ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

‘সাহস ও মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত এবিএম মূসা’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:০০, ১ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৯:৩৯, ৪ মার্চ ২০১৮

কামাল লোহানী

কামাল লোহানী

২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল কিংবদন্তী সাংবাদিক এ বি এম মূসার ৮৭তম জন্মদিন। এদিন তার সহধর্মিনী সেতারা মূসারও জন্মদিন। এ উপলক্ষ্যে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আজীবন সম্মাননা ও স্মারক বক্তৃতা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এবিএম মূসা সেতারা মূসা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় এ বি এম মূসার এক সময়ের সহকর্মী সাংবাদিক কামাল লোহানীকে। সম্মাননা প্রাপ্তির পর এবিএম মূসার জীবনের নানাদিক তুলে ধরে স্মৃতিচারণ করেন। পাঠকের উদ্যেশ্যে তার পুরো বক্তব্য তুলে ধরা হলো।

এবিএম মূসা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে সহসী ও মানবিকতার অনন্য এক দৃষ্টান্ত। এ পেশায় সত্য কথা বলতে অনেকেই ভয় পান, কিন্তু তিনি ভয় পাননি। সাহসিকতার পাশাপাশি তার কথা, কাজ ও লেখনীতে মানবিক দিকও ফুটে উঠেছিল। তাই তিনি আমাদের চোখে এক অনুকরণীয় সাংবাদিক।

এদেশে গাড়িতে যে নম্বর প্লেট এটি এবিএম মূসা-ই প্রচলন করেছিলেন। সংবাদপত্রের যে গেটআপ –মেকআপের পরিবর্তন, আধিক্যতা, সৌন্দর্য ও কারুকাজ এসেছে তা তিনি-ই করেছিলেন। এই অসাধারণ ব্যাপারটি পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে আমরা তার কাছ থেকে শিখেছি।

এছাড়া যখন আইয়ুব খান প্রেস অ্যান্ড প্রিন্টিংয়ে অর্ডিনেন্স জারি করলো তখন প্রতিবাদ হলো গোটা পাকিস্তানে। আমরা ১৭ দিন ধরে ধর্মঘট করলাম। আমাদের মিছিল বের হলো এই প্রেস ক্লাব থেকে। সে মিছিলের প্রথমে ছিলেন মাওলানা আকরাম খাঁ। যিনি ছিলেন মূসা ভাইয়ের গাড়িতে। তার পরের লাইনে ছিলেন মানিক মিয়া, সালাম ভাই এবং জহুরুল হোসেন চৌধুরী। এই যে কিংবদন্তী সম্পাদকদের নিয়ে আমরা  মিছিল করেছিলাম। সেখানে মূসা ভাইয়ের ছিল বলিষ্ঠ ভূমিকা। কিন্তু আজকের দিনে এমন দেখা যায় না।

আজ সাংবাদিক ইউনিয়ন যে দ্বিখন্ডিত অবস্থায়। মূসা ভাই এ দ্বিখণ্ডন না করার জন্য চেষ্টা করে গেছেন। কেজি মুস্তফা, নির্মল সেন, আমি কামাল লোহানী, মূসা ভাই একসঙ্গে কয়েক ঘণ্টা আমরা বৈঠক করেছিলাম ইউনিয়ন না ভাঙ্গার জন্য। কিন্তু সেটা আমরা পরিনি। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ ছিলাম। দশজন এই প্যানেলের ও দশজন ওই প্যানেলের সঙ্গে কথা বলে না ভাঙ্গার জন্য। আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু অত্যন্ত তিক্ততাপূর্ণ জবাব পেয়েছি। মূসা ভাইয়ের যে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা সেটা বিফলে গেলো।

আজকে যে ইউনিয়ন ভাঙ্গা হলো, সেটা ভাঙতে তৎকালীন আইউব খানও চেষ্টা করেছিল। ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট বলে একটি কমিটি করেছিল। অবজারভারের যে রিপোর্টার ছিল প্রেস ক্লাবে তাকে সমন্বয়ক করে এ কমিটি করা হয়েছিল। খুব পরিচিত সাংবাদিক কিন্তু নামটা আমার এই মুহূর্তে মনে আসছে না। মূসা ভাই তাকে সরাসরি বলে ফেললেন তুমি যদি ওই সমন্বয়কের পদ থেকে পদত্যাগ না করো তবে আজ থেকে তোমার সঙ্গে আমাদের সব সম্পর্ক ছিন্ন।

এছাড়া ওয়াহেদ কায়সার নামে এক ঊর্দু সাংবাদিক তিনি ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট করতে চাচ্ছিলেন। মূসা ভাই একদম সোজাসুজি তাকে বলে দিলেন দোতলা থেকে একদম নিচে ফেলে দেবো যদি তুমি ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট করো।

মূসা ভাই মানবিকও ছিলেন অনেক বেশি। একদিন পুরানো পল্টনের একজন বাড়িওয়ালা তার ভাড়াটিয়ার ওপর নির্যাতন করেছেন। মূসা ভাইয়ের কানে সেটা পৌঁছানো হয়। এরপর তার নেতৃত্বে আমরা প্রায় ১৫ জন সাংবাদিক সেই বাড়িওয়ালার ওখানে গিয়ে বিষয়টির বিহিত করি।

এভাবে সাংবাদিকতার পাশাপাশি তার সাহসিকতা, মানবিকতা ও সততা ফুটে উঠেছে। দীর্ঘদিনের কাজের জন্য এবিএম মূসার নামে, বেগম সেতারা মূসার নামে আমাকে যে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হলো। এটা আমার জন্য বিশাল ও মহৎ প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তি আমি মনে করি জীবনের এ শেষ বয়সে আমাকে সাহস যোগাবে। শক্তি যোগাবে। আমি যেন সত্যি কথা বলতে পারি। মূসা ভাইয়ের মতো আমি যেন সত্য কথা লিখতে পারি। এই আশীর্বাদ করবেন সবাই। সবাইকে ধন্যবাদ।

আরকে / এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি