ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

মিয়ানমার-জাতিসংঘ চুক্তি

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা নেই

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:২৩, ৩০ জুন ২০১৮ | আপডেট: ০৯:২৪, ৩০ জুন ২০১৮

মিয়ানমার সরকার ও জাতিসংঘের মধ্যে সই হওয়া গোপন চুক্তিতে দেশটিতে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কিংবা সারা দেশে স্বাধীনভাবে চলাচলের কোনো প্রকাশ্য নিশ্চয়তা নেই। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সরকারের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় যেসব রোহিঙ্গা ভবিষ্যতে দেশটিতে ফেরত যাবে, তাদেরও নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও জাতিসংঘের মধ্যকার সমঝোতা স্মারকটির(এমওইউ) একটি অনুলিপি পর্যালোচনার পর রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। গত মে মাসের শেষ দিকে চুক্তিটি সই হলেও বিস্তারিত তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু চুক্তিটি ইতিমধ্যে অনলাইনে ফাঁস হয়ে গেছে।

গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছিল দেশটির সরকার। সহিংসতা কবলিত রাখাইনে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের প্রবেশের অনুমতি পেতে আলোচনায় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও শরণার্থীর অধিকার নিয়ে মতানৈক্য চলছিল।

সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে, রাখাইনে অন্যান্য অধিবাসীদের মতোই প্রচলিত আইন মেনে স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার ভোগ করবেন ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গারা। কিন্তু রাখাইন রাজ্যের সীমানার বাইরেও তারা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারবে কিনা, সেই নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি। এমনকি বর্তমানে যে আইন ও নীতিমালা দিয়ে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরার অধিকার রোধ করা হয়েছে, তা সংশোধনের প্রতিশ্রুতিও সেখানে নেই।

শরণার্থী নেতা ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, এ চুক্তি রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। গত বছর নিধন অভিযান শুরু হলে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভাষায় যেটা জাতিগত নির্মূল অভিযানের জ¦লন্ত উদহারণ।

মিয়ানমারে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষক লরা হাই বলেন, যখন বিষয়টি এমন দাঁড়ায় যে রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরছেন, তখন তার অর্থ হচ্ছে, তারা এমন একটি বর্ণবিদ্বেষমূলক রাজ্যে ফিরছেন, যেখানে তারা মুক্তভাবে চলাফের করতে পারবেন না। এমনকি তাদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও কর্মস্থলে যাতায়াতের সুযোগ থাকবে না।

এর আগে এই সমঝোতা স্মারককে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করতে প্রথম ও জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। এ বিষয়ে কথা বলতে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হিটাই ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী উইনমিট মিট আইয়ের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

বার্তা সংস্থাটি জানায়, তারা দুটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কথা বলে সমঝোতা স্মারকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, চুক্তিটি সই হওয়ার আগের দিন খসড়াটি লেখা হয়েছিল। মানবাধিকার ও সাহায্য সংস্থাগুলোর মতে, কয়েক মাস আলোচনার পর সম্পাদিত চুক্তিটিতে মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে কোনো জোরালো সুবিধা হাসিল করতে পারেনি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মসূচি।


চুক্তিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের রোহিঙ্গা হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। প্রত্যাবর্তনকারী সবাইকে যথাযথ পরিচয়পত্রের কাগজ ও তারা যাতে স্বেচ্ছায় মুক্তভাবে ফিরতে পারেন, মিয়ানমার সরকারকে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা ছাড়া তারা ফিরবেন না। তারা মিয়ানমারের দেওয়া জাতীয় প্রমাণপত্র প্রত্যাখ্যান করেছেন।

সূত্র: রয়টার্স
এমজে/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি