ঢাকা, শনিবার   ২১ জুন ২০২৫

ইসরায়েলে কেন অনেক ভারতীয়, এর নেপথ্যে কী?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১১, ২১ জুন ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার ভারতীয় কর্মী ইসরায়েলে আছেন। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি বলেই অনুমান করা হয়। কারণ, ২০২৩ সালে ভারতের সঙ্গে ইসরায়েলের চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায়, বহু ভারতীয় কর্মী সেখানে গেছেন। খবর বিবিসির। 

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এরমধ্যে ২০২৫ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত, ৬,৬৯৪ জন ভারতীয় কর্মী ইসরায়েলে পৌঁছেছেন। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়োগ করেছে। 

পাশাপাশি ১৯৫টি ইসরায়েলি কোম্পানিতেও ভারতীয় কর্মী নিয়োগ হয়েছে। নির্মাণকর্মীদের মধ্যে বেশিরভাগই নির্মাণ খাতে নিযুক্ত, কাঠামো নির্মাণ, লোহা বাঁকানো এবং প্লাস্টার করার মতো কাজ করেন।

এরপর গতবছর ইসরায়েল নির্মাণকর্মী এবং কেয়ার গিভার মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার ভারতীয় কর্মী সে দেশে পাঠানোর অনুরোধ জানায় ভারতকে। তাদের মধ্যে কতজন ইসরায়েলে কাজে যোগ দিয়েছেন, সে বিষয়ে জানা যায়নি। 


ইন্ডিয়ান ইকনোমিক ট্রেড অর্গানাইজেশন-এর প্রেসিডেন্ট ড. আসিফ ইকবাল বলেছেন, ভারত থেকে মূলত কেয়ার গিভারের কাজ করেন তারা। মেল নার্স, নার্সিং অ্যাসোসিয়েট হিসেবে ইসরায়েলে ভারতীয়দের চাহিদা রয়েছে।

তিনি বলেছেন, ইসরায়েলে প্রবীণ নাগরিকদের দেখাশোনা করার মানুষের অভাব। তাই ভারত থেকে, বিশেষত দক্ষিণ ভারত থেকে বহু ব্যক্তি কেয়ার গিভারের কাজ করেন। এরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

দ্বিতীয় যে সেক্টরে এখন কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। সেটা হলো, কন্সট্রাকশন। ইসরায়েলের বিভিন্ন অংশে ভবন তৈরি, মেরামতের কাজে বহু ভারতীয় কর্মী নিযুক্ত। ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশ পুনর্গঠনের জন্যও কর্মীদের নিয়োগ করা হচ্ছে। তবে এই কর্মীদের সংখ্যাটা নার্সের তুলনায় অনেকটাই কম, জানান আসিফ ইকবাল।

এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক হলেও কর্মী রয়েছেন। 

ইসরায়েলকে কর্মক্ষেত্র হিসাবে বেছে নেওয়ার কী কারণ, জানতে চাইলে ম্যাঙ্গালরের বাসিন্দা পিএন লরেন্স বলেন, এখানে মাইনে অন্যান্য অনেক দেশের চাইতে ভাল। আমি ইসরায়েলে ১৩ বছর কেয়ারগিভারের কাজ করার পর সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে এসেছিলাম, কিন্তু ইসরায়েলে ফিরে যাব ঠিক করেছি।

পিএন লরেন্স আরও বলেন, যুদ্ধের কথা মাথায় রেখেও বলব, ইসরায়েল কাজের জায়গা ভাল। এখানে সরকার বিদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্যবিমা-সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেয়, যা অন্য দেশে নেই। এখানে আমরা যা আয় করি, তার উপর ভারতে থাকা আমাদের পরিবার নির্ভর করে। কোথায় যাব?

তেল আবিবে বাস করেন বেন্নি নাইডু। পেশায় ব্যবসায়ী তিনি। ম্যাঙ্গালোর থেকে ইসরালেয়ে এসেছিলেন ৯০-এর দশকে।

তিনি বলেছেন, তেল আবিব বা তার নিকটবর্তী অঞ্চলেই ভারতীয়রা বাস করেন। যারা কেয়ার গিভার তারা গোটা সপ্তাহ কাজ করার পর সপ্তাহান্তে ভাড়া করা বাড়িতে ফেরেন। সেই সময় আমার দোকানে আসেন কথাবার্তা হয়। আমরা সমস্ত উৎসব একসঙ্গে উদযাপন করি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা সকলেই উদ্বেগে আছি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সে দেশে ৮৫ হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইহুদি বাস করেন। ভারত থেকে ৫০ থেকে ৬০-এর দশকে ইহুদিদের অনেকে ইসরায়েলে যাওয়া শুরু করেন।

মূলত মহারাষ্ট্র, তাছাড়া কেরালা, কলকাতা থেকেও ইহুদীরা সেখানে বসতি স্থাপন শুরু করেন। সাম্প্রতিক সময়ে মণিপুর ও মিজোরাম থেকেও সেখানে অভিবাসন দেখা গিয়েছে।

ষাটের দশকে মহারাষ্ট্র থেকে ইসরায়েলে গিয়েছিলেন আইস্যাক ওয়াস্কার। তিনি বলেন, ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের অনেকেই ইসরায়েলে চলে এসেছেন আমাদের মতো। গত কয়েক বছরে এখানে ভারতীয় কর্মীরাও বিপুল পরিমাণে আসা শুরু করেছেন।

আগে কেয়ার গিভারের চাহিদা বেশি থাকলেও এখন নির্মাণকর্মীদের চাহিদা বেড়েছে। তার কারণ গাজা নিয়ে সংঘাতের কারণে ফিলিস্তিনিরা এখানে কাজ করতে পারেন না।

সরায়েলস্থিত ইন্ডিয়ান জিউইশ কমিউনিটি সেন্টারের প্রেসিডেন্ট মি. ওয়াস্কার জানিয়েছেন, তার পরিচিত কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে সাম্প্রতিক হামলায়। তিনি বলেন, "আমার পরিচিত কয়েকজনকে দিন কয়েক আগে হারিয়েছি। তার মধ্যে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়া তরুণপ্রজন্মও আছে।"

তার নাতনি স্তাভ সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, "আমাদের এখানে মেয়েদেরও সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। আমি দুই বছর আগে আমার মেয়াদ শেষ করেছি। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি হয়তো আবার যেতে হতে পারে।"

এই সমস্ত কিছুর মাঝেই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন মি. নাইক। তিনি বলেন, "আমি ঠিক করেছি পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে ভারতে ফিরে যাব। সেখানেই কাজ খুঁজে নেব। আগে বছরে একবার অন্তত দেশে যেতে পারতাম কিন্তু একের পর এক সংঘর্ষের কারণে সবকিছু অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। এখন ভয় হয়।"

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি