ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪

লক্ষ্মীপুরে স্কুলছাত্র শিমুল হত্যায় ৬ জনের যাবজ্জীবন

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৫:৩৭, ৯ নভেম্বর ২০২৩

লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে মো. রবিউল আউয়াল শিমুল (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রকে গুলি করে হত্যার দায়ে ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।  

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বশিকপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে মাসুদুর রহমান ওরফে কালা মাসুদ (৩২), দিঘলী ইউনিয়নের উত্তর জামিরতলী গ্রামের নুর মোহাম্মদ লিটন (৩৮), গোবিন্দখিল গ্রামের মৃত ওমর ফারুকের ছেলে শাহরিয়ার রাশেদ ওরফে লন্ডনি রাশেদ (৩৩), চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামের মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে ইলিয়াছ (৩৫), পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের বেলালের ছেলে সাদ্দাম (৩১) ও একই এলাকার পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন সাদ্দাম ওরফে বিড়ি সাদ্দাম (৩১)।

এরা সবাই সন্ত্রাসী জিসান বাহিনীর সক্রিয় সদস্য।  

অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় এ মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম (৩১)।

জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রায়ের সময় শুধুমাত্র ইলিয়াস আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা পলাতক।

ভিকটিম শিমুল চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কাজী মামুনুর রশীদ বাবলুর ভাগিনা। রাজনৈতিক বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয়।

মামলার এজাহার সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীরা রবিউল আউয়াল শিমুলকে তার নানার বাড়ি থেকে চন্দ্রগঞ্জের দেওপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের পাশে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে মরদেহ ফেলে যান। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। 

এ ঘটনায় শিমুলের মামা কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু বাদী হয়ে ৫ মে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

আদালত সূত্রে জানা গেছে, হত্যা মামলাটি প্রথমে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) তদন্ত করে ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট আদালতে প্রতিবেদন দেয়। এতে চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদনের ব্যাপারে আলাদতে নারাজি দেন বাদী। 

এরপর মামলাটি নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করে। তদন্তে সাতজন আসামিকে অভিযুক্ত করে ২০২০ সালের ৪ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন পিবিআই নোয়াখালীর সে সময়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. আনোয়ার উল ইসলাম৷ 

তদন্তে উল্লেখ করা হয়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাজী মামুনুর রশিদ বাবলুর সঙ্গে চন্দ্রগঞ্জের ওই সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী যুবদল নেতা জিসানের বিরোধ ছিল। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল রাতে জিসান বাহিনী বাবলুর বাড়িতে হানা দেয়। এসময় শিমুল তার মা পেয়ারা বেগমের সঙ্গে নানার ঘরে বসে নাস্তা করছিলেন। সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি টের পেয়ে শিমুল দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ঘটনার সূত্রপাত মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। ওই রাতে চন্দ্রগঞ্জের দেওপাড়া গ্রামে বন্দুকযুদ্ধ ও সংঘর্ষ এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ওই রাতেই জিসান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাজী বাবলু বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে তুমুল বন্দুকযুদ্ধ হয়। 

জিসান বাহিনীর সন্ত্রাসীরা কাজী বাবলুকে হত্যার উদ্দেশে তার বাড়িতে হানা দিয়েছিল। কিন্তু তাকে না পেয়ে তার ভাগিনা শিমুলকে হত্যা করা হয়। এর প্রতিশোধ হিসেবে বাবলু বাহিনীর সদস্যরা জিসানের শেল্টার দাতা চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে আগুন দেন। এতে ঘরের ভেতরে থাকা তোফায়েলের নাতি প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ফরহাদ হোসেন মামুন (১৬) আগুনে পুড়ে মারা যায়।

সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী ঘটনার রাতে তোফায়েল আহমেদ ও কাজী বাবলুর ছোট ভাই কাজী রাজুসহ সাতজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন অন্তত ২০ জন। পুরো জেলাজুড়ে তখন আতঙ্কের জনপদ ছিল চন্দ্রগঞ্জ এলাকা। পরে জিসান বাহিনীর প্রধান যুবদল নেতা জিসান র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি