ঢাকা, সোমবার   ২০ মে ২০২৪

`শান্তি হীরা` বদলেছে কি সিয়েরা লিওনের মানুষের জীবন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৬, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

৭০৯ ক্যারেট ওজনের `শান্তি হীরা` পাওয়া গিয়েছে কোয়ার্ডু গ্রামে। গত বছরের মার্চে বিশ্বের অন্যতম বড় হীরাগুলোর একটি পাওয়া গিয়েছিল সিয়েরা লিওনে। কোয়ার্ডু গ্রামে একজন খৃষ্টান ধর্মযাজকের পাওয়া ৭০৯ ক্যারেট ওজনের এই পাথরটির নামকরণ করা হয়েছিল `শান্তি হীরা` নামে, যা সিয়েরা লিওনের সরকারের কাছে তুলে দেয়া হয়।

পরে হীরাটি নিউইয়র্কে নিলামে সাড়ে ছয় মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়-যে অর্থের একটি অংশ ওই এলাকার উন্নয়নে ব্যয় করার কথা ছিল। কিন্তু হীরা সেই গ্রামে কতটা পরিবর্তন এনেছে?

হীরা সমৃদ্ধ কেনো জেলার শান্ত নিরিবিলি একটি গ্রাম কোয়ার্ডু। বনের ভেতর ছোট এই গ্রামটিতে অনেক দরকারি সেবাই নেই। দরিদ্র শিশুরা বেশিরভাগ সময় পাথর নিয়ে খেলা করে, গ্রামের চারদিকেই যা ছড়িয়ে থাকতে দেখা হয়।

গ্রামবাসীরা বলছেন, হীরা তাদের জীবনে কোন পরিবর্তন আনেনি। গত বছর এই গ্রামটি বিশ্ববাসীর আলোচনায় উঠে আসে, কারণ এখানেই পাওয়া গিয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরাগুলোর একটি। একজন খৃষ্টান যাজক এবং তার দল মাটি খুড়ে ৭০৯ ক্যারেট ওজনের ওই হীরাটি বের করে আনেন। দেশের তখনকার প্রেসিডেন্টের কাছে তারা হীরাটি তুলে দেন। স্থানীয় একটি নিলামে হীরাটি বিক্রির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর, নিউইয়র্কে সাড়ে ছয় মিলিয়ন ডলারে হীরাটি বিক্রি হয়।

হীরাটির আবিষ্কারক যাজক ইমানুয়েল মোমাহ তার শেয়ার হিসাবে দুই মিলিয়ন ডলার পেয়েছেন। তিনি বলছেন, কথা ছিল, সরকারি ভাগের একটি বড় অংশ এলাকার উন্নয়নে খরচ হবে।

ইমানুয়েল মোমাহ বলছেন, সরকার যেহেতু হীরা বিক্রির বড় অংশটি পেয়েছে, তারা আমাদের কথা দিয়েছিল, এক মিলিয়ন ডলার স্থানীয় লোকজনের উন্নয়নে ব্যয় হবে, যেখানে হীরাটি পাওয়া গেছে। থাকার ব্যবস্থাসহ একটি স্কুল তৈরির কথা, হাসপাতাল হবে, ভালো সড়ক যোগাযোগ তৈরি করা হবে, শহর জুড়ে সৌর বিদ্যুৎ থাকবে, পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা হবে। টাকাটা তাদের কাছেই আছে, আমরা শুধু সেটার ব্যবহার দেখার অপেক্ষা করছি। কিন্তু এখনো সেই অর্থের দেখা পায়নি গ্রামবাসী। হীরা বিক্রির পর শহরের রাস্তা, বাড়িঘর বা স্কুলেও কোন পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি।

গ্রামের একমাত্র স্কুলে একটি মাত্র কক্ষ রয়েছে, যেখানে সব শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী একসঙ্গে বসে পড়াশোনা করে। শিক্ষকরা অপ্রশিক্ষিত এবং যোগ্যতারও ঘাটতি রয়েছে। পড়ানোর সময় একজনের কথার মধ্যে আরেকজন হারিয়ে যায়।

সিয়েরা লিওনের অনেকের পেশা হীরা খোঁজা: স্কুলের প্রধান শিক্ষক পিটার গ্যাবারমোই বলছেন, ২০০৪ সালে স্কুলটি চালু হওয়ার পর থেকে এখানে আমরা কোন শিক্ষা সামগ্রী পাইনি, শিক্ষকদের জন্য কোন উপকরণ নেই, তাদের কোন বেতনও নেই। আমরা এখনো সমাজের জন্য স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক হিসাবে কাজ করছি। দেড়শ শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র চারজন শিক্ষক রয়েছে। তবে নতুন সরকার বলছে, আগের প্রশাসনের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে সবরকম পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে।

সিয়েরা লিওনের খনি বিষয়ক মন্ত্রী মোরি মানইহ বলছেন, ক্লিপ: হীরা বিক্রির কিছু টাকা যৌথ তহবিলে গেছে। তবে যে গ্রামে হীরাটি পাওয়া গেছে, সেই কোয়ার্ডু গ্রামের জন্য দেড় মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গ্রামটির উন্নয়নে আমরা কিছু কর্মসূচী নিয়েছি, যাতে সেখানে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ, ছয় কক্ষের স্কুল তৈরি আর একটি সংযোগ সড়ক তৈরি করা হবে। এসব কাজ এর মধ্যেই শুরুও হয়ে গেছে।

তিনি আশ্বস্ত করছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন স্কুল তৈরির পর সেখানে প্রশিক্ষিত শিক্ষক পাঠানো হবে। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহে রয়েছেন খনি অ্যাকটিভিস্ট বের্নস কোমবা।

তিনি বলছেন, গ্রামের মানুষজন এখনো দরিদ্রতার মধ্যে আছে এবং হীরাটি পাওয়ার পর থেকে তাদের জীবনে আসলে কোন পরিবর্তন আসেনি। গ্রামে মাত্র ১০/২০টি বাড়ি রয়েছে। আপনি যদি এ ধরণের একটি গ্রামের জন্য এক মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখেন, আমি বলবো তাই যথেষ্ট। আপনি তাদের জন্য চমৎকার একটি জীবনযাত্রা দিতে পারবেন।

কোয়ার্ডু গ্রামে যখন সূর্য অস্ত যায়, এখনো অনেক মানুষ ক্ষুধার্ত পেটে বিছানায় যেতে বাধ্য হয়, কারণ যেটুকু রাতের খাবার তারা যোগাড় করতে পারে, তা পরিবারের জন্য যথেষ্ট নয়।

মিলিয়ন ডলারের হীরাটি খুঁজে পাওয়ার পর এর মধ্যে একবছরের বেশি সময় চলে গেছে আর তা থেকে এই গ্রামবাসীদের জীবনযাপন পাল্টানোর আশা আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে আসতে শুরু করেছে।

সূত্র- বিবিসি

আরকে//


Ekushey Television Ltd.





© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি