ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

যা চেয়েছি তা এখনও পায়নি: তামিম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:১৬, ১৯ মার্চ ২০২০

তামিম ইকবাল খান

তামিম ইকবাল খান

২০০৭ বিশ্বকাপের সেই তামিম ইকবালের কথা মনে আছে! ভারতীয় পেসার জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে পোর্ট অব স্পেনের গ্যালারিতে আছড়ে ফেলা টাইগার ওপেনারকে চিনেছিল ক্রিকেট দুনিয়া। লর্ডসে হাঁকানো বিখ্যাত শতকে তামিমকে নতুন করে চেনে সবাই। বাংলাদেশ দলকে অনেক অর্জনের আনন্দে ভাসানো তামিম সম্প্রতি স্পর্শ করলেন ২২ হাজার রানের অনন্য মাইলফলক। তবে যা কিছু অর্জন করতে চেয়েছেন তা এখনও করতে পারেননি বলেও জানান তামিম।

তবে এসব ছাপিয়ে কিছুদিন আগেও সমালোচনায় বিধ্বস্ত হতে হয় তামিমকে। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকেই যেন এলোমেলো এক তামিমকে দেখতে পায় ক্রকেট বিশ্ব। আবারও যেন সেই ২০১৫ সালে ফিরে গিয়েছিলেন এই ওপেনার। বাস্তবতাটা যে প্রায় একই রকম। ব্যাটে রান নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়। যেন একই বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া এক তামিম।

২০১৫'র সেই বিশ্বকাপ-ব্যর্থতার পর অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন তামিম। তখনই দেখা পেয়েছেন ক্যারিয়ারের সেরা সময়ের। এশিয়া কাপে পরপর চার চারটি ফিফটি হাঁকিয়ে জবাবও দিয়েছিলেন তামিম। কিন্তু তামিমের সেই দুর্দান্ত ফর্ম শেষ হয় ২০১৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে। আসরটিতে ৮ ম্যাচ খেলে মাত্র একটি ফিফটি পাওয়া তামিমের রান মাত্র ২৩৫!

এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে তামিম বলেন, গত পাঁচটি বছর (২০১৫ থেকে ২০১৯) খুবই ভালো কেটেছে। কিন্তু এরপরের ২ মাসে যেন বদলে গেল সব। কষ্টগুলো মাত্র ২ মাসে ভুলে যাওয়া উচিত না হলেও আমার ক্ষেত্রে সবাই ভুলে গিয়েছিল। ব্যর্থতার জন্য অবশ্য আমি নিজেকেই দোষ দিচ্ছি। কারণ, এ বিশ্বকাপে আমি সাফল্যটা এত বেশি করেই চেয়েছিলাম যে, নিজের ওপর অনেক চাপ দিয়ে ফেলি। যা আমাকে ব্যর্থতার কাতারে নিয়ে যায়।’

অবশ্য ব্যর্থতার সে বলয় থেকে দ্রুতই মুক্তি পাননি তামিম। শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে তিনটি ওয়ানডে খেলে একটিতেও রান পাননি এই ওপেনার। যে কারণে বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নিয়ে লম্বা সময়ের জন্য চলে যান ক্রিকেট থেকে অনেক দূরে। চলতি বছর পাকিস্তান সফর দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেও তামিম খুঁজে পাননি সেই চেনা ছন্দ। বার বারই আউট হন উইকেটে থিতু হয়েই।

এ বিষয়ে তামিম জানান, তিনি এসময় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তার মতো ব্যাটসম্যানের যে একটা ইনিংসই দরকার, সেটাও ভালো করেই জানতেন এই ওপেনার। পাকিস্তানে ভালো ব্যাটিংই করেন, কিন্তু বড় রান পাচ্ছিলেন না। তবে এটা যে শুধুই সময়ের ব্যাপার সেটাও জানতেন তামিম। 

এসময় রানের সঙ্গে তামিমের স্ট্রাইক রেটও ছিল একটা বড় ফ্যাক্টর। রান না পাওয়ার পাশাপাশি মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্যও সমালোচনায় পুড়তে হচ্ছিল তাকে। যা দেখা যায় গত বিপিএল ও পাকিস্তান সফরের দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও।

এরপর তো এসেই গেল সেই মোক্ষম সময়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেখা পান কাঙ্ক্ষিত সেই সেঞ্চুরির। তবে একটা নয়, রেকর্ডসহ টানা দুটি সেঞ্চুরি হাঁকান দেশ সেরা এই ওপেনার। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জোড়া সেঞ্চুরি করার পর স্ট্রাইক রেট নিয়ে সে সমালোচনার আগুনেও পানি ঢালেন তামিম। দুটি সেঞ্চুরিই করেছেন ১০০ ছাড়ানো স্ট্রাইক রেটে।

কিন্তু ওই সময়ে স্ট্রাইক রেটের বিষয় নিয়ে মুখ না খুললেও সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে তামিম বলেন, আমরা সব সময় একটা ধারা মেনে চলি। দুই দিন আগে যেমন লোকে বলতো- ধৈর্য নেই। আর এখন বলে- এত বেশি ধৈর্য কেন? আগে ৩০-৪০ রানেই ৩-৪টি উইকেট পড়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক চিত্র ছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে এমনটা খুবই কম হয়েছে। তাই সব সময় ইতিবাচক দিক কী কী হচ্ছে সেটাও চিন্তা করা উচিত। পাল্লার কোন দিকটা ভারী সেটাও দেখা উচিত, আমি তো ভালোটাই দেখি।

এদিকে, তামিমের ক্যারিয়ার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- শুরু থেকেই তার ওয়ানডে স্ট্রাইক রেট ছিল কম বেশি ৮০। এমনকি ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটানো গত পাঁচ বছরও তা বজায় ছিল। এসময়ে তামিমের শট নির্বাচন ছিল ভালো, ফিটনেসেও পরিবর্তন, লম্বা ইনিংস খেলারও সামর্থ্য বাড়ে। 

তামিমের ক্রিকেটিয় ফিগারগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন- ক্যারিয়ারের প্রথম ৭ বছরে ওয়ানডেতে ৭৭.৫৫ স্ট্রাইক রেটে ২৯.৮৫ গড়ে ৪ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৩৯৭১ রান। অন্যদিকে, গত পাঁচ বছরে (২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত) ৮০.১১ স্ট্রাইক রেটে ৯টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তামিম রান করেছেন ৩২৩১। এসময়ে তার গড় বেড়ে দাঁড়ায় ঈর্ষনীয় পর্যায়ে, ৫১.২৮-এ।

ওয়ানডেতে এই ধারাবাহিকতাই বজায় রাখতে চান সম্প্রতি ২২ হাজারের মাইলফলক স্পর্শ করা দেশ সেরা এই ওপেনার। আরও লম্বা ইনিংস খেলা প্রসঙ্গে তামিম ইকবাল জানান, টিম মিটিংয়ে কথা হয়, টপ অর্ডারের তিন জনের একজনকে অন্তত ৪০ ওভার পর্যন্ত খেলতে হবে। আর সেটাই করার চেষ্টা করেন তিনি। যে কারণে আগের তুলনায় বাড়ছে লম্বা ইনিংস।

একইসঙ্গে নিজের স্ট্রাইক রেটও বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে চান তামিম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২২ হাজার রান করার পরও নিজেকে ক্রিকেটের ছাত্র হিসেবেই মানেন ড্যাশিং ওপেনার। তামিম জানান, তিনি সব সময় উন্নতির পেছনে ছুটেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে তার আরও অনেক কিছু শেখার আছে। সবে চার-পাঁচ বছরে সাফল্যের স্বাদ পেতে শুরু করলেও যা কিছু অর্জন করতে চেয়েছেন তা এখনও পারেননি বলেও জানান তামিম।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি