ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪

‘বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষনে প্রতিবন্ধকতা নিরসন আবশ্যক’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩৩, ১৯ আগস্ট ২০২০

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘যুক্তরাজ্যের সাথে বাণিজ্য এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনার আজ ১৯ আগস্ট, ২০২০ অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রাবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন এবং যুক্তারাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। 

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাজ্যের বন্ধুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে এবং বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অবস্থান দ্বিতীয়, যেখানে ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে ২.৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং প্রায় ২০০টি বৃটিশ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩.৪৫ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করে, যেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এর পরিমাণ ছিল ৪.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৃটিশ বিনিয়োগ আকর্ষনে তিনি নতুন পণ্যের উদ্ভাবন এবং পণ্যের বহুমুখীকরণে উপর জোরারোপ করেন। 

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বাংলাদেশের অবকাঠমোখাতে বৃহৎ প্রকল্পসমূহে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আকর্ষনে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ড’ চালুর প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিকে চলমান রাখা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং কোডিভ পরবর্তী অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী পণ্যের রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটা মুক্ত সুবিধা আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য বলবদ রাখা একান্ত প্রয়োজন বলে, ডিসিসিআই সভাপতি মত প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার বাণিজ্য সম্প্রসারণে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের জন্য দুদেশের সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। 
     
আয়োজিত ওয়েবিনার ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেম’র নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। মূল প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের ১০ শতাংশ। যদিও ২০১৮ সালে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে যুক্তরাজ্যের সর্বমোট বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল ১৮৬.৪৬ বিলিয়ন বৃটিশ পাউন্ড, কিন্তু বাংলাদেশ এসেছে মাত্র ০.৩৭%। বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধিতে তিনি বাংলাদেশী রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, যথাযথ নীতিমালা ও কৌশল প্রণয়ন, ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস, দ্রুততম সময়ে অবকাঠামো এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) গুলোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন, খুবই জরুরী বলে মত প্রকাশ করেন। এছাড়াও সেলিম রায়হান বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব করেন।  
     
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম বলেন, সুদৃঢ় অতীতকাল হতেই বৃটেন বিশ^বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা রেখে আসছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে আরো বেড়েছে। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বৃটেনে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা নিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দুদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক ডায়ালগ আয়োজন, দুদেশের বাণিজ্য সংগঠনসমূহের মধ্যে যোগাযোগ আরো সুদৃঢ়করন, কোভিড উত্তর বাণিজ্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় ‘মার্কেট স্ট্রাটেজি’ প্রণয়ন এবং বৃটিশ-বাংলাদেশীদের আরো বেশি হারে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহী করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তরুণ জনগোষ্ঠী তথ্য-প্রযুক্তিখাতে বেশ সম্ভাবনাময় এবং এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বৃটিশ তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে, যা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, পাশাপাশি আমাদের তরুণদের দক্ষতাও বাড়াবে। 

যুক্তারাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, বৃটিশ বাণিজ্য সংগঠনসমূহ বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য খাত বিষয়ে খুব বেশি অবগত নয় এবং এ অবস্থা উত্তরণে বাংলাদেশের চেম্বার ও এসোসিয়েশনগুলোকে যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ই-কমার্স বাজার রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশি তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে। হাইকমিশনার বলেন, বৃটেনে হালাল পণ্য এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বিশাল বাজার রয়েছে এবং বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সহজেই এ সুযোগ গ্রহণ করে আরো বেশি হারে পণ্য যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করতে পারে। 
 
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রাবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ একান্ত আবশ্যক। তিনি জানান, বাংলাদেশের ঔষধ, তথ্য-প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেবা এবং আর্থিক খাতসমূহে বৃটিশ বিনিয়োগ আকর্ষনে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষনে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস, প্রয়োজনীয় নীতিমালার সংষ্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। হাইকমিশনার বলেন, সম্প্রতি বৃটেনে ‘বাংলা বন্ড’ চালু হয়েছে, যা দুদেশের উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি দুদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশস্থ বৃটিশ হাইকমিশন হতে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি