ঢাকা, বুধবার   ০১ মে ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় কলাগাছ থেকে তৈরি পণ্য যাচ্ছে বিদেশে

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৬:২২, ১৪ মার্চ ২০২২ | আপডেট: ১৭:২৯, ১৪ মার্চ ২০২২

কলাগাছের সুতা থেকে নানা পণ্যসামগ্রী তৈরীতে ব্যস্ত গ্রামের নারীরা।

কলাগাছের সুতা থেকে নানা পণ্যসামগ্রী তৈরীতে ব্যস্ত গ্রামের নারীরা।

কলাগাছ থেকে সুতা সংগ্রহ করে তা বুননি করে পাপোষ, টেবিলম্যাট, বাজারের ব্যাগ, ওয়ালম্যাট, ভ্যানিটি ব্যাগ, শো-পিস, ট্রে, নারী-পুরুষের অলঙ্কারসহ তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী। স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি সেগুলো রপ্তানী হচ্ছে বিদেশেও। এছাড়াও কলাগাছের বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট ও জৈব সার।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার ও দামুড়হুদা উপজেলা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাটাচোরা গ্রাম। এ গ্রামেরই যুবক শাহিন আলী। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক ছিল পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহারের প্রতি। তার এ আগ্রহ আরও বেড়ে যায় মালোয়েশিয়া ও ভারতের কোলকাতায় অবস্থানকালে। সেখান থেকে ফিরে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে গ্রামের কলাক্ষেত থেকে কলা সংগ্রহ করে নেয়ার পর পরিত্যক্ত গাছের বাকল সংগ্রহ করেন তিনি। পরে সেই বাকলগুলো মেশিনে দিয়ে বের করেন সুতা। এরপর তা পানিতে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে বিভিন্ন ধরণের পণ্য তৈরি করেন তিনি। সুতা তৈরি শেষে কলা গাছের বর্জ্য থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সারও তৈরি করেন শাহিন আলী। 

তার এ কাজের সঙ্গে যুক্ত করেছেন ওই গ্রামের ছাত্রী, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধীসহ শতাধিক নারীকে। এমনকি তাদেরকে দক্ষ করে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছে দামুড়হুদা উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতর।

উপজেলার পাটাচোরা গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা হিরা মনি, দেওলী গ্রামের গৃহবধূ রত্না ও রুনা এবং কলেজ ছাত্রী পাপিয়া বাড়ির উঠানে বসে রকমারি পণ্য তৈরি করতে করতে জানান, উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিত্যক্ত কলা গাছের সুতা দিয়ে বিভিন্ন রকম পণ্য তৈরি করছেন তারা। যা থেকে অর্থ উপার্জনও করছেন এবং এর মাধ্যমেই তারা আজ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী।

কৃষি উদ্যোক্তা শাহিন আলী বলেন, কলা গাছের সুতা থেকে বুননি করে পাপোষ, টেবিলম্যাট, বাজারের ব্যাগ, ওয়ালম্যাট, ভ্যানিটি ব্যাগ, শো-পিস, ট্রে, নারী-পুরুষের অলঙ্কারসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে। এছাড়া পরিত্যক্ত কলাগাছের বর্জ্য থেকে ভার্মি কম্পোাস্ট সার ও জৈব সারও তৈরি করা হচ্ছে।

সরকারের সহায়তা চেয়ে তিনি বলেন, ‘সহায়তা পেলে তার কর্মক্ষেত্রে আরও বেকার জনবল নিয়োগ করা সম্ভব হবে। যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা অর্জন করবে।’

দামুড়হুদা উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতরের প্রশিক্ষক নাসরিন খাতুন জানান, গ্রামের অসহায় দরিদ্র নারী এবং ছাত্রীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য এদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে। প্রশিক্ষিত হয়ে এরা পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে তৈরি সুতা ব্যবহার করে অত্যন্ত সুন্দর করে নানা রকমের ব্যবহৃত পণ্য বানাচ্ছে। এই পণ্যগুলো মানসম্মত করে প্রস্তুত করার জন্যই যুব উন্নয়ন এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, যুব-মহিলাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছে যুব উন্নয়ন অধিদফতর। ফলশ্রুতিতে এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এ প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকবে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পাটাচোরা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা শাহিন আলীকে সহায়তা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কারণ তিনি সফল হলে গ্রামীণ জনপদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। কাজ করে অনেক বেকার নারীরা নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, ‘পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে সুতা তৈরি করছেন শাহিন। আর এই সুতা থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছে স্থানীয় নারীরা। ওই সকল নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেই পণ্য দেশের বাজারে বিক্রির পাশাপাশি স্পেন, ফ্রান্স, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানীর চেষ্টা করা হচ্ছে। কুরিয়ারের মাধ্যমে এগুলো পাঠানো হচ্ছে। এসব দেশে পণ্যের চাহিদা দেখা দিলে আরও পাঠানো হবে।’ 

তবে এক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার বিশেষ প্রয়োজন বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা। 

এনএস//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি