ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৬ নভেম্বর ২০২৫

হাসিনাকে দিয়ে আক্রমণাত্মক অবস্থানে ভারত!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২১, ৬ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১১:৪৮, ৬ নভেম্বর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কয়েক মাস আগে বিবৃতি দিয়ে ভারত দাবি করে, শেখ হাসিনার বক্তব্য মানেই সেটা দিল্লির বক্তব্য নয়। সব ক্ষেত্রে সে কথাটা সত্যি নয় তা সুবিদিত। বরং ভারতের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বা প্রকাশ্যে যেগুলো বলা সম্ভব নয়, তার অনেক কথাই শেখ হাসিনার মুখ দিয়ে বলানো হচ্ছে– এমনটাই মনে করেন অধ্যাপক বলদাস ঘোষাল।

বিবিসি বাংলাকে এ কথা বলেন দিল্লিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ তথা জেএনইউ-র সাবেক এই অধ্যাপক।

ভারত এখন শেখ হাসিনাকে আরও বেশি করে মুখ খুলতে দিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার পর্যন্ত দিতে দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ড: ঘোষাল বলেন, “আমি তো বলব শেখ হাসিনার এই সাক্ষাৎকারগুলোর মধ্যে দিয়ে ভারতই একটু আক্রমণাত্মক অবস্থান নিতে চাইছে।”

তিনি বলেন, “আসলে বাংলাদেশে সম্প্রতি এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে যেটাকে দিল্লি পরিষ্কার ভারত-বিরোধী পদক্ষেপ বলে মনে করছে। যেমন, সে দেশে পাকিস্তানের সামরিক জেনারেল বা সরকারি কর্মকর্তাদের ঘন ঘন সফর – কিংবা ধরা যাক সেভেন সিস্টার্স নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য।”

“আবার দিল্লিতে অনেকের এমনও ধারণা আছে যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারত নানা কারণে চাপে আছে বলে বাংলাদেশ বোধহয় সেই কোণঠাসা অবস্থারই সুযোগ নিয়ে কিছু ব্রাউনি পয়েন্ট স্কোর করতে চাইছে!”

এই পটভূমিতে বাংলাদেশকে পাল্টা চাপে ফেলার চেষ্টাতেই ভারতে নীতিনির্ধারকদের একটা অংশ শেখ হাসিনাকে সুকৌশলে কাজে লাগাচ্ছেন বলে বলদাস ঘোষালের ধারণা।

তিনি বলেন, “এতে করে দুটো উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছে। প্রথমত, শেখ হাসিনার কথাগুলো বাংলাদেশে কী ধরনের প্রভাব ফেলে বা সরকার কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটা পরখ করে দেখা যাচ্ছে। মানে ইংরেজিতে যাকে বলে টেস্টিং দ্য ওয়াটার। আর দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের হতোদ্যম নেতাকর্মীদেরও একটা বার্তা দেওয়া যাচ্ছে, যে দেখো শেখ হাসিনা দলের হাল ঠিকই ধরে রেখেছেন এবং ভারতও পুরোপুরি তার পাশেই আছে।” 

ফলে অন্যভাবে বললে শেখ হাসিনার এই সব সাক্ষাৎকারের মধ্যে দিয়ে ভারতেরও কিছু স্বার্থ চরিতার্থ হচ্ছে, এমনটাও অনেকে মনে করছেন।

লন্ডন-ভিত্তিক লেখক ও জিওপলিটিক্যাল অ্যানালিস্ট প্রিয়জিৎ দেবসরকার ভারতে শেখ হাসিনার প্রথম দিনটি থেকে আজ পর্যন্ত তার অবস্থানের নানা দিক গভীরভাবে ফলো করছেন এবং তা নিয়ে লেখালেখিও করছেন।
তিনি মনে করেন, শেখ হাসিনা ভারতে পা রাখার পরই তাকে যেভাবে কঠোর গোপনীয়তা আর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল তার সঙ্গে কোভিড লকডাউনের অনেক মিল আছে।

তিনি বলেন, “মহামারির সময় লকডাউনে যেভাবে রাতারাতি সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, মানুষকে বাধ্য হয়ে গৃহবন্দি হতে হয়েছিল তার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ছিল অনেকটা সে রকম। কোভিড নিয়ে সরকার যেমন কোনো ঝুঁকি নিতে পারেনি, শেখ হাসিনার নিরাপত্তার সঙ্গেও কোনো আপস সম্ভব ছিল না।”

প্রিয়জিৎ দেবসরকার বলেন, "কিন্তু লকডাউন তো আর অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না। কোভিড লকডাউন যেমন একটা সময় ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া হয়েছে, শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নিতেই হতো, আর এখন ঠিক সেটাই হচ্ছে।”

গত বছরের ৫ই অগাস্ট ভারতে এসে নামার পর শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে অনলাইনে রেকর্ডেড ভাষণ দেন বেশ কয়েক সপ্তাহ পর।

এরপর তিনি লন্ডনে আওয়ামী লীগের একটি অনুষ্ঠানে 'লাইভ' ভাষণ দেন। তারপর একে একে 'সিগনালে'র মতো মেসেঞ্জার প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে বা ইউটিউবে লাইভ এসে তিনি একের পর এক ভাষণ দিতে শুরু করেন।

যথারীতি তার এই সব বক্তব্য প্রচারকে কেন্দ্র করে দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে কূটনৈতিক অস্বস্তি বাড়তে থাকে। তবে দিল্লি কখনোই তার মুখে রাশ টানেনি, বরং ধীরে ধীরে ‘লাগাম’ শিথিল করা হয়েছে।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি