ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

দাউদ হায়দারের চারটি কবিতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৩১, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

দাউদ হায়দার ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৪ সালে নির্বাসিত হন তিনি বর্তমানে জার্মানিতে বসবাস করছেন তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে জন্মই আমার আজন্ম পাপ, সম্পন্ন মানুষ নই, যে দেশে সবাই অন্ধ প্রভৃতি

 

মিছিলে তোমার মুখ

মিছিলে তোমার মুখ ছিলো সেদিনের রক্তগঙ্গা রাজপথে

গ্রামকে গ্রাম উজাড় করে অবশেষে এইখানে এসে কোন মতে

বাঁধলে কঠিন বুক পরম সাহসে; হৃদয়ে আশা দোলে; যেন সব

সম্রাজ্ঞী স্বপন

অথবা বিধাতার স্বর্গীয় শান্তি খোঁজো রাত্রিদিন এই দারুণ মিছিলে। কখন

যে পাপময় বাতাস বয়ে গেল গাছের ডালে; একটু চোখ তুলে দেখলেও

না তুমি–

বরং বললে; “এখানে নিবিড় ভালবাসা আছে অথচ কি যেন নেই—

হায় আমার বাংলা আমার জন্মভুমি!”

—বলে সেই যে হারিয়ে গেলে ফিরে তাকালেও না আর–

জানিনা একি অপার মমতা যে হৃদয়ে তোমার!

 

একদিন কেউ কাউকে চিনবে না

সবই চলে যায় সবই চলে যাবে একদিন

তবু কেউ কারও মুখ দেখবো না সঠিক

অস্পষ্ট ভালবাসা বরং থেকে যাবে ইতস্ততঃ

আজীবন ইচ্ছেগুলো ভেসে যাবে বাতাসে নীলিমায়

চোখে চোখে চোখ রাখলে কেউ কাউকে চিনবো না

ভুল করে পাশাপাশি হেঁটে গেলে কেউ কাউকে দেখবো না –

একদিন শরীরে শরীরে মিশে যাবো

একদিন জীবন সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো

একদিন মিছিল থেকে চলে যাবো মরণ ভবনে

একদিন ডেকে ডেকে চলে যাবে অলীক ঠিকানায়

একদিন নির্ভুল নিয়মে দাঁড়াবো মুখোমুখী

একদিন আমি তুমি চলে যাবো কালের আঙিনায়

একদিন তবু কেউ কাউকে চিনবো না!

 

   আমার পিতাকে

মুমূর্ষু পিতার সংসারে আমি এক নির্বোধ বালক

যেন। আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না কোনো কালেই; জানেন

তিনিই শুধু। যার কোলে-পিঠে মানুষ আজীবন; তিনি এই পৃথিবী-লোক

ছেড়ে এখন কোথায় যে ছিটকে পড়ে আছেন

তা বলতেও পারিনা সহসা ৷ অথচ বাড়িতে তাকে

নিয়ে আমাদের ভাবনার অন্ত নেই। এদিকে গতায়ু হবেন

যিনি আজকাল কিংবা মাসাধিকাল পরে; আপাতত তাকে

নিয়ে কেউ-ই ঘামায় না মাথা। বুড়োটে শরীর তার

ভীষণ উত্তেজিত হাতের তুড়িতে একদা নিমেষে উধাও হতো সব। তিনি

আজ বিছানায় একা একা শুয়ে ভাবেন আল্লার

আরশ। মুমূর্ষু পিতার সংসারে আমিই বড় ছেলে। সব দায়িত্ব আমাকে

কাঁধে তুলে দিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরে পালাতে চান যিনি

তাকেই বাঁচাতে চাই আপ্রাণ চেষ্টায়; আমার পিতাকে।

 

       তুমিই আমার প্রেমিকা

তুমিই আমার প্রেমিকা। যেহেতু

তুমিই আমাকে প্রথম ভালবাসা শেখালে

কি করে ভালবাসতে হয়।

একদিন দেখলাম; একজন বিদেশী যুবা

তোমাকে ক্যামোন জোর করে টেনে নিচ্ছে—

তুমি নিরুপায়!

হয়তো তোমার বিশ্বাস ছিল

তোমার ভালবাসার প্রতিদানে

আমি তোমাকে উদ্ধার করবো। আমি তাই করেছি

আমি তোমার জন্যে মুক্তিযুদ্ধে গেছি

মর্টার ধরেছি, দাঁত দিয়ে গ্রেনেডের ক্লিপ ছিঁড়েছি—

দ্যাখো, তার সঠিক ফলাফল পাওয়া গেছে

একটি চরম যুদ্ধে।

অতএব এসো, এখন জ্বলজ্বলে দিনের আলোয় পুনর্মিলন হোক

আমাদের–

যেহেতু আমি তোমার আশৈশব প্রেমিক—

তোমার ভালবাসা আমার শরীরে!


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি