ঢাকা, মঙ্গলবার   ১১ নভেম্বর ২০২৫

লিঙ্গ, অধিকার ও ইচ্ছাপূরণ নিয়ে দক্ষিণ এশিয় আঞ্চলিক সম্মেলন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:১২, ২০ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ০০:১২, ২০ মার্চ ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘লিঙ্গ, অধিকার ও ইচ্ছাপূরণ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সম্মেলন: মেগা শহরে ন্যায়বিচারের অভিগম্যতা ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আঞ্চলিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার শুরু হয়ে সম্মেলনটি শেষ হবে আজ মঙ্গলবার।

ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ডের দূতাবাসের সহায়তায় সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে ‘সখি প্রকল্প’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, মেরিস্টোপস, বাংলাদেশ উইমেন্স হেলথ কোয়ালিশন এবং আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের বাস্তবায়িত এক সমন্বিত প্রকল্পের নাম সখি প্রকল্প।

সম্মেলনে জানানো হয়, আয়োজনের লক্ষ্য মেগা শহরে ন্যায় বিচারের প্রাপ্যতা বিশেষত লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে এ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এর ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়া নিয়ে অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান এবং বুঝে ওঠা কিভাবে বহু-ক্ষেত্রীয় হস্তক্ষেপ স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক নিরাপত্তা, গোষ্ঠীভিত্তিক সংহতি তৈরি, জীবিকা এবং আশ্রয় ন্যায়বিচারের সুযোগ বাড়াতেও পারে তার আয়োজন রয়েছে। এছাড়াও, এ সম্মেলন সহায়তা করবে আন্ত আঞ্চলিক শিক্ষা এবং কিভাবে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ন্যায়বিচার এবং সুস্বাস্থ্য প্রাপ্যতার সুযোগ বৃদ্ধি করতে পারে এটা নিয়ে।

১৯ থেকে ২০ মার্চ এ দু’দিনব্যাপী সম্মেলন আইনজীবী, স্বাস্থ্য বিষয়ক পেশাদার, গবেষক, সরকারি কর্মকর্তা, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, সেবাদাতা, আইন বিষয়ক পরামর্শক, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের একত্রিত করেছে।

সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান এবং সাম্মানিক অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদাল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারেথা কুয়েলিনারি।

শহরে ন্যায়বিচার প্রাপ্যতার সুযোগ নিশ্চিতে সফলতার গল্প, শহরে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সুযোগ ও সেবার বিদ্যমান অভাব এবং আইনি ক্ষমতায়নের উদ্যোগের ওপর আলোকপাতের প্রতিকূলতা ও সুযোগের পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের শুরু হয় ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ এবং শহরে বসবাসকারী নারীদের ন্যায়বিচারে অভিগম্যতার নিশ্চয়তার ওপর জোর দেন। তিনি আশা ব্যক্ত করেন যে, এ সম্মেলন এ বিষয়ে বহুমাত্রিক ও বহুপাক্ষিক ভূমিকার অবতারণা করবে। ড. আখতারুজ্জামান লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাবিদদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। 

সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদাল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারেথা কুয়েলিনারি বলেন, ‘মেগা শহরে বসবাসকারী নারী ও শিশুরা বহুমাত্রিক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে, সহিংসতার ঝুঁকি তাদের স্বাস্থ্য অধিকার ও সুযোগের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। লিঙ্গ সমতা অর্জন ও সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এক্ষেত্রে আমরা কাউকেই পেছনে ফেলে রাখবো না।সখি প্রকল্পকে সহায়তা করতে পেরে আমরা গর্বিত”।

ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন ‘দ্য কনটেক্সট অব দ্য সিটি: মিটিং জাস্টিস নিডস অ্যান্ড গ্যাপস’ শীর্ষক অধিবেশনের মাধ্যমে সম্মেলনের সূচনা করেন। এরপর ‘জাস্টিস, রাইটস অ্যান্ড চয়েজেস: আরবান কনটেক্সট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফেরদৌস জাহান। ব্লাস্টের কনসালট্যান্ট ব্যারিস্টার ফারিয়া আহমেদ ‘সখি: ওয়ান স্টপ হেলথ অ্যান্ড লিগ্যাল সার্ভিসেস ইন দ্য কমিউনিটি’ নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস জাহান বলেন, ‘নগরায়ন বাড়ছে এবং নগরের দারিদ্রতা বহুমাত্রিক। নগরায়নের সাথে সাথে সেবা সমূহ বাড়ছে না এবং মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর মধ্যে বিশেষ করে বিচার ব্যবস্থায় অভিগম্যতা আরো কঠিন। এই সেবা বৃদ্ধির জন্য সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে আরো কাজ করা প্রয়োজন।’

গ্লোবাল লিগ্যাল এমপাওয়ারমেন্ট নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মার্লন জে. ম্যানুয়েল আইনি ক্ষমতায়নের আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করেন এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ‘আইনজীবী ও সামাজিক ন্যায়বিচার’ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। এরপর বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নিযুক্ত নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারেথা কুয়েলিনারি। অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটে অধিবেশনের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. মো. রহমত উল্লাহ’র বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে।

বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আইন অনেক শক্তিশালী এবং এর সঠিক প্রয়োগ প্রয়োজন। যদি আইন অনাচারের সৃষ্টি করে তার বিরুদ্ধাচারণ করার দায়িত্ব আমাদের এবং অবশ্যই এর প্রতিকার বের করতে হবে। এটা আমাদের ধরণ হওয়া উচিৎ।  যদি আইনের অমানবিক প্রয়োগ হয় তবে তা থামানো প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করলে মানুষের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনবে ও অধিকার নিশ্চিত হবে এবং তবেই, মানুষ আইনের ওপর আস্থা রাখবে।’

দ্বিতীয় পর্বের মূল বিষয়বস্তু ছিলো ‘শহরে লিঙ্গ ও ন্যায়বিচারের সুযোগ’। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এবং বর্তমানে ব্লাস্টের প্রধান আইন উপদেষ্টা বিচারপতি নাজমুল হক।  

উক্ত সেশনে গুরুত্বপূর্ণ প্যানেল আলোচনারও আয়োজন করা হয় যেখানে বক্তা হিসেবে ছিলেন ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অর্গানাইজেশনের (এনএলএএসও) উপপরিচালক আবিদা সুলতানা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপকমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ সরকারের নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সমন্বয়কারী ড. বিলকিস বেগম, মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী ইব্রাহিম মিয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান প্রমুখ।

 

বক্তব্যে জাতীয় আইন সহয়তা সংস্থার উপপরিচালক আবিদা সুলতানা বলেন. ‘ন্যয় বিচারে অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে এ সংস্থা দেশব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে পাশাপাশি, আইনি বিষয়ে সচেতনতা তৈরি এবং দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আদলতে প্যানেল আইনজীবীদের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে আসছে।’     

আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে সবার জন্য আইনগত সেবা, আইনজীবী, আইনের লোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ‚মিকা এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের মতো বিষয়গুলো।

মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের প্রকল্প সমন্বয়ক ইব্রাহিম মিয়া তার প্রস্তাবনায় বলেন, ‘নগরের জনগোষ্ঠীকে দ্রুত আইনি প্রতিকারের জন্য গ্রাম আদলত আইনের ন্যায় সিটি কর্পোরেশন আইন প্রয়োজন। যার মাধ্যমে নগরের জনগোষ্ঠীর ছোট ছোট বিরোধ দ্রæত সমাধান করা সম্ভব।’

স্বাস্থ্যসেবা, জীবিকা ও আশ্রয়ের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে তৃতীয় অধিবেশন, যেখানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেল্থ বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক ড. সাবিনা ফায়েজ রশিদ। 

গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ এবং সেসব অঞ্চলে চলমান বৈষম্য দূর করতে স্বাস্থ্যসেবাসহ জীবিকা ও আশ্রয় নিশ্চিত করতে কি কি প্রয়োজন এবং সম্ভাব্য কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে সেগুলো নিয়ে অধিবেশনে আলোচনা হয়। এ আলোচনায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ.এস.এম আমানুল্লাহ, এনজিও ও স্টেকহোল্ডার পার্টিসিপেশন ইউনিট ডা. আয়েশা আফরোজ চৌধুরী, ফ্রিল্যান্স কনসালটেন্ট ড. জুলিয়া আহমেদ, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডক্টর অব পেডিয়াট্রিক মেডিসিন, জেন্ডার, ভারতের কর্ণাটকস্থ স্ত্রী জাগ্রæতি সমিতির সচিব গীতা মেনন এবং ভারতের আহমেদাবাদের সেন্টার ফর স্যোশাল জাস্টিসের রিসার্চ ফেলো তনয় গান্ধী প্রমুখ।    

দিনের চতুর্থ ও শেষ অধিবেশনে সম্মতির অধিকার নিয়ে আলোচনা করেন কেয়ার বাংলাদেশের নারী ও বালিকা ক্ষমতায়ন বিষয়ক প্রোগ্রামের পরিচালক হুমায়রা আজিজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন প্রমুখ।   

গীতা মেনন বলেন, “চরম বৈষম্যের ক্ষেত্রে আমাদের কি করণীয়, যেখানে বিভিন্ন বর্ণ ও গোষ্ঠী প্রতিবন্ধকতার ভ‚মিকা পালন করে?” বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতালগুলোর দায়িত্ব বা সেবা নিশ্চিৎকরণ নিয়ে কথা বলেন রশনা ইমাম, যাতে করে হাসপাতালগুলোর জরুরি সেবা ও সুনাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিৎ হয়। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার এমন সব মানুষদের জরুরি সেবা নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেয়া পদক্ষেপগুলোর উপর আলোকপাত করেন আয়েশা আফরোজা।      

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন অব ল, মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্সের (আইএনপিএএলএমএস) মেডিকো লিগ্যাল এক্সপার্ট বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মো. মুজাহিরুল হক। স্বাস্থ্য ও অধিকারের ব্যাপারে সম্মতির অধিকারই ছিলো আলোচনার মুখ্য বিষয়।  

 

কৌশলগত এবং অভিনব উপায়ে আইন ও নীতিমালার অবকাঠামোগত পরিবর্তনকে প্রাধান্য দিয়ে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোতে ন্যায়বিচার, স্বাস্থ্যসেবা ও অধিকার বিষয়ক বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য পথ খুঁজে বের করাই ছিলো উল্লেখিত সম্মেলনের প্রত্যাশিত সাফল্য।  

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি