আমি মনে করি আমরা এই সংকট থেকে উদ্ধার পেতে পারব।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি