ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন / তফসিল
আইনের আলোকে তফসিল ঘোষণার পর যেসব ক্ষমতা পায় নির্বাচন কমিশন
প্রকাশিত : ২২:২৭, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফশিল ঘোষণা সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের প্রদত্ত দায়িত্বের অংশ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১১ নম্বর অনুচ্ছেদের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ ১১ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সেই হিসেবে আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।
নির্বাচনের তফসিলে কী আছে?
সহজভাবে বলতে গেলে, তফসিল হলো নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজের আইনি সময়সূচি। অর্থাৎ ভোটের তারিখ ঘোষণা ছাড়াও এটি পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে তফসিলের ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া আছে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১২ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত, তা বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। তার তিন সপ্তাহ পর হবে ভোটগ্রহণ।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ হবে। সেক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমার জন্য ১৮ দিন সময় দেওয়া হয়েছে এবং প্রচারের জন্য ২০ দিন সময় রয়েছে।
ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করতে হয়। অর্থাৎ, ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ থাকবে।
তফসিল ঘোষণার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে ভোট কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ কাজ শুরু করে ইসি। তফসিল ঘোষনার সাথে সাথে দেশের নির্বাহী বিভাগ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচনী দায়িত্বের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগীতা করতে আইনগত ভাবে বাধ্য থাকে।
অতীতের তফসিলগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যদি দরকার হয় তাহলে নির্বাচন কমিশনের তফসিল সংশোধনের এখতিয়ার রয়েছে। যেমন- ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ নির্বাচনের তারিখ দিয়েছিলো। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির ভিত্তিতে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে ২৯ ডিসেম্বর করা হয়েছিলো। ২০০৬ সালে একবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক সংকটের মুখে নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছিলো।
তফসিলের পর যেসব ক্ষমতা পায় নির্বাচন কমিশনঃ
বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। তফসিল ঘোষণার পর আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন চাইলে দেশের সচিবালয় থেকে মাঠ প্রশাসন, সব জায়গায় রদবদল আনতে লিখিতভাবে আদেশ দিতে পারবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং তাদের অধস্তন কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা ছাড়া বদলি করা যাবে না।
এছাড়া, যদি কোন প্রার্থী নির্বাচনী আইন ও আচরণ বিধির গুরুতর লঙ্ঘন করেন, সেক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
এছাড়া তফসিল ঘোষণার পর রিটার্নি অফিসাররা নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যায়। সাধারণত জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২৫ এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবার পুরো নির্বাচনী এলাকার ফলাফল বাতিল করার ক্ষমতা লাভ করেছে। আগে সর্বোচ্চ কোনো কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করতে পারতো কমিশন।
আরও পড়ুন










