ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

নিউইয়র্ক টাইমস

সৌদি রাজপ্রাসাদে সেই রাতে যা ঘটে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২০, ২১ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১০:৪৮, ২২ জুলাই ২০১৭

যুবরাজ নায়েফের (ডানে) ভবিষ্যত সৌদি বাদশাহ হওয়ার কথা ছিল। এখন সেই দৌড়ে মোহাম্মদ বিন সালমান

যুবরাজ নায়েফের (ডানে) ভবিষ্যত সৌদি বাদশাহ হওয়ার কথা ছিল। এখন সেই দৌড়ে মোহাম্মদ বিন সালমান

সৌদি আরবের পরবর্তী বাদশাহ হওয়ার কথা ছিল মোহাম্মদ বিন নায়েফের। গত ২০ জুন মধ্যরাতে সৌদি রাজপ্রাসাদে এক নাটক মঞ্চস্থ হয়। যার ফলে ক্ষমতার দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন মোহাম্মদ বিন নায়েফ। লাইমলাইটে চলে আসেন বাদশাহ সালমানের ছেলে মোহাম্দ বিন সালমান।

বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও নিউইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে নায়েফের পদত্যাগের নেপথ্যে ওই রাতে যা ঘটেছিল তা স্পষ্ট উঠে এসেছে। সৌদির রাজপরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই রাতে নায়েফকে আটকে রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্রাউন প্রিন্সের পদ থেকে পদত্যাগ করতে চাপ দেয়া হয়। ভোরে তিনি হার মানেন। সৌদি আরবের জনগণ ঘুম থেকে জেগে উঠেই জানতে পারেন যে তারা নতুন একজন ক্রাউন প্রিন্স বা যুবরাজ পেয়েছেন। তিনি আর কেউ নন, বাদশাহ সালমানের ৩১ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান। রাজনৈতিক পর‌্যবেক্ষকরা বলছেন, কাতারের ওপর সৌদির অবরোধ অরোপের বিরোধিতা করেছিলেন নায়েফ। এ কারণে তাকে দ্রুতই সরানো হয়।


তরুণ প্রিন্সের সমর্থকরা তার এই পদোন্নতির প্রশংসা করেন। তারা একে দেখেন একজন উচ্চাভিলাষী নেতার ক্ষমতায়ন হিসেবে। কিন্তু ২১ জুন তাকে এ পদে বসানোর পর থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে মোহাম্মদ বিল সালমানই নায়েফের অপসারণের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এই প্রক্রিয়া ছিল জনগণকে যা বলা হয়েছিল তার চেয়ে ঝঞ্জাময়। রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক টাইমসকে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন।

রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন জানান, রাজতন্ত্রের ধারাবাহিক ক্ষমতারোহনে এই আকস্মিক পরিবর্তন বৈধ করার জন্য কিছু জৈষ্ঠ রাজপুত্রকে বলা হয়েছিল যে, মোহাম্মদ বিন নায়েফ মাদকাসক্ত, তাকে রাজা করা যাবে না। শুধু নায়েফ একা নন, তার ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদেরও বিতাড়িত করা হয়। এরা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তাদের হারিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে তাদের হিমশিম খেতে হয়।

মোহাম্মদ বিন সালমানের ওপর এত বেশি ক্ষমতা অর্পণ করাটা সৌদি রাজতন্ত্রের ঐতিহ্যের পরিপন্থী। রাজতন্ত্র পরিচালিত হয়ে আসছে ঐকমত্য ও প্রবীণদের পরামর্শ মতে।

রাইস ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ক্রিশ্চিয়ান কোটস আলরিচসেন বলেন, ‘একটি বিভাগ এবং তরুণ এক ব্যক্তিকে এত বেশি ক্ষমতা দেয়ায় তার চাচাতো ভাইয়েরা এবং সাবেক বাদশাহদের সন্তানরা বিগড়ে যেতে পারেন। এর ফলে রাজতন্ত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে।’

নিউইয়র্ক টাইমস গত মাসে এক প্রতিবেদনে জানায় যে, মোহাম্মদ বিন নায়েফকে অন্তরীণ করে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন তার চাচাতো ভাই মোহাম্মদ বিন সালমান। এখন মার্কিন কর্মকর্তারা এবং রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা একই তথ্য দিচ্ছেন। তবে সবাই কথা বলেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে। কারণ রাজপরিবারের বিরাগভাজন হতে চান না কেউ।

তবে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রশ্নের জবাবে সৌদি আরবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, নায়েফকে চাপ দিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার তথ্য সঠিক নয়। বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন ক্রাউন প্রিন্সের ওপর প্রথম আনুগত্য প্রকাশ করেন মোহাম্মদ বিন নায়েফ। সেই দৃশ্য ভিডিও করার বায়নাও ধরেন তিনি। নায়েফ অন্তরীণ নন। তার জেদ্দার প্রাসাদে রোজ অগনিত মেহমান যাতায়াত করেন এবং তিনি একাধিকবার বাদশাহ ও নতুন ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে দেখা করেছেন।

সৌদি রাজপরিবারে দ্বন্দ্বটা শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে, যখন বাদশাহ সালমান ক্ষমতায় বসেন এবং তার প্রিয় ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান বিপুল ক্ষমতা দেন। তাকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স বানানো হয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও অর্থনৈতিক কাউন্সিলের দায়িত্বও দেয়া হয় তাকে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোরও দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে।

মোহাম্মদ বিন সালমানের সমর্থকরা তাকে দূরদর্শী নেতা বললেও সমালোচকরা বলছেন, তিনি ক্ষমতালিপ্সু। তিনি ইয়েমেনে ব্যর্থ যুদ্ধে সৌদিকে টেনে নিয়েছেন এবং বহু বেসামরিক লোককে হত্যা করেছেন। কাতারের সঙ্গেও সৌদিকে বিবাদে জড়িয়েছেন তিনি। এই দুই বিবাদ থেকে বের হওয়ার কোনো স্পষ্ট পথ নেই।

যেভাবে বরখাস্ত হন নায়েফ

মার্কিন কর্মকর্তা ও রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, ২০ জুন মক্কার সাফা প্রাসাদে জড়ো হন সিনিয়র প্রিন্স ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। তাদের বলা হয় যে, বাদশাহ তাদেরকে দেখা করতে বলেছেন। তখন রমজান মাস প্রায় শেষের দিকে। রাজকুমাররা তখন ঈদুল ফিতরের ছুটি কাটানোর জন্য বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশে মক্কায় সমবেত হন। সেই সময়টাতেই এই পরিবর্তন আনা হয়।

মধ্যরাতে মোহাম্মদ নায়েফকে বলা হয় যে, বাদশাহে তাকে দেখা করতে বলেছেন। তাকে একটি রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার ফোন কেড়ে নেয়া হয়। তাকে ক্রাউন প্রিন্স এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চাপ দেয়া হয়। প্রথমে তিনি সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। রাত বেড়ে চলে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত আর ২০০৯ সালে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা থেকে গুরুতর আহত হয়ে বেঁচে যাওয়া নায়েফ ক্রমেই মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। প্রত্যুষে নায়েফ পদত্যাগ করতে রাজি হন।

 

এরপরই মোহাম্মদ বিন সালমানকে তার হস্ত চুম্বন করার ভিডিও করা হয়। তিনি নায়েফকে বলেন, ‘আমরা সবসময় আপনার উপদেশ মতো চলব।’ নায়েফ বলেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় তোমার কল্যাণ হোক।’ পরে নায়েফ লোহিত সাগরের তীরে জেদ্দায় তার প্রাসাদে ফিরে যান। এরপর আর বের হতে দেয়া হয়নি তাকে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, কাতারের ওপর অবরোধ অরোপের বিরোধিতা করেছিলেন নায়েফ। এ কারণে তাকে দ্রুতই সরানো হয়।

//এআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি