ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

‘সৃষ্টিশীল মানসিকতাই দূর করে সাংবাদিকতার সব প্রতিবন্ধকতা’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:১৬, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৯:৪৫, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শামীমা দোলা

শামীমা দোলা

প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকতায় নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে। সম্প্রচার সাংবাদিকতা স্বর্ণযুগে প্রবেশ করছে। এ সময়ে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও সক্ষমতা না থাকলে পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে সাংবাদিকদের জন্য। আর, সাংবাদিকতায় মেয়েদের বড় চ্যালেঞ্জ

মানসিকতা তৈরি না হওয়া। যারা কাজ করছেন বা নারীদের যারা নির্দেশনা দিচ্ছেন- উভয় শ্রেণিরই পেশাগত আচরণে ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। মোটাদাগে মনে হয় অনেক নারী আসছে, কাজ করছে। কিন্তু ভেতরের চিত্র ভিন্ন। শুধু গ্লামারের আকর্ষণেই ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে। কিন্ত সাংবাদিকতার কঠিন পথটি পাড়ি দেবার প্রস্তুতি নেই বেশিরভাগেরই। এই পেশায় অনেক প্রশিক্ষণ আর পড়াশোনার দরকার। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এটি হচ্ছে না। যা এই পেশায় টিঁকে থাকার বড় বড় চ্যালেঞ্জ। বলছিলেন দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তরের সিনিয়র রিপোর্টার শামীমা দোলা।


গত ১৬ আগস্টে তিনি সিডব্লিউবিটিএ-ইন্ডিয়া বাংলাদেশ বিজনেস এক্সিলেন্স এওয়ার্ড ২০১৮ জয় করলেন। দোলাই একমাত্র বাংলাদেশি, যিনি সাংবাদিকতায় এই এওয়ার্ড বিজয়ী। ব্যবসা-বাণিজ্য ক্যাটাগরিতে অবশ্য আরেকজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আলমগীর কবিরও এই পুরস্কার লাভ করেন। কোলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ সুর, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সিনিয়র সাংবাদিক আম্বার মুখার্জী, টাইমস অব ইন্ডিয়ার উদিপ্ত প্রসন্ন মুখার্জী আর তারকেশ মিশ্রকেও দেওয়া হয় এই সম্মাননা। কোলকাতায় গ্র্যান্ড ওবেরয় হোটেলে এই পুরস্কার তুলে দেন পশ্চিমবঙ্গের গণপূর্তমন্ত্রী

ফিরহাদ হাকিম। ওই অনুষ্ঠানেই শামীমা দোলার লেখা প্রথম বই ‘বারোয়ারি সময়’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দৈনিক আমাদের সময়, রেডিও আমার, এবিসি রেডিও এবং বৈশাখী টেলিভিশনেও কাজ করেছেন।

যদিও আর কজনের মতোই ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল ভিন্নতালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি শুরু করেন একটি বেসরকারি শিপিং কোম্পানিতে। কাজ করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকেও। তবে তাতে যেন অসম্পূণতা রয়ে যাচ্ছিল। একঘেঁয়ে মনে হলে ছেড়ে দেন আকর্ষণীয় সব চাকরি।

দীর্ঘ পেশাগত জীবনে তিনি বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হয়ে জাতিসংঘের অধিবেশনের সংবাদ সংগ্রহসহ ঘুরে বেড়িয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়াসহ পনেরটির দেশ। বাংলাদেশ-ভারতের আন্তঃবাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক, আন্তঃযোগাযোগ- এসব নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্টিং করেন শামীমা দোলা। সংবাদ উপস্থাপনা, বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিষয়ে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান সঞ্চালনাও করেছেন তিনি।

শামীমা দোলা অর্থনীতি বিষয়ে রিপোর্টিংয়ের জন্য বেশ কিছু সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে-এনবিআর পুরস্কার-২০১৭, সমধারা সম্মাননা-২০১৬, বাংলাদেশ মহিলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সেরা প্রতিবেদক পুরস্কার ২০১৫-১৬। চলতি মাসেই তিনি বাংলাদেশের একশন এইড- ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ইআরএফ মিডিয়া ফেলোশীপ ২০১৮ পান।

টেলিভিশন সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখালেখিও করেন উদ্যোমী এই গণমাধ্যম কমী। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক আর অনলাইন নিউজ পোর্টালে তার বিশ্লেষণধমী নানা লেখা পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজও করেছেন তিনি। নির্বাচিত লেখাগুলো নিয়েই তৈরি হয়েছে বৈচিত্রধর্মী গ্রন্থ ‘ বারোয়ারী সময়।

দেশে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেতে সাংবাদিকতা পেশার যখন কাঠখড় পোহাতে হচ্ছে অনেক, সে সময়ে নারীদের সাংবাদিকতায় এগিয়ে যাওয়া কি বাড়তি চ্যালেঞ্জ নয়- এমন প্রশ্নের উত্তরে আত্মপ্রত্যয়ী এই সংবাদ কমীর উত্তর, সাংবাদিকতায় নির্দিষ্ট, ধরা-বাধা কোন কাজ নেই। প্রতিদিন নতুন এসাইনমেন্ট, নতুন কাজ, নতুন নতুন তথ্যে ঝালাই করে নিতে হয় নিজেকে। রয়েছে শেখার বহুমুখী বিষয়। এক ঘেয়ে পেশার বাইরে দেশ, রাষ্ট্রের, সমাজের তথা মানুষের কল্যাণে কাজের সুযোগ আছে এই পেশায়। রয়েছে সৃজনশীলতার সুযোগও। একটি রিপোর্টের কারণে অনেক বড় বড় অনিয়ম তুলে ধরে নীতি পরিবর্তনের মত কাজ এই পেশাতেই সম্ভব। যেখানে কঠোর পরিশ্রম বড় হওয়ার বড় সাফল্য বলে মনে করেন শামীমা দোলা।

দোলা মনে করেন, সাংবাদিকের কাজ শুধু বিনোদন দেওয়া কিংবা তথ্যের মাধ্যমে মানুষের ক্ষমতায়ন নয়। সঠিক তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখতে হবে সাংবাদিকদের। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে সম্প্রচার সাংবাদিকতা এখন আর টেলিভিশনের পর্দাতেই সীমাবদ্ধ নেই। নিজস্ব ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও এসব খবর তুলে ধরা হচ্ছে। সেখানে সামান্যতম ভুলের অবকাশ নেই। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষও এখন তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে পড়েছে। এসব ও যাগাযোগ মাধ্যম প্রাথমিক তথ্যের উৎস হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় সাংবাদিকদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

তবে দোলার অভিজ্ঞতা বলছে, পেশাগত উৎকর্ষতায় সেরা যারা, অন্যের অপপ্রচার কিংবা ঈর্ষারও কারণ হয়ে উঠছেন তারা। যে পথে বাড়তি অনেক চ্যালেঞ্জই রয়ে যাচ্ছে নারী সাংবাদিকদের। তবে, লক্ষ্য অটুট রেখে পা ফেলতে হবে সামনের দিকেই। ধারণ করতে হবে ইতিবাচক মানসিকতার।

 

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি