ঢাকা, সোমবার   ০৬ মে ২০২৪

প্রিয় ক্যাম্পাসে আর ফেরা হলো না সাইফের!

নোবিপ্রবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ২৩:৩৭, ১৯ আগস্ট ২০২০

একটা গল্প বলি। একরাশ স্বপ্নের পতন হওয়া একটা গল্প। একজন মায়ের বুকের ধন হারানো একটি গল্প। একটি পরিবারের আগামীর হাল ধরতে ব্যর্থ হওয়া একজন সন্তানের গল্প। আগামীর বাংলাদেশের এক সম্ভাবনার ঝরে যাওয়ার গল্প। হাজারটা স্বপ্ন ও আকাশ সমান আশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। স্বপ্ন ছিলো আকাশটা কে নিজের করে নিবে। কিন্তু একদিন অন্ধকার কালো মেঘে আকাশটা ঢেকে গেলো।

আমরা সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করলাম মেঘকে সরিয়ে আবার সূর্যের আলোই আলোকিত করতে। কিন্তু সে সময় টা সৃষ্টিকর্তা আমাদের আর দেননি। বৃষ্টির হয়ে ঝরে পড়লো সে। একরাশ স্বপ্ন মুহুর্তে মাটিতে মিশে গেলো কাঁদা হয়ে। হ্যাঁ গল্পের সমাপ্তি হলো তার চিরবিদায়ে। যেমনি ভাবে আকাশ থেকে তাঁরা খসে পড়ে তেমনিভাবে আমাদের কাছ থেকে সাইফ নামের মানুষটা হারিয়ে গেলো। ভালোমানুষ রা খুব বেশিদিন থাকেনা। আল্লাহ নিজের কাছে নিয়ে নেন,তাই তোকেও নিয়ে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অহিদা মিতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুকে) এইভাবে লিখেন প্রিয় বন্ধুকে হারানোর দুংখগুলো।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মেধাবী শিক্ষার্থী মো. সাইফ উদ্দিন এর প্রিয় ক্যাম্পাসে আর ফেরা হলো না। বেশ কিছু দিন ধরে তিনি কিডনিজনিত রোগে ভুগছেন। সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ (১৯ আগস্ট) দুপুরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

সাইফ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী। সাইফের বাড়ি নোয়াখালী সুবর্ণচর উপজেলার ৮ নং মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মুন্সিরহাটে। মার্চের শেষ দিকে শারীরিক বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা দেখা দেয়। তবে দেশে করোনাভাইরাসের ভয় প্রকোপ আকারে থাকায় গ্রাম্য ডাক্তারের চিকিৎসায় চলতে থাকে। অবস্থার অবনতি হলে নোয়াখালীর মাইজদীতে ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করে জানা যায়  দুটি কিডনি ইনফেকশন হয়ে প্রায় শেষ অবস্থায়। 

এরপর ঢাকা উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হসপিটালে প্রখ্যাত নেপ্রোলজিস্ট ডা. ইউশা আল আনসারী এর অধীনে কিছুদিন চিকিৎসা চলে। শারীরিক কোন পরিবর্তন দেখা না গেলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হয়। এতে ডাক্তার হতাশার কথা শুনিয়ে জানালেন, ঔষধ খেয়ে কিছুদিন বাঁচলেও সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। এজন্য যতদ্রুত সম্ভব কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করার পরামর্শ দেন।

পরবর্তীতে সাইফ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সম্প্রতি তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। হসপিটালে করোনা ইউনিটে জায়গার সংকুলন না হওয়ায় মুগদা হসপিটালে সাইফকে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে করোনা ইউনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

সাইফের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা,কর্মচারী সকলেই সাইফের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও প্রক্টর ড.নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুকে) লিখেন, প্রিয় ছাত্র সাইফের মৃত্যুতে খুব কষ্ট পেয়েছি। আমাদের সকলের চেষ্টাও তাকে বাঁচাতে পারেনি। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।
কেআই//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি