ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

৬৭ বছরে পা দিল ইত্তেফাক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৩৪, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ০৯:৩৭, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

ঐতিহ্যবাহী সংবাদপত্র দৈনিক ইত্তেফাক আজ পা দিল ৬৭ বছরে। ১৯৫৩ সালের আজকের এই দিনে যাত্রা শুরু করে সংবাদপত্রটি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দৈনিক ইত্তেফাক হয়ে উঠেছে গণমানুষের মুখপত্র। দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন, পাঠকদের আস্থা ও সীমাহীন ভালোবাসাই ছিল গণমাধ্যমটির সুদীর্ঘ পথচলার শক্তি ও সাহস।

দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের সামরিক শাসক দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। সে সময়ে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আপস করলে সম্পাদক মানিক মিয়া ইত্তেফাক প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি এবং তার চেতনায় উদ্বুদ্ধ সাংবাদিক শ্রেণি জনমানুষের সংবাদপত্রের প্রতি যে বিশ্বাস তার সঙ্গে আপস করেননি। তিন বছর পত্রিকা প্রকাশ বন্ধ রেখেছিলেন। পত্রিকার সাংবাদিকরাও অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করেছিলেন কিন্তু কেউই মাথা নোয়ায়নি। মানিক মিয়ার আদর্শের প্রতি প্রত্যেকে সামরিক জান্তা ও স্বৈরাচারী শাসকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নির্ভীক সাংবাদিকতার যে উদাহরণ তিনি সৃষ্টি করে গেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত।

১৯৬৬ সালের ৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগ ৬ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দাবি করে। দৈনিক মর্নিং নিউজ, দৈনিক পাকিস্তান ও দৈনিক আজাদ ৬ দফার বিরোধিতা করে। দৈনিক ইত্তেফাক ৬ দফার পক্ষে অবস্থান শুধু নয়, অন্যতম প্রচারকের ভূমিকা পালন করে। ১৬ জুন ১৯৬৬ ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন গ্রেফতার হন ও পরদিন পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি নিউ নেশন প্রেসও বন্ধ করে দেয়। প্রায় দশ মাস পর ১৯৬৭ সালের ২৯ মার্চ মানিক মিয়া মুক্তি পান। এ সময় দৈনিক ইত্তেফাক প্রকাশ করার জন্য সম্পাদকের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়।

কিন্তু সম্পাদক সাফ জানিয়ে দেন—‘ইত্তেফাক যদি তার ঐতিহ্য অনুসরণ করে প্রকাশিত হতে না পারে তবে তিনি সে ইত্তেফাক প্রকাশে আগ্রহী নন।’ অবশেষে প্রেস মুক্ত হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাক পুনর্জন্ম লাভ করে। ১৯৬৯ সালে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া আকস্মিক ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর ইত্তেফাক প্রকাশনা অব্যাহত থাকে এবং বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ও স্বাধীনতা আন্দোলনে সরাসরি সমর্থন দেয় ও সম্পাদকীয় সচিত্র প্রতিবেদন, ফিচার প্রকাশপূর্বক নানাভাবে সমর্থন দেয়, গড়ে ওঠে জনমত। বিশেষ করে ১৯৭০ সালের নির্বাচন, আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানিদের অনীহা ও ষড়যন্ত্র এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ ও সর্বাত্মক অসহযোগের আহ্বান থেকে ২৫ মার্চ রাতে আক্রান্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাক অনন্য সাধারণ ও গৌরবময় ভূমিকা পালন করে।

সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে সময়ের দাবি মেটানো। সেই দিক থেকে দৈনিক ইত্তেফাক তার প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সময়ের দাবি মিটিয়ে এসেছে। সহজ করে বললে, মানুষের অধিকরের কথা বলে এসেছে। আজ এত বছর পরে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপ্ন-লালিত যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, দৈনিক ইত্তেফাক সেই জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিল।
এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি