ঢাকা, মঙ্গলবার   ০১ জুলাই ২০২৫

৩০ বছর ধরে গৃহবন্দি, শিকলে বাঁধা জীবন

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৯:৩০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১৯:৩৩, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

মাটির ঘরে শেকল বন্দি নিপেন চন্দ্র পাল। ছবি- একুশে টেলিভিশন।

মাটির ঘরে শেকল বন্দি নিপেন চন্দ্র পাল। ছবি- একুশে টেলিভিশন।

Ekushey Television Ltd.

নওগাঁর রাণীনগরে গত ৩০ বছর ধরে গৃহবন্দি আর শিকলে বাধাঁ জীবন কাটছে মানসিক প্রতিবন্ধি নিপেন চন্দ্র পালের। উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নের ভান্ডারা গ্রামে ৪২ বছরের ওই ব্যক্তিকে মাটির বাড়ির একটি অন্ধকার ঘরে ৩০ বছর ধরে বন্দি করে রেখেছে তার পরিবার। সেখানেও তার অস্বাভাবিক আচরণ বেড়ে গেলে গত ৫ বছর ধরে তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। 

মূলত চরম অর্থাভাবের কারণেই এমন জীবন কাটছে তার। প্রতিবন্ধি নিপেনের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো সে ভাল হয়ে যাবে বলেই দাবি তার পরিবারের।

ওই গ্রামের মৃত নরেশ চন্দ্র পালের ২ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে নিপেন চন্দ্র পাল দ্বিতীয়। বড় ভাই নিতাই চন্দ্র পাল দিন মজুরী করে এবং অপর দুই বোন স্বামীর সংসার নিয়ে কোনওভাবে তাদের অতিবাহিত করেন। ছোটবেলাতেই বাবা হারান নিপেন। তবে ছোট থেকেই নিপেন মেধাবী ছিলেন গ্রামের স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ১২ বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময় হঠাৎ করেই নিপেনের মাঝে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করে করে তার পরিবার। ওই বয়সেই সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। 

এসময় নিপেন মানুষকে মারপিট, গালিগালাজ করা, ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে দেওয়াসহ নানা ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। পরিবারের পক্ষ থেকে জমি-জমা যেটুকু ছিল তা বিক্রি করে তার চিকিৎসা করানো হয়। একপর্যায়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেয় তৎকালীন চিকিৎসকরা। কিন্তু গরীব পিতা-মাতা ও পরিবারের পক্ষে তার আর চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। তখন কিশোর নিপেনকে মাটির ঘরে বন্দি করে রাখা হয়।  

এভাবেই কেটে যায় কিছুদিন। তাকে বিয়ে দিলেই ভাল হয়ে যাবে- গ্রামের ঠাকুর-কবিরাজের এমন পরামর্শে নিপেনকে বিয়ে দেওয়া হয় একই এলাকার শিখা রানী পালের সঙ্গে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। উল্টো নিপেনের ঘরে এখন ৭ বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে। তাই দিন মজুর করেই উভয় সংসার চালাতে হয় বড় ভাই নিতাই চন্দ্র পালকে। যাতে নিপেন ও তার স্ত্রী শিখা রানীকে বিধবা মা আরতি বালাসহ ছোট একটা বাড়িতে গ্রামের লোকজনের সহায়তায় কোনওভাবে দিন কাটছে তাদের। এঅবস্থায় অর্থের অভাবে নিপেনের চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে যায়।

মাটির ঘরে শেকল বন্দি নিপেন চন্দ্র পাল। ছবি- একুশে টেলিভিশন।

নিপেনের বড় ভাই নিতাই চন্দ্র পাল বলেন, ১২ বছর বয়সে নিপেনকে ঘরে বন্দি করে রেখেছি। এক সময় চিকিৎসা করতে পারলেও বর্তমানে অর্থের অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারছি না। দিন দিন নিপেনের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ঘরের মধ্যেই তার অসুখ বেড়ে গেলে বাধ্য হয়েই তাকে গত ৫ বছর ধরে লোহার শিকলে বেঁধে ঘরের মধ্যেই আটকে রেখেছি।

এদিকে নিপেনের স্ত্রী শিখা রানী পাল বলেন, আগে পাগলামি কম থাকলেও দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থের অভাবে আমার স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে উন্নত চিকিৎসা করানো যেতো। 

তিনি আরও বলেন, এক মেয়েকে নিয়ে বর্তমানে আমি মানবেতর জীবন-যাপন করছি। সবকিছুর জন্য মানুষের কাছে হাত বাড়াতে হচ্ছে। তাই আমার স্বামী নিপেন চন্দ্রকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলেতে সমাজের বিত্তবানসহ সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু বলেন, আমি নিপেনের বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু কেউ তার সহযোগিতার জন্য লিখিতভাবে জানায়নি। তবুও আমি তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করবো। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে নিপেনের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও তার পরিবারকে সহায়তা করার প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি