ঢাকা, সোমবার   ১৮ আগস্ট ২০২৫

৬ মাসে ২৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি  

প্রকাশিত : ২২:১৪, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ১০:৪৯, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

সঞ্চয়পত্রের বিক্রি হু হু করে বাড়ছে। ব্যাংকের আমানতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সুদ মিলায় বাড়ছে বিক্রি। ব্যাংকে জমানো টাকা তুলে অনেকে খাটাচ্ছেন সঞ্চয়পত্রে। ফলে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে পুরো অর্থবছরের জন্য যে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে, মাত্র ছয় মাসেই তার প্রায় সমান ঋণ নিয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থা থেকেও সরকারের ঋণ বাড়ছে। মূলত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।    

চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে এক লাখ ২৬ হাজার ২৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। তবে আদায় হয়েছে ৯৭ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আদায় কম হয়েছে ২৮ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। আবার বিদেশি সহায়তা ছাড়ও আশানুরূপ হারে বাড়ছে না। কারণ, বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে তুলনামূলক বেশি সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার নিয়েছে ২৪ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা, অর্থাৎ পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ দশমিক ৪১ শতাংশ ঋণ নেওয়া হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় নিট বিক্রি বেশি হয়েছে এক হাজার ১৭০ কোটি টাকা, যা প্রায় ৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্রে সরকারের নিট ঋণ ছিল ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে ছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। ব্যাংক ব্যবস্থায় যেখানে মোট ঋণ রয়েছে ৯২ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। গত জুনের তুলনায় যা তিন হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা বেশি।

প্রসঙ্গত, মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের নগদায়ন বাবদ আসল পরিশোধ বাদ দিয়ে সরকারের নিট ঋণের হিসাব করা হয়।

ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সঞ্চয়পত্রের ব্যাপক বিক্রির ফলে টাকা ওই দিকে চলে যাচ্ছে। এতে করে ব্যাংকগুলোকে বাধ্য হয়ে সুদহার বাড়াতে হচ্ছে। আবার এ প্রবণতার ফলে সরকারের সুদ ব্যয়ও বাড়ছে।

তিনি বলেন, একজন ব্যক্তির সঞ্চয়পত্র কেনার যে সীমা রয়েছে, তা যথাযথভাবে পরিপালন হচ্ছে কি-না, খতিয়ে দেখা উচিত।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণের সুদহার অনেক কম থাকে। সঞ্চয়পত্রের তুলনায় ব্যাংকের সুদহারও অনেক কম। ব্যাংক থেকে সরকার বর্তমানে সাড়ে ৩ থেকে ৮ শতাংশ সুদে ঋণ পেলেও বাধ্যবাধকতার কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে ১১ শতাংশের বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। আর এ কারণে সরকারের বাজেটের বার্ষিক ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত হয়ে উঠেছে এখন সুদ ব্যয়। সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানোর জন্য ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে জোরালো দাবি উঠলেও ভোটের আগে তা করেনি সরকার। গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সঞ্চয়পত্রে সুদ কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ব্যাংকগুলো ডিসেম্বরে গড়ে ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ সুদে আমানত নিয়েছে। অথচ সঞ্চয়পত্রে টাকা রেখে আগের মতোই ১১ শতাংশের বেশি সুদ পাওয়া যাচ্ছে। আর ব্যাংকে মেয়াদি আমানত রাখলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে ৭ থেকে ৮ শতাংশ। অবশ্য আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকা অনেক ব্যাংক ৯ শতাংশ বা তার বেশি সুদ দিচ্ছে। আগের মাস নভেম্বরে আমানতে গড় সুদহার ছিল ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এদিকে, ডিসেম্বরে ঋণের গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর আগে সুদহার ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে গত ১ জুলাই থেকে মেয়াদি আমানতে ৬ শতাংশের বেশি সুদ না দেওয়া এবং সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি। যদিও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি; বরং নির্বাচনের পর এখন সুদহার বাড়ছে।

এসি

   


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি