ঢাকা, শুক্রবার   ১৭ অক্টোবর ২০২৫

পাঠক স্মৃতিতে অম্লান তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান

নিছা আলম

প্রকাশিত : ২৩:১৭, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

হ্যালো, কিশোর বন্ধুরা, আমি কিশোর পাশা বলছি, আমেরিকার রকি বীচ থেকে...

এই পরিচিত কণ্ঠেই যাত্রা শুরু করত প্রতিটি অভিযানের, প্রতিটি কাহিনির। পাঠক যেন চোখ বুজলেই দেখতে পেত প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে ছোট্ট রকি বীচ শহর, কিশোরের কণ্ঠে শোনা সেই গোয়েন্দা সংস্থার ঘোষণা, মুসার পেশিবহুল ভরসা আর রবিনের শান্ত, বই-ঝুঁকে থাকা মুখ।এটা শুধুই গল্পের শুরু ছিল না এ ছিল পাঠকদের কাছে এক আমন্ত্রণপত্র, সাহস, বন্ধুত্ব, আর রহস্যের জগতে পা রাখার ডাক।পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডের পুরনো মোবাইল হোমে গড়া হেডকোয়ার্টার ছিল শুধু তিনজন কিশোরের নয় সেই সঙ্গে ছিল হাজারো কিশোর পাঠকের কল্পনারও ঠিকানা।

"তিনটি রহস্যের সমাধান করতে চলেছি—
এসো না, চলে এসো আমাদের দলে..."
এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাঠক শুধু বইয়ের পাতায় চোখ রাখেনি তারা ঢুকে পড়েছিল সেই রহস্যভরা জগতে। আর তার দরজাটা খুলে দিয়েছিলেন যিনি তিনি রকিব হাসান।

নব্বইয়ের দশকের বাংলা সাহিত্যের পাঠকজগত যেন এক অভূতপূর্ব মোহে বন্দী ছিল তিন গোয়েন্দা সিরিজের রহস্য আর রোমাঞ্চে। কিশোর, মুসা আর রবিন—তাদের প্রত্যেকটি অভিযান যেন তরুণ মনকে টেনে নিয়ে যেত অজানার পানে। আর এই চরিত্রগুলোর প্রাণদাতা, কল্পনার জাদুকর, লেখক রকিব হাসান তিনি আমাদের মাঝে আর নেই। গত বুধবার (১৫ অক্টোবর)  বিকেলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

রকিব হাসান ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। তার দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গিয়েছিল। বুধবার ডায়ালাইসিস চলাকালীন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। কৈশোরের সঙ্গী তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা ১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তবে বাবার চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কাটে ফেনীতে।

তবে তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলো থেকে যাবে পাঠকের মনের অলিন্দে, ঠিক যেমন থেকে যায় কোনো প্রিয় গল্পের শেষ পৃষ্ঠা যা আমরা কখনোই ভাঁজ করে রাখতে চাই না। নব্বইয়ের দশকের পাঠকেরা যেন চোখ বুঁজলেই দেখতে পেতেন তাঁর সৃষ্টি কিশোর পাশা গভীর কালো চোখে ঝলসে ওঠা বুদ্ধির দীপ্তি, কোঁকড়ানো চুল আর ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি এই চরিত্র যেন চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠত প্রতিটি পাঠকের। কেউ কেইস নিয়ে ভাবছে তো হঠাৎ মাথা চুলকাচ্ছে, আবার কখনো নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে এইসব মুহূর্ত যেন পাঠকদের চোখে ফুটে উঠত ছবির মতো। এমন বহু পাঠক ছিলেন, যারা মনে মনে নিজেকেই ভাবতেন কিশোর পাশা!

রকিব হাসান ধ্রুপদী কাহিনির ছকে বাঁধা লেখক  ছিলেন না। বরং শব্দ, ভাষা আর গাঁথুনির নিপুণ কারিগর হিসেবেই তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিশোর মননের জটিলতা, কৌতূহল আর কল্পনার পরিধি তিনি যেভাবে বুঝতেন, তা ছিল নিঃসন্দেহে অসামান্য। সেই গভীর অন্তর্দৃষ্টি তাঁকে এনে দিয়েছিল এক বিরল সম্মান যা কেবল হাতে গোনা কয়েকজন লেখকেরই প্রাপ্য হয়ে থাকে। তার সৃষ্টি তাঁর পরিচিতি, জনপ্রিয়তা, আর পাঠকের অকুণ্ঠ ভালোবাসা তাকে চিরকাল সজীব করে রাখবে অসংখ্য পাঠকের হৃদয়ে। তাঁর লেখার পাতায়, চরিত্রের মুখে, আর রহস্যে মোড়া প্রতিটি বাক্যে তিনি বেঁচে থাকবেন, অক্ষয়, অবিনশ্বর হয়ে।

 এমআর// 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি