ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫

আমি নাসিমা, রোহিঙ্গা বলছি

বিশ্ববাসীর কাছে এক রোহিঙ্গার বার্তা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৫৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৩:৫৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

কয়েক সপ্তাহ আগে ৬০ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শরনার্থী নাছিমা খাতুন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। সম্প্রতি তিনি আল-জাজিরার মুখোমুখি হয়েছেন। আলজাজিরার এক বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার পালিয়ে আসার নেপথ্যে যে সেনাবাহিনীর বর্বরতা ছিল, সেই বেদনাদায়ক চিত্র। বিশ্ব বিবেকের কাছে একটি বার্তা দিয়ে নাসিমার আর্তি, যদি আমাকে নিজ দেশে যেতে বাধ্য করা হয় তবে তারা (সেনারা) হয় নীপিড়ন করবে নতুবা হত্যা করবে। দু:খই হচ্ছে আমাদের গল্প। দু:খকে বহন করেই আমাদের পথচলা।


নাসিমা আল জাজিরাকে বলেন, আমার নাম নাছিমা খাতুন। বয়স ৬০ বছর । রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সংকটের আগে আমাদের দিন ভালোই যাচ্ছিল। আমার স্বামী ছিলেন জেলে। আমার তিনটি কন্যা সন্তান। যদিও সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে চাপের মুখে ছিলাম, কিন্তু আমাদের খাবার ও আশ্রয়ের জন্য কোনো সমস্যা ছিল না ।


যখন সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে তাদের অপারেশন শুরু করল তখন আমরা অন্য জায়গায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হলাম । আমি একটি জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এর মধ্যেই শুনতে পেলাম আমার স্বামীকে গুলি করা হয়েছে। তখন আমি নিজেকে আশ্রয়হীন ও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লাম। সেনাবাহিনী আমাদের পুরো গ্রাম তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়ায় আমার স্বামীর মৃতদেহ আমি পাইনি।


এরপর আমরা ওই অঞ্চল ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হলাম । আমি আমার মেয়েদের এবং কয়েক প্রতিবেশির সঙ্গে বাংলাদেশের পথে রওয়ানা দিলাম ।কিন্তু  সঙ্গে কোন কিছু নিয়ে আসতে পারি নি। তাই রাস্তার মধ্যে যা পেয়েছি তাই খেয়েছি। পথিমধ্যে একদিন পরিত্যক্ত একটি দোকান থেকে খাবার চুরি করে খাই। আর এটিই ছিল বাংলাদেশে আসার এ দশ দিনের সফরের মধ্যে প্রথম খাবার ।


আমরা খুবই ক্ষুদার্ত ছিলাম। আমি সার্বক্ষণিক কান্না করছিলাম এবং প্রতিবেশির অনুগ্রহে নৌকা যোগে বাংলাদেশে আসতে সক্ষম হই । স্বামী, বাড়ি-ঘর, ভূমি সব হারিয়ে আমি এখন নি:স্ব। আমরা বাংলাদেশে এসে একটি থাকার জায়গা তৈরি করেছি এবং স্থানীয় বাংলাদেশীরা আমাদের খাবার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এরূপ পরিস্থিতিতে আমাদের উপার্জনের কোন সুযোগ নেই। যদি আমরা উপার্জন করতে না পারি তাহলে আমাদের ভবিষ্যত কি হবে ?
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত বেসমরিক জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে অমানবিক নির্যাতনের ফলে সম্প্রতি সময়ে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন সহিংসতার অবসানের জন্য অং সান সু চি ও তার সরকারের উপর চাপ প্রায়োগ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
 সূত্র:আল-জাজিরা
//এম//এআর


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি