ঢাকা, রবিবার   ১৩ অক্টোবর ২০২৪

ইউরোপিয়ান সুপার লিগ নিয়ে ফুটবল দুনিয়ায় তুলকালাম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৯, ১৯ এপ্রিল ২০২১ | আপডেট: ১১:০৩, ১৯ এপ্রিল ২০২১

ইংল্যান্ডের ‘বিগ সিক্স’ বলে পরিচিত আর্সেনাল, চেলসি, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও টটেনহ্যাম হটস্পার-সহ ইউরোপের ১২টি বিখ্যাত ক্লাব একজোট হয়ে একটি নতুন প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে একমত হয়েছে। টুর্নামেন্টটির নাম দেয়া হয়েছে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ বা ইএসএল।

নতুন এই টুর্নামেন্ট নিয়ে ফুটবল ভক্তদের মধ্যে তো বটেই বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা, ইউরোপিয়ান ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানরা পর্যন্ত চরম নিন্দা জানাচ্ছেন।

ইংল্যান্ডের ছয়টির সঙ্গে রয়েছে আরও ছয়টি ক্লাব। সেগুলো হচ্ছে- রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান, জুভেন্টাস, এসি মিলান ও অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ। এদের সঙ্গে আরও তিনটি ক্লাব যোগ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই ক্লাবগুলো যে নতুন প্রতিযোগিতার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে, সেটি সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে আয়োজিত হবে। পুরুষ ও নারী দুই বিভাগেই ফুটবল টুর্নামেন্টটি আয়োজিত হবে। ইএসএল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চালু করে দেয়ার কথা বলেছে তারা।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সরাসরি এই নতুন পরিকল্পনার সমালোচনা করে নিজের টুইটার পাতায় লিখেছেন, ‘এটা ফুটবলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ঘরোয়া লিগের মূলে আঘাত করবে এটা। ভক্তদের শঙ্কায় ফেলবে। এই ক্লাবগুলোর উচিত ভক্তদের ও ফুটবল কমিউনিটির কাছে জবাবদিহি করা।’

কী আছে এই সুপার লিগে?
এই লিগে থাকবে ২০টি দল। ১২টি ক্লাব প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং আরও তিনটি ক্লাব নাম দিতে যাচ্ছে এখানে। অন্য পাঁচটি ক্লাব এখানে খেলবে ঘরোয়া ফুটবলে সাফল্যের ভিত্তিতে। প্রতিবছরই আগস্টে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ শুরু হবে, সপ্তাহের মাঝে খেলাগুলো হবে। ১০টি করে দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে ঘরের মাঠ ও প্রতিপক্ষের মাঠে খেলবে।

সেরা তিনটি দল কোয়ার্টার ফাইনালে সরাসরি যাবে এবং চতুর্থ ও পঞ্চম ক্লাবটি নিজেদের মধ্যে প্লে অফ খেলবে। এর মধ্যে যে জিতবে সে চতুর্থ দল হিসেবে কোয়ার্টারে যাবে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো করে দুই লেগের নকআউট পর্ব শেষে প্রতিবছর মে মাসে একটি নিরপেক্ষ স্টেডিয়ামে ফাইনাল খেলা হবে।

সুপার লিগের ক্লাবগুলো কী বলছে
ইউরোপিয়ান ফুটবলের সফলতম দল রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ দাবি করছেন, ‘ইএসএল সব স্তরের ফুটবলের জন্যই ভালো। চার বিলিয়ন ভক্ত ফুটবলের, এটাই একমাত্র বৈশ্বিক খেলা। আমাদের দায়িত্ব ভক্তদের মনের আশা পূরণ করা।’

জুভেন্টাসের চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়া আনেলি বলেন, ‘একটা সংকটের সময় ১২টি ক্লাব একসাথে হয়েছে। ইউরোপের ফুটবল বদলে দিতে দীর্ঘ পরিকল্পনা আছে আমাদের।’

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কো-চেয়ারম্যান জোয়েল গ্ল্যাজার বলেন, ‘বিশ্বের সেরা ক্লাবগুলো এবং খেলেয়াড়রা একসাথে হয়ে মৌসুমজুড়ে খেলবে। ইউরোপিয়ান ফুটবলে এটি একটি নতুন অধ্যায়। যেখানে বিশ্বমানের খেলা, সুযোগ সুবিধা ও অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে, যার সুফল ফুটবল পিরামিডের সবাই ভোগ করবে।’

নিষিদ্ধ হতে পারে ক্লাবগুলো
উয়েফা কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্পকে ‘জঘন্য’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, তারা সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবে যাতে এটি বাস্তবায়ন না হয়। উয়েফার সাথে এক বিবৃতিতে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন, প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ, রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন, লা লিগা, ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন এবং লেগা সিরি আ।

তারা বলছে, ‘যখন বিশ্বে সবার ফুটবলের স্বার্থে এক হওয়াটা প্রয়োজন, তখন কিছু ক্লাব নিজেদের স্বার্থে এমন একটি প্রজেক্ট ভাবলো যা জঘন্য।’

ফিফা ও ছয়টি মহাদেশের ফুটবল সংস্থা এই সুপার লিগের সাথে জড়িত সবগুলো ক্লাবকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞা ঘরোয়া ফুটবল, ইউরোপিয়ান ফুটবল ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে বলবৎ থাকবে। কোনো ফুটবলার যদি এই সুপার লিগে খেলে তাকে জাতীয় দল থেকেও বাদ দেয়া হতে পারে।

ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা জানিয়েছে, ‘এমনকি বিশ্বকাপ খেলতে নাও দেয়া হতে পারে সুপার লিগে খেলা ফুটবলারকে।’ 

এদিকে যেসব ক্লাব এই প্রস্তাবে একমত হয়নি উয়েফা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে। বিশেষত ফরাসী ও জার্মান ক্লাবগুলোকে।

সুপার লিগ ঠেকাতে যা যা হচ্ছে
সুপার লিগের আয়োজনের খবরের সাথে সাথে ইউরোপিয়ান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশন একটি জরুরি বৈঠক ডাকে। এই বৈঠকে সুপার লিগের সাথে যেসব ক্লাবের নাম এসেছে তারা কেউই কোনো সাড়া দেয়নি।

ডাচ ক্লাব আয়াক্সের প্রধান নির্বাহী এডউইন ফন ডার সার এই বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন, বায়ার্ন মিউনিখ ও প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর মতো ক্লাবগুলোও উপস্থিত ছিল।

ইউরোপিয়ান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশন এই সুপার লিগ মডেলের তীব্র বিরোধিতা জানিয়েছে। বরং এটা ঠেকাতে ৩৬ দলের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আয়োজনের কথা বলছে তারা।

কেন সুপার লিগ নিয়ে এত আপত্তি?
প্রিমিয়ার লিগের ছয়টি বড় ক্লাব এই সুপার লিগের অংশ। সেই প্রিমিয়ার লিগ বলছে, এই সুপার লিগ যে কোনো ভক্তের কাছে স্বপ্নভঙ্গের মতো। যে প্রক্রিয়ায় একটি ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসে এবং সেরা ক্লাবগুলোর সাথে খেলে সেই প্রক্রিয়া এবং কাঠামোই ভেঙ্গে দেবে এই সুপার লিগ।

বুন্দেসলিগা অর্থাৎ জার্মান লিগে কোনো ক্লাব চাইলেই নিজের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। কারণ জার্মান ফুটবল মডেল অনুযায়ী অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষক ক্লাবের ৪৯ শতাংশ মালিকানা রাখতে পারবে। যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ভক্তদের ভোটের প্রয়োজন হয় জার্মানিতে।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ডিফেন্ডার গ্যারি নেভিল এই পরিকল্পনার ওপর পুরোপুরি বীতশ্রদ্ধ। তিনি বলেন, আমি চল্লিশ বছর ধরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ভক্ত এবং আমি এটা নিয়ে প্রচণ্ড নাখোশ।

নেভিল এই ক্লাবগুলোর মালিকদের ‘বেইমান’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘এটা কেবলই লোভ।’

সুপার লিগ ক্লাবগুলোর যে সমর্থকগোষ্ঠী তারাও সুপার লিগের বিপক্ষেই মত দিয়েছেন। লিভারপুল, চেলসি, আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, টটেন্যাম- সবগুলো ক্লাবের ভক্তরাই অসমর্থন জানিয়েছে এই পরিকল্পনার। ‘ঘোরতর বেইমানি’ বলছেন তারা। 
সূত্র : বিবিসি বাংলা
এএইচ/এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি