ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য পুলাউ বেসার আইল্যান্ডে ভ্রমণ

শেখ আরিফুজ্জামান, মালয়েশিয়া থেকে: 

প্রকাশিত : ২০:৩৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২০:৩৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

প্রবাস জীবনের কর্মব্যস্ত কংক্রিটের শহরে দিন দিন মানুষ যেন একটু বেশিই যান্ত্রিক হয়ে উঠছে।  প্রবাসের মাটিতে জীবনের ফুরসত কম থাকলেও ভিন্নতা ধরে রেখেছে 'এভারগ্রিন বিডি' গ্রুপ।  যে কোনো ছুটিতেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে ছুটে চলা যেন 'এভারগ্রিন বিডি' গ্রুপের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ১০ সদস্যের এই গ্রুপের এবারের গন্তব্য ছিল কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরের মার্সিংয়ের তিওম্যান নামক আইল্যান্ডে।   

প্রকৃতি যেন তার অপার সৌন্দর্য্য উদার হস্তে দান করেছেন মার্সিংয়ের আইল্যান্ড গুলোতে।  কতগুলো আইল্যান্ডের মধ্যে তিওম্যান আইল্যান্ড নাম করা।  তিওম্যান আইল্যান্ডটি দক্ষিণ চীন সাগরের মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূলে অবস্থিত।  যার দৈঘ্য ১ হাজার ৩৮ মিটার।  কিন্তু বিধি বাম, সমুদ্র উত্তাল এবং আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় তৎক্ষনাত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হলাম আমরা।  কারণ মার্সিং থেকে সমুদ্র পথে প্রায় তিন ঘন্টার পথ তিওম্যান আইল্যান্ডের।  এ জন্য সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বেছে নেওয়া হলো কাছের পুলাউ বেসার আইল্যান্ডকে।  

মালয়েশিয়ার জোহরবারু রাজ্যের পূর্ব উপকূল থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মার্সিং।  পুলাউ বেসার আইল্যান্ডের প্রাচীন নাম পুলাও বাবি বেসর।  যা 'বিগ বোয়ার্স দ্বীপ' নামেও পরিচিত।  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে পুলাউ বেসারকে মালয়েশিয়ানরা মনে করেন পৃথিবীর গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্বর্গ।  

সাড়ি সাড়ি নারিকেল গাছ, ঝলমলে স্বচ্ছ জলরাশি দ্বীপটিকে করেছে দ্বিধাবিভক্ত।  এই দ্বীপে রয়েছে চমৎকার সাদা বালু।  যা অতি সহজে আপনার মনকে আকৃষ্ট করবে।  চারিদিকে পাখির কিচিমিচি কলকাকলি আর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য।  চিত্তবিমোহিত করা সবুজ পাহাড় ও সমুদ্রের অপূর্ব মহিমা সবাইকে মুগ্ধ করবে। 

মার্সিং জেটি (ফেরী ঘাট) থেকে পুলাও বেসার আইল্যান্ডে যাওয়ার পথকে কাছে বলা হলেও আসলে সেটা ছিল স্পিডবোডে করে প্রায় ৪০ মিনিটের পথ।  সব ভয়কে দূরে ঠেলে রওনা দিলাম পুলাও বেসারের উদ্দেশে।  একদিকে যেমন বৈরি আবহাওয়া, অন্যদিকে সমুদ্রের স্রোতের বিপরীতে চলা উত্তাল ঢেউ যেন বার বার আছড়ে পড়ছিল স্পিড বোর্ডের উপর।  সে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।  

পুলাউ বেসার বর্ষা মৌসুমে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দর্শনার্থীদে জন্য বন্ধ থাকে।  কারণ হিসেবে জানা গেছে, সমুদ্র উত্তাল, পানি বৃদ্ধি ও বাতাসের গতি অন্যান্য সময়ের থেকে বেশি থাকায় বর্ষা মৌসুমে সাধারণত আইল্যান্ডগুলোতে লোকসমাগম বন্ধ থাকে।  

পুলাউ বেসার যেভাবে যাবেন
পুলাউ বেসার আইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য প্রাইভেটকার, বাস ও প্লেনে করেও যাওয়া যাবে।  তবে খরচের দিক বিবেচনা করলে সব থেকে উত্তম বাসে ভ্রমণ।  সময় বেশি লাগলেও বাসের জার্নিটা আরামদায়ক।  

এদিকে, নিজস্ব প্রাইভেটকারে গেলেও নানাবিধ সুবিধা আছে।  মার্সিংয়ের স্পটগুলো ছাড়াও পথিমধ্যে জোহরবারুর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যাবে ইচ্ছা মতো।  

মার্সিং জেটি পুলাউ বেসারে যাওয়ার একমাত্র প্রবেশদ্বার।  কুয়ালালামপুরের টিবিএস বাস টার্মিনাল থেকে ডিরেক্ট মার্সিংয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকটি বাস সার্ভিস চালু রয়েছে।  প্রতিজনের ভাড়া ৪৫ রিঙ্গিতের মধ্যে এবং সময় লাগবে সাড়ে ৪ ঘণ্টা থেকে ৫ ঘণ্টা মতো।  মার্সিং বাস টার্মিনাল থেকে মার্সিং জেটি অর্থাৎ ফেরীঘাটে হাটা পথে পৌঁছতে সময় লাগবে ১০ মিনিট।  ফেরীঘাটে পৌঁছানো মাত্রই দেখা মিলবে বিভিন্ন ট্রাভেল হাউস ছাড়াও মালয়েশিয়া সরকারের তত্ত্বাবধানে তথ্য কেন্দ্র।  

পুলাও বেসারে থাকার জন্য ৩/৪টা রিসোর্ট আছে।  ইচ্ছা করলে ট্রাভেল হাউসগুলোর সাথে যোগাযোগ করে আইল্যান্ডে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা, হোটেল ভাড়াসহ সকল বিষয়ে কথা বলে নেওয়া যেতে পারে।  তবে অনলাইনে বুকিং দিয়ে যাওয়া সব থেকে ভালো।  

এছাড়া মার্সিং জেটি থেকে আইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য লোকাল মালয়দের জন্য ৫ রিঙ্গিত ও ফরেনারদের জন্য ৩০ রিঙ্গিত ভ্রমণ ট্যাক্স ধার্য করা আছে।  তবে একটু বুদ্ধি করে স্পিডবোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ৫ রিঙ্গিত ভ্রমণ ট্যাক্স দিয়েও যাওয়া সম্ভব।  এ সময় স্পিডবোর্ড কর্তৃপক্ষ আইল্যান্ডে যাওয়া এবং আসার ভাড়া এক সাথে নিয়ে নেবে।  স্পিডবোর্ড কর্তৃপক্ষ ফেরার দিন, তারিখ ও সময় বলে দিতে হবে এবং কর্তৃপক্ষের মোবাইল নম্বর নিয়ে নিতে হবে যোগাযোগ করার জন্য। 

স্পিডবোর্ডে করে যাওয়া এবং আসার সময় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যত হালকা কাপড় পড়ে ভ্রমণ করা যায়।  কারণ স্পিডবোর্ডের গতি ও সমুদ্রের ঢেউয়ের পানিতে আপনাকে ভিজতে হবে নিশ্চিত।  এই জন্য হালকা কাপড় পরিধান ও মোবাইল, ঘড়ি অথবা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিষপত্র ওয়াটার প্রুফ ব্যাগ বা নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে।  

পুলাও বেসার আইল্যান্ডে আছে হাতে গোনা কয়েকটি রিসোর্ট।  তার মধ্যে আসিয়ানিয়া বিচ রিসোর্ট, ডি কোকোনাট ও মিরাজ গেস্ট হাউস।  যা সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি।  কাঠের রিসোর্টগুলো পুলাউ বেসারের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে দুর্দান্তভাবে মিশে যায়।  রিসোর্টের সব কক্ষগুলো ঐতিহ্যবাহী শৈলীতে সজ্জিত, ক্লাসিক এবং প্রচলিত পরিবেশের সাথে মিল রেখে তৈরি করা হয়েছে।  

প্রত্যেকটা রিসোর্টেই ২ জনের থাকার রুম থেকে শুরু এক সঙ্গে ৮ জনের মতো থাকার কাঠের দ্বিতল রুমের সুব্যবস্থা আছে।  যার ভাড়া ২৫০ রিঙ্গিত থেকে ৫২০ রিঙ্গিত পর্যন্ত।  সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।  খাওয়া-দাওয়ার জন্য রিসোর্টেই ব্যবস্থা আছে।  তবে আগে থেকে হোটেল কর্তৃপক্ষকে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবারের জন্য অর্ডার দিয়ে রাখতে হবে।  তাহলে তারা সব ব্যবস্থা করবে নতুবা খাবার মিলা কষ্টকর হয়ে পড়বে।  এই বিষয়টা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে প্রত্যেক দর্শনার্থীকে। 

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি