ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

মেস ভাড়া নিয়ে বিপাকে নোবিপ্রবি`র শিক্ষার্থীরা

নোবিপ্রবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ২২:৩৩, ১২ জুন ২০২০

দীর্ঘ তিন মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মেসে থাকছেন না নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি নিজেদের টিউশন না থাকা আর অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরিবারের আর্থিক অনটনের ফলে মেস ভাড়া নিয়মিত পরিশোধ  করতে পারছে না। ভাড়া পরিশোধে ভুগছেন চরম সিদ্ধান্তহীনতায়। তাছাড়া নিয়মিত মেস মালিকদের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা। তবে শুরু থেকে  হস্তক্ষেপ চেয়েও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পায়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৭ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত আছে। এর মধ্যে তিনটি হলে আবাসিক সুবিধা পান মাত্র ২ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই হলে সিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে মেসে থাকতে হয়। এই সঙ্কটকালীন সময়ে নানা মূখী সমস্যায় পড়ে তারা মেস ভাড়া পরিশোধ করতে পারছে না। মেস মালিকদের নিয়মিত হুমকি বা চাপ প্রয়োগের কথা প্রশাসনকে জানালেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ না দেখায় ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবী, সম্পূর্ণ না হলেও অন্তত মূল ভাড়ার কিছু অংশ মওকুফের ব্যবস্থা করলে কিছুটা সহনীয় হয় শিক্ষার্থীদের জন্য। এছাড়া ভাড়ার বিষয়ে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু প্রণোদনা দিলেও আর্থিক ভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা চাপ মুক্ত হবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রাত্রি তালুকদার বলেন, আমাদের বাসা ভাড়া ১২ হাজার টাকা। প্রত্যেক মাসেই আমাদেরকে ফুল ভাড়া দিতে হয়। ভাড়া দিতে না পারলে আমাদের জিনিসপত্র ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরকে জানালে তিনি বলেন "তোমাদেরকে বাড়ির মালিক ফোন দিলে রিসিভ করবা না, তাহলেই হবে"। রাত্রি তালুকদার বলেন, এইদিকে বাসা মালিকেরা ভাড়া পরিশোধ করতে একটু দেরী হলে বিভিন্ন নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে আমাদের ধমক দিয়ে থাকেন। আমাদের সব গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র মেসে থাকায় প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন,স্থানীয় প্রশাসন এবং বাসা মালিকদের সমন্বয়ে এর দ্রুত একটি সমাধান চাই।

এদিকে বাড়ির মালিকদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, স্থানীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান চান তারাও। উত্তর ফকিরপুরের এক বাড়ির মালিক মো শফিকুল্লাহ বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে যায়। গত তিন মাসের ভাড়া বকেয়া রয়েছে শিক্ষার্থীদের। এজন্য আমাকেও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। দ্রুত এটির সুষ্ঠ সমাধান হওয়া দরকার।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের এই সঙ্কটকালীন সমস্যার কথা আমরা অবশ্যই বিবেচনা করবো। তবে এটি প্রশাসনের মধ্যস্থতায় আমাদের উপযুক্ত সিদ্ধান্ত জানানো হোক। আমরা আংশিক বাড়া মওকুফ করে বাকিটা আদায় করবো। 

এছাড়াও শিক্ষার্থীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কিছু বাড়ির মালিক সমস্যায় না থাকা সত্ত্বেও কোন প্রকার ছাড় দিতে সম্মতি প্রকাশ করছে না। নিয়মিত সময় বেঁধে দিয়ে তার মধ্যে ভাড়া আদায় করছে কিছু বাড়ির মালিক। ওই সব বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলেও এই বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। সঙ্কটকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের কোন সহযোগিতা করতেই আগ্রহী নয় ওই সব বাড়ির মালিক। শিক্ষার্থীদের দাবী, আমারা দীর্ঘদিন ওইসব বাড়িতে না থাকায় আনুষাঙ্গিক কিছু বিল কম আসছে। তাই আমাদের আংশিক ছাড় দেওয়ার দাবী যৌক্তিক। প্রশাসনের মধ্যস্থতায় এসব বাড়ির মালিকদের ব্যাপারে সমাধান করার দাবী ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের। 

এই ব্যাপারে নোবিপ্রবি প্রক্টর ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসন এবং সাংসদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। এটি সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছ। 

তিনি আরো জানান, নিজ নিজ বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে শিক্ষার্থীদের উচিৎ যথাসম্ভব সমাধানে নিয়ে আসা। আর আগামীতে কয়মাস শিক্ষার্থীদের নিজ বাড়ি থাকা লাগে এটা অনিশ্চিত, সুতরাং তারা কয়েকটি মেসের জিনিসপত্র এক মেসে রেখেও খরচ কমিয়ে নিতে পারে।

তবে আগে থেকে সমাধানের কথা বলে আসলেও প্রশাসনকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি। এ বিষয়ে প্রক্টর জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ নোয়াখালীতে না থাকায় সরাসরি পদক্ষেপ নিতে ব্যাহত হচ্ছে। যথাসম্ভব সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। আপাতত এর বেশি কিছু করা সম্ভব নয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

এ বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সাথে ইতিপূর্বে এ বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। আবার যোগাযোগ করে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। করোনা পরীক্ষার ফলে ব্যয় অনেক বেড়ছে বিধায় সকল শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেওয়া টাও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর শিক্ষার্থীদের নাম সংযুক্তি সহ একটি দরখাস্ত করতে বলেন উপাচার্য।

সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরে শুক্রবার বিকেলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে পরবর্তীতে আবারও আলোচনা হবে। সে আলোকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।
কেআই/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি