ঢাকা, সোমবার   ০৬ মে ২০২৪

একজন আত্মপ্রত্যয়ীর গল্প

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৪২, ৩ অক্টোবর ২০১৯

স্বপ্ন! বাস্তব! স্বপ্ন কখনও কখনও বাস্তবে রুপ নেয়, আবার কখনও নেয় না। স্বপ্ন দেখে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাই হয়তো মানুষ প্রতিনিয়ত আপন মনে স্বপ্ন বুঁনে যায়। নিজের দেখা স্বপ্ন নিয়ে ছুঁতে চায় আকাশ। বাস্তবে জয় করতে চায় স্বপ্নকে। প্রতিনিয়ত বুনে চলা স্বপ্নে কারও ইচ্ছে ডাক্তার হওয়া, কারও ইঞ্জিনিয়ার হওয়া, আবার কারও কারও শিক্ষক হওয়া।

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হয়, কখনও ছাড়িয়ে যায় নিজের এই স্বপ্নকে। স্বপ্নের চেয়ে প্রাপ্তির ঝুড়িটা বড় হয়ে ধরা দেয় বাস্তবে। জয়ী হয় স্বপ্ন, আর জয়ী হয় স্বপ্নচারী মানুষগুলো। তেমনই এক স্বপ্নজয়ী ফাতেমা আক্তার। নাম ফাতেমা আক্তার হলেও জেনি নামেই সমধিক পরিচিত তিনি।

জেনি ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। অন্য আট দশজনের মতোই চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। জেনির বাড়ি ফেনী জেলার সদর উপজেলায়। বাবা মো. ফারুক ভূইয়া পেশায় একজন ঠিকাদার এবং মা সেলিনা আক্তার পেশায় একজন গৃহিণী। চার ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় জেনি।

‘স্বপ্ন সেটা নয়, যেটা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে। স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না’। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের বিখ্যাত সেই উক্তির মতোই ছিল জেনির জীবনের স্বপ্ন কিংবা স্বপ্নের জীবন। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় এবং স্নাতকত্তোরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বর্তমানে একই বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন ফাতেমা আক্তার জেনি।

শৈশব-কৈশোরের কথা উঠতেই ছলছল চোখে আনমনা হয়ে স্মৃতির ভেলায় ভেসে কুড়িয়ে আনলেন কিছু কথা। বললেন, ছোটবেলায় টেলিভিশনে অনেক বেশি নাটক ও কার্টুন দেখতাম। আর আমি একটু বেশি জেদিও ছিলাম। বাবার কাছ থেকে অনেক কিছু চাইতাম। যা চাইতাম, তা না দেয়া পর্যন্ত কোনওভাবেই শান্ত হতাম না। বলা শেষ হতে না হতেই কি যেন ভেবে উঠলেন।

পড়াশোনায় যার এত এত সফলতা, তার সবটাতো জানতেই হবে। মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে নানান প্রতিবন্ধকতা আমাদের সমাজে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এর মাঝেও কিভাবে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছেন জেনি?

এবার মনযোগী হয়েই জানালেন, ‘কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না পরিবার থেকে। যে কোনও প্রয়োজনে বাবা সর্বদা এগিয়ে আসতেন। এটা সত্য যে, মেয়ে বলে অনেকে খুব ভালো ফলাফল করলেও পরিবার থেকে যতটা পাওয়ার কথা ছিল, ততটা সাড়া পায় না। বরং আমি তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি পেয়েছি।’ এজন্যে নিজের পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুললেন না জেনি।

শিক্ষকতা পেশায় আসার স্বপ্ন দেখেছিলেন কবে থেকে? স্বপ্নালু চোখের চাহনিতেই যেন উত্তর খুঁজে পাওয়া গেল। বললেন, ‘ছোটবেলা থেকে শিক্ষক হওয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছে ছিলো। তবে সেটা কেবল স্কুল বা কলেজের শিক্ষকতার স্বপ্ন ছিল। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বেশকিছু ভালো শিক্ষককে দেখে আরও বেড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়াটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া বলে আমি মনে করি। বিধাতা দুহাতে দিয়েছেন বলেই হয়ত আমার চাওয়ার চেয়ে পাওয়াটা বেশি হয়েছে।'

এই পথে আসার অনুপ্রেরণার কথা জানাতে গিয়ে বললেন, প্রথমত আমি নিজেই নিজের প্রেরণা। এরপর আমার পরিবার বিশেষ করে আমার বাবা এবং আমার শিক্ষকদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে বিশেষ করে মাসুম স্যার এবং মাসুদ স্যার ছিলেন সবচেয়ে অনুসরণীয়। প্রথম সেমিস্টারে যখন ৩.৮০ পেলাম তখন মাসুদ স্যার আমাকে শিক্ষক হওয়ার জন্য অনেক বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানালেন জেনি। ভবিষ্যতে নিজেকে একজন ভালো এবং আদর্শ শিক্ষক হিসেবে দেখতে চান। তার দ্বারা যেন কারও ক্ষতি না হয়, সেটাই চান জেনি। এই ফাঁকে জানালেন আরেকটা ইচ্ছের কথা।

বিসিএসে এডমিন ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছা আছে তার। তবে তা কেবল নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য, অন্য কোনও কারণে নয়। পাশাপাশি বিদেশে গিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার ইচ্ছের কথাও বললেন জেনি।

ভবিষ্যতে যারা শিক্ষকতা পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কি? জেনি বললেন, শিক্ষকতা পেশা সত্যিই একটি মহান পেশা। পেশার চেয়ে নেশাই বেশি কাজ করে এখানে। শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। তাই তার নৈতিকতা হতে হবে সর্বোত্তম। শিক্ষক হবেন স্বার্থহীন, লোভহীন এবং সৎ ব্যক্তি। ছাত্রদের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করার নামই শিক্ষকতা। যে বা যারা এসব মেনে নিতে পারবেন, তারাই এ মহান পেশাকে আপন করতে পারবেন।'

নিজের স্বপ্ন পূরণের অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুনদের উদ্দেশ্যে জেনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম দিন থেকেই ঠিক করতে হবে আসলে আমি কী করতে চাই। কারিকুলাম-ভিত্তিক পড়ালেখার পাশাপাশি বাইরের জগত সম্পর্কে জানতে হবে। বিভিন্ন রকম এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিজের সঙ্গে জড়িত হতে হবে। তবে পড়াশোনাকে সবচেয়ে বেশিই প্রাধান্য দিতে হবে।’

লেখকঃ আব্দুর রহিম, 
শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি