ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪

স্বরূপে ফিরবে যাত্রাশিল্প (ভিডিও)

আদিত্য মামুন, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:১৩, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩

বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য যাত্রাশিল্প ফিরবে স্বরূপে। আবারও উঠে আসবে সমাজ-অর্থনীতি আর ইতিহাসের নানান অনুসঙ্গ। লুপ্তপ্রায় যাত্রাপালা প্রসঙ্গে এই আকাঙ্খার কথা জানিয়েছেন দর্শক-গবেষকেরা। 

প্রবহমান জীবনের বাঁকে বাঁকে যতো না সমস্যা তার সবই উঠে আসতো যাত্রার সংলাপে। 

সমাজ জীবনের নিগুঢ় বাসনা, মনের অভ্যন্তরে গুমরে কাঁদা অতি গোপন ব্যথা মঞ্চের লাল নীল গোলাপি আলোর আভায় দোলা দিতো সর্বস্তরের মানুষকে। তাই যাত্রাই ছিল জীবনের আবহ। সংলাপ আর সঙ্গীতের সুর হরহামেশাই বাজতো সব মানুষের মুখে মুখে।

দিন বদলেছে। বদল হয়েছে মানুষের রুচি। ধ্রুপদি শিল্পের কাঁধে চেপে আদি বাংলায় ভর করেছে উত্তরাধুনিকতার নামে বহুমাত্রিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতি। আরও আছে দেশিয় মৌলবাদ আর উগ্রবাদীর আস্ফালন। 

সবমিলে যাত্রাশিল্পের গন্তব্য এখন মাল্লা ছাড়া নৌকা।

৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান, সংস্কৃতি-সমাবেশে বিধিনিষেধ কিংবা অপসংস্কৃতির প্রাদুর্ভাবই মূলত যাত্রার অগ্রযাত্রাকে টেনে ধরেছে। ফলে মানুষ থেকে মানুষ হয়েছে বিচ্ছিন্ন। 

কবি ও লোকশিল্প গবেষক ড. তপন বাগচী বলেন, “৬ মাস খোরাকি থাকতো তাহলে ছয় মাস আনন্দে-বিনোদনে কাটাতে পারতো। এখন তার প্রতিদিন কাজ করতে হয়। সকালে যে কাজে যাবে সে কি সারারাত জেগে যাত্রা দেখবে? যাত্রার আয়তন কমিয়ে, অপ্রত্যাশিত নিত্য বর্জন করে এবং দেশী পালাকারের রচিত যাত্রাপালা নিয়ে সান্ধ্যকালীন যদি করা যায় তাহলে হয়তো যাত্রা আমাদের কাছে ফিরে আসবে।”

তাহলে কি যাত্রাশিল্প আর ফিরবে না পুরোনো আভিজাত্যে? প্রশ্ন ছিল দুই বাংলার দুই শিক্ষার্থীর কাছে। 

কোলকাতা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাপস দাস বলেন, “আমাদের সভ্যতা তো গ্রামীণ সভ্যতা। যাত্রা তো সেগুলো দেখায়। সুতরাং এই গ্রামীণ সভ্যতার সঙ্গে এই আরবানাইজেশন যেটাকে আমরা বলছি, তার ফলে যে বিচ্ছেদগুলো ঘটছে সেই বিচ্ছেদের কুফলগুলো আমাদের জানা উচিত। এরজন্য যাত্রাই একমাত্র পথ হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুশীল মালাকার বলেন, “আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে বিরূপতা রয়েছে, সেটি যদি দূর করতে চাই তাহলে আমাদের সংস্কৃতির কাছে ফিরে যেতে হবে। আর সংস্কৃতির কাছে ফিরে যেতে হলে ফিরিয়ে আনতে হবে এই যাত্রাপালা, ভাটিয়ালি গান, সারি গান, বাউল গান।”

আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব আর মানুষের অনাগ্রহে শুধু যে যাত্রাপালাই ক্ষতিগ্রস্ত, এমন নয়। এর সঙ্গে যুক্ত পেশাজীবীরাও আজ দিগভ্রান্ত। 

তাপস দাস বলেন, “যাত্রার সঙ্গে যে প্রফেশানগুলো যুক্ত ছিল, সেগুলো আজ লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সংস্কৃতি নয়, এখানে মানুষের বেঁচে থাকার একটা চাহিদা।”

সুশীল মালাকার বলেন, “ধর্ম সাধারণ মানুষের সংস্কৃতি, আর সংস্কৃতি শিক্ষিত ও মার্জিত মানুষের ধর্ম।”

ধর্মীয় গোঁড়ামির কাছে ধরাশায়ী যাত্রাশিল্পের ঐতিহ্য ফেরাতে তাহলে কী করা দরকার? কিংবা মানবতার বাংলায় সুফিবাদ ও ভাববাদের দর্শন চর্চা কিভাবে বাড়ানো সম্ভব? প্রশ্ন ছিল গবেষকের কাছে। 

লোকজ সংস্কৃতি ও যাত্রাশিল্প গবেষক কবি তপন বাগচি বলেন, “মৌলবাদী চক্র, ধর্মান্ধ চক্র, যারা সংস্কৃতি বিরোধী চক্র তারা যাত্রাকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যাত্রাকে ভয় কেন, ভয় এজন্য যাত্রা সরাসরি কথা বলে।”

বিগত দিনের বিপ্লব, সংগ্রামের হাতিয়ার এই যাত্রাশিল্প। আগামী দিনের আবহমান বাংলার জিয়নকাঠিও গণমানুষের যাত্রাগান। তাই যেকোনো মূল্যে যাত্রার যাত্রাপথের কাঁটা দূর করা এখন সার্বজনীন দায়িত্ব। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি