ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪

মাহাথিরের বেড়ে উঠা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:০৮, ১০ মে ২০১৮

মাহাথির মোহাম্মদ ২২ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে মালয়েশিয়াকে এক শতাব্দী এগিয়ে দিয়েছিলেন। টানা দুই দশকেরও বেশি সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকায় তাঁর কিছু সমালোচনা থাকলেও মালয়েশিয়ানদের স্বার্থের বাইরে কিছুই করেন নি পেশাদার চিকিৎসক থেকে রাষ্ট্রনায়ক হওয়া মাহাথির। তার সুদূরপ্রসারী চিন্তার এক সময়কার ঔপনিবেশ মালয়েশিয়া আজ শুধু পৃথিবীর অন্যতম আকাঙিক্ষত বাসযোগ্য নগরীই নয়, এশিয়ার টাইগারও।
আধুনিক মালয়েশিয়ার এই রূপকার ১৯২৫ সালের ১০ জুলাই জন্মেছিলেন এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। মাহাথির ছোটথেকেই পড়াশুনায় বেশ ভালো ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলেজ বন্ধ থাকাকালীন তিনি কিছুদিন কফি ও নাস্তা বিক্রির কাজও করেছিলেন। বিশ্বযুদ্ধ শেষে তিনি আবার পড়াশুনায় ফিরে আসেন। ১৯৪৬ সালে কিং এডওয়ার্ড কলেজ অফ মেডিসিনে ভর্তি হন। পাশ করার পরে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। এরপরে ১৯৫৬ সালে নিজ ব্যাচমেট সিতি হাসমাহকে বিয়ে করেন এবং সরকারি চাকরি ছেড়ে নিজস্ব প্রাকটিস শুরু করেন নিজ শহর আলোর সেতারে এবং ভালো সুনাম অর্জন করেন। সেই অঞ্চলে তখন তিনিই ছিলেন একমাত্র মালয় চিকিৎসক।
ইউনিভার্সিটি অব মালয় থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে পড়াশোনা করেছেন মাহাথির। এরপর জন্মভূমি কেদাহ রাজ্যে সাত বছর চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। মাহাথির ধীরে ধীরে ‘ডক্টর এম’ নামে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
রাজনীতিতে মাহাথির মোহাম্মদের হাতেখড়ি ১৯৪৬ সালে। তখন তাঁর বয়স ছিল মোটে ২১ বছর। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তখন উত্তাল মালয়েশিয়া। ওই সময়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও) যোগ দেন তিনি। ওই দলের মূল আদর্শ ছিল জাতীয়তাবাদ। এটি এখনো মালয়েশিয়ার অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল। সেই থেকে ৭২ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার মাহাথিরের।
ইউএমএনও দলের হয়ে ১৯৬৪ সালে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। তবে ১৯৬৯ সালে ঘটে ছন্দপতন। তৎকালীন সরকার প্রধান টেংকু আব্দুল রহমানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পার্লামেন্ট আসন হারান তিনি। মালয় সম্প্রদায়কে অবহেলার অভিযোগ তুলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টুংকু আব্দুল রহমানের কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন মাহাথির। এতেই ক্ষমতাসীন দলের রোষানলে পড়েন তিনি।
রাজনৈতিকভাবে একঘরে হওয়ার পর বই লেখায় মনোনিবেশ করেছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। নিজের আদর্শ ও চিন্তাভাবনা নিয়ে একটি বিতর্কিত বই লেখেন তিনি। বইটির নাম ছিল ‘দ্য মালয় ডিলেমা’। ওই বইয়ে তিনি লিখেছিলেন, ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকেই মালয় সম্প্রদায়কে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে এবং দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছিল। আর এই বিষয়টি মেনে নিতে মালয় সম্প্রদায়কে বাধ্য করা হয়েছিল।
দ্য মালয় ডিলেমা প্রকাশিত হওয়ার পর রাজনীতিবিদ হিসেবে ডক্টর এমের পুনরুত্থান ঘটে। পশ্চিমা নব্য ঔপনিবেশিকদের প্রতি মালয়েশিয়ার ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে-তা ঠিক করতে বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর ইউএমএনও দলের তরুণ নেতাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মাহাথির। দলে ফিরেই ১৯৭৪ সালে পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি। এরপর মন্ত্রিসভায় ঢুকে যান মাহাথির। পান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। টেংকু আবদুল রহমান ক্ষমতা ছাড়লে মাহাথিরের প্রমোশন হয়। তিনি দেশের উপ প্রধানমন্ত্রী হন।
মন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী হওয়ার চার বছরের মধ্যে নিজ গুণে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন মাহাথির মোহাম্মদ। ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (ইউএমএনও) দ্বিতীয় প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মাহাথির।
লেখালেখিও করেছেন মাহাথির। মালয়-চায়নিজ জাতিগত সংঘাতের পরে, মালয় সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা নিয়ে লেখা তার প্রথম বই The Malay dilemma বের হয় ১৯৭০ সালে। বইতে তৎকালীন সরকারের কড়া সমালোচনা থাকায় প্রকাশের পরপরই নিষিদ্ধ হয়। পরে মাহাথির ক্ষমতায় আসার পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। বলা হয় যে এই বই তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী টিংকু আবদুল রহমানের পদত্যাগের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিল।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি