ঢাকা, রবিবার   ০৩ আগস্ট ২০২৫

অভ্যুত্থানে বদলে যায় অপুর জীবন, এসপি অপেক্ষা করতেন ঘন্টার পর ঘন্ট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২৭, ৩ আগস্ট ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

একটা সময় জয়পুরহাটের প্রত্যন্ত গ্রামের এক সাধারণ ছাত্র ছিল জানে আলম ওরফে অপু। বাবার মৃত্যুর পর কাঁঠালবাড়ি গ্রামে নানাবাড়িতে থাকতেন তিনি। তার মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়। দরিদ্র পরিবার, মাটির দোতলা ঘর, বন্ধক রাখা দুই-তিন বিঘা জমি—এসবই ছিল তার বাস্তবতা।  কিন্তু ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর হঠাৎ পাল্টে যায় তার জীবন।

ফেসবুকে একের পর এক দামি পোশাক, বিলাসবহুল গাড়ি, প্রভাবশালী রাজনীতিক ও শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি আপলোড হতে থাকে। এমনকি জেলা পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্তারাও তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করেছেন-এসব দৃশ্য এলাকায় বিস্ময়ের জন্ম দেয়। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জয়পুরহাটের পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানে আলমকে সমীহ করতেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রথম তিনি ১১ আগস্ট জয়পুরহাট আসেন। সে সময়কার জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নুরে আলম তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। 

স্থানীয়রা জানান, জানে আলম এলাকায় আসবেন এমন খবরে কয়েক ঘন্টা তার জন্য অপেক্ষা করেন এসপিসহ জেলা পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তারা। 

তারা জানান, জানে আলম ওরফে অপু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছাত্র প্রতিনিধি ছিলেন। তাই তিনি এলাকায় আসলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা তটস্থ থাকতেন।   

গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে জানে আলম গ্রেপ্তার হওয়ার পর, খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেল, এই অপু একসময় জয়পুরহাটে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। স্থানীয় ছাত্রদল নেতা তানভীন নেওয়াজ জানান, নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় বহিষ্কারের পর অপু একের পর এক দলে ভিড়ে যান। ফেসবুকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কিংবা প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করে নিজেকে ‘পাওয়ারফুল’ প্রমাণ করতেন। এইসব ছবিই  ছিল এলাকায় তার প্রভাব বিস্তারের আসল পুঁজি।

পুনঘরদীঘি গ্রামে গিয়ে জানা গেল, জানে আলমের বাবা আনোয়ার হোসেন (দুলাল) ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। প্রায় ৮ বছর আগে তিনি মারা যান। তাঁদের বাড়িতে একটি মাটির দোতলা ঘর আর ছোট পাকা ঘর আছে। জানে আলমের মা অন্যত্র বিয়ে করেছেন। ছোট বোন মায়ের সঙ্গে থাকেন। ফলে বাড়িটি বেশির ভাগ সময় তালাবদ্ধ থাকে।

পুনঘরদীঘি গ্রামের বাসিন্দা শফিউল আলম বললেন, ‘অপু বয়সের তুলনায় অনেক বেশি পাকা ছিল। ঢাকায় চাঁদাবাজির ভিডিও ভাইরাল হওয়ার খবরে আমরা কেউ অবাক হইনি।

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত এই নেতা গ্রিন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু শিক্ষার চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয় আর চাঁদাবাজিই হয়ে ওঠে তাঁর মূল পথ। ঢাকায় বিভিন্ন মহলে তদবির ও লবিং করে নিজেকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করতেন। ছাত্রদলের অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট আরমান হোসেন বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর জানে আলমের আচরণ আর লাইফস্টাইল একেবারে পাল্টে যায়।’

তার মামি জেসমিন বলেন, ‘সে অভিভাবকহীন ছিল, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত না। জানতাম ঢাকায় বড় নেতা হয়েছে।’

সবশেষে, গত শুক্রবার ওয়ারী থেকে জানে আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের পরিচয়ে গুলশানে চাঁদাবাজি করেছেন তিনি। পরে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ তাঁকে চিরতরে বহিষ্কার করে।

সূত্র: প্রথম আলো

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি