ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪

ফের বাড়ছে ধরলার পানি,বানবাসিদের দুর্ভোগ চরমে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২১:৪৬, ৩ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ২১:৫০, ৩ জুলাই ২০২০

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি ধীরে ধীরে কমলেও ধরলা নদীর পানি আবারও বাড়তে থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার দুপুরে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদ সীমার ৪৪ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমর নদীর পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম নদ-নদীর পানি প্রবাহের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

হাজার হাজার ঘরবাড়ি ৮দিন ধরে বানের পানিতে ডুবে আছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে, জেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৫৭৯টি গ্রাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। প্রায় ১৭ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে ৫ শতাধিক পরিবার। আর বেসরকারি হিসাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়েছে। 

গত দু’দিন ধরে ভারি বর্ষণের ফলে সড়ক ও বাঁধের উপর আশ্রিত মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট প্রকট হয়েছে। দেখা দিয়েছে চিকিৎসা সংকট,বেড়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। বন্যা দুর্গতরা স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে পড়েছে চরম দুর্ভোগ। বিশেষ করে নারী, শিশু-কিশোরী ও বৃদ্ধদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। 

উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বি এম আবুল হোসেন ও কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রপুর ইউপির চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী জানান, চাহিদামত ত্রাণ বরাদ্দ না পাওয়ায় এখনো সব বন্যার্ত মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া সম্ভব হয়নি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানান, সরবারে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। চাহিদা মোতাবেক পর্যাক্রমে তা দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩০২ মে.টন চাল ও ৩৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণের কাজ চলমান রয়েছে।
  
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, জেলায় ৯ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ বোর ধানের বীজতলা ৫৩২ হেক্টর,আউশ ধান এক হাজার ৯৫৫ হেক্টর, শাক সবজি ৮৬০ হেক্টর, তিল ৩০২ হেক্টর, কাউন ২০ হেক্টর. চিনা ১৪০ হেক্টর, মরিচ ১৪০ হেক্টর এবং পাট ক্ষেত ৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর। এসব ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরীর কাজ চলছে বলে জানান। 

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, বন্যার্ত মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ে ৮৫টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। এর বাইরেও কোন খারাপ খবর পেলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নেব। সে রকম প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।

কুড়িগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়হান আলী জানান, এ পর্যন্ত বন্যার্তদের মাঝে পানি বিশুদ্ধকরণ কীট ২৫ হাজার সরবরাহ করা হয়েছে। নতুন করে বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় স্থাপন করা হয়েছে ১২টি টিউবওয়েল ১২টি ল্যাট্রিন। মেরামত করে দেয়া হয়েছে ৪৩৫টি টিউবওয়েল। এছাড়া বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৬'শ টিউবওয়েলের গোরা (প্লাট ফর্ম) উঁচু করে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বন্যার্তদের মাঝে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ জন্য দুটি বিশুদ্ধ পানির প্ল্যান্টের ভ্রাম্যমান গাড়ি ঘুরে ঘুরে পানি সরবরাহ করছে। প্রতিটি বিশুদ্ধ পানির প্ল্যান্ট থেকে প্রতি ঘন্টায় ২ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। 
কেআই/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি