ঢাকা, শনিবার   ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশের প্রথম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘সার্টিফাইড ব্রডকাস্ট টেকনোলজিস্ট’ সালাউদ্দিন সেলিম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩৬, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৭:৩৮, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বাংলাদেশের ব্রডকাস্ট ও ডিজিটাল মিডিয়া খাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছেন প্রযুক্তিবিদ সালাউদ্দিন সেলিম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বনামধন্য পেশাদার সংগঠন Society of Broadcast Engineers (SBE) থেকে Certified Broadcast Technologist (CBT) সার্টিফিকেশন অর্জন করে তিনি বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এই মর্যাদা লাভ করেন।

সালাউদ্দিন সেলিম ২০২৫ সালের ১৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে CBT পরীক্ষায় অংশ নেন। একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

বিশ্বমানের পেশাদার স্বীকৃতি

CBT হলো SBE-এর একটি মর্যাদাপূর্ণ ও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত টেকনিক্যাল সার্টিফিকেশন। এই সনদ ব্রডকাস্ট প্রযুক্তি, আইপি-ভিত্তিক প্রোডাকশন, ট্রান্সমিশন, নেটওয়ার্কিং ও ডিজিটাল মিডিয়ায় একজন পেশাজীবীর আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা ও সক্ষমতার স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত।

SBE-এর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা—যেমন ইনকর্পোরেশন অব ইস্টার্ন ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ার্স (IEEBE)—এই সার্টিফিকেশন কার্যক্রমে সহায়তা করে। কঠোর ও বিস্তৃত মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার কারণে CBT সার্টিফিকেশনকে বিশ্বজুড়ে উচ্চ মর্যাদার মানদণ্ড হিসেবে গণ্য করা হয়।

১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত SBE চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন কার্যক্রমের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। এ সময়ে বিশ্বব্যাপী হাজারো ব্রডকাস্ট পেশাজীবী এই সনদের মাধ্যমে তাদের ক্যারিয়ারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

জটিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অভিজ্ঞতা

সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, “SBE-এর CBT একটি অত্যন্ত জটিল পরীক্ষা। এতে ব্রডকাস্ট টেকনোলজি, নেটওয়ার্কিং, ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম, ব্রডকাস্ট পলিসি এবং ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনের নীতিমালাসহ নানা বিষয়ে গভীর জ্ঞান প্রয়োজন। এই সার্টিফিকেশন অর্জনের ফলে আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজের নতুন সুযোগ তৈরি হবে।”

তিনি আরও জানান, এই স্বীকৃতির ফলে তিনি পেশাগত পরিচয়ে SBE-এর লোগোসহ Certified Broadcast Technologist (CBT) উপাধি ব্যবহার করতে পারবেন।

দুই দশকের বেশি সময়ের ব্রডকাস্ট ক্যারিয়ার

সালাউদ্দিন সেলিমের ব্রডকাস্ট ও মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি খাতে কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা ২০ বছরেরও বেশি। এ সময়ে তিনি ৮টির বেশি জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের ব্রডকাস্ট প্রকল্প, ১০টির বেশি মাল্টিমিডিয়া প্রোডাকশন ও প্ল্যাটফর্ম, একটি এফএম রেডিও প্রকল্প, ৬টির বেশি আইপি টিভি প্ল্যাটফর্ম এবং একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন প্রকল্পে কাজ করেছেন।

২০০৭ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম আইপি টিভি ও আইপি-ভিত্তিক লাইভ ব্রডকাস্ট প্রযুক্তি ডেভেলপ করেন, যা সে সময় জাতীয় গণমাধ্যমে আলোচিত হয়।

দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে অবদান

ডিজিটাল মিডিয়া ও ব্রডকাস্ট খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০০৫ সালে ক্যারিয়ার শুরু করার পর দেশীয় ব্রডকাস্ট প্রযুক্তি খাতে বিশেষজ্ঞের ঘাটতি লক্ষ্য করে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে নতুন জনশক্তি তৈরিতে মনোযোগ দেন।

বিভিন্ন সময়ে তিনি সদ্য পাশ করা শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগতভাবে গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া ও সাংবাদিকতা বিভাগে ব্রডকাস্টিং ল্যাব স্থাপনে সহযোগিতা করেছেন।

তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে ব্রডকাস্ট, মাল্টিমিডিয়া ও ডিজিটাল মিডিয়া বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রশিক্ষণে এখন পর্যন্ত হাজারেরও বেশি তরুণ-তরুণী পেশাগত ক্যারিয়ার গড়েছেন।

ডিজিটাল মিডিয়ায় পথিকৃত ভূমিকা

বাংলাদেশের ডিজিটাল মিডিয়া রূপান্তরের পথিকৃতদের একজন হিসেবে সালাউদ্দিন সেলিমকে বিবেচনা করা হয়। তিনি প্রথম দিকে একটি টিভি চ্যানেল ও একটি প্রিন্ট মিডিয়ার ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। পরবর্তীতে একাধিক মিডিয়া প্রতিষ্ঠান তাকে কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সফলভাবে ডিজিটাল রূপান্তর সম্পন্ন করে।

অর্জন নিয়ে অনুভূতি

আন্তর্জাতিক এই স্বীকৃতি প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন সেলিম বলেন,“এটি শুধু আমার ব্যক্তিগত অর্জন নয়। বাংলাদেশের ব্রডকাস্ট পেশাজীবীদের জন্য এটি একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং দেশের ব্রডকাস্ট প্রযুক্তিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।”

এমআর// 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি