রোহিঙ্গা ইস্যু: শুনানির শেষ দিনে গাম্বিয়ার যুক্তি
প্রকাশিত : ১৬:০১, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় বৃহস্পতিবার তৃতীয় ও শেষ দিনে যুক্তি দিচ্ছেন গাম্বিয়া এবং মিয়ানমারের এজেন্টরা। বিকাল ৩টায় শুরু হওয়া শুনানির প্রথমে রোহিঙ্গা গণহত্যার সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে গাম্বিয়া।
গাম্বিয়ার এজেন্ট শুরুতেই রোহিঙ্গা নির্যাতনের ব্যাপারে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সাতটি মূল বক্তব্য তুলে ধরে ধরেন। বলেন, গতকাল বুধবার মিয়ানমারের এজেন্ট এগুলো অস্বীকার করেননি।
উদাহরণ দিয়ে গাম্বিয়ার এজেন্ট বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ৩৯২টি গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মিয়ানমার তা অস্বীকার করেনি। তারা নিজেরাই বলেছে, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা এই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত ও তাদের বিচার হচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমারের ২০০৮ সালের সংবিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনীর কারও অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার কেবলমাত্র সামরিক আদালতেরই রয়েছে। আর সেনাবাহিনী যে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিচার করবে না সেটি প্রমাণ হয় সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বক্তব্যে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে তার পেজ বন্ধ করার আগে তিনি সেখানে বলেছিলেন, বাংলাদেশিদের সমস্যা নিয়ে তারা লড়ছেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বলতে কোনও জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই।
গাম্বিয়ার এজেন্ট আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর সমস্ত নির্যাতনের কথা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়ে এখন মিয়ানমার বলতে চাইছে এর পেছনে গণহত্যার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না তাদের।
আজ দেড় ঘণ্টা বলার সুযোগ পাবে গাম্বিয়া। আর বিরতির পর রাত সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে দেড় ঘণ্টা বলবে মিয়ানমার।
গণহত্যার মামলার শুনানিতে মিয়ানমারের পক্ষে অংশ নিতে নেদারল্যান্ডসে অবস্থান করছেন দেশটির অং সান সু চি। আর গাম্বিয়ার পক্ষে মামলায় অংশ নেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু।
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি গতকাল বুধবার জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে তার দেশের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দেশের সেনাবাহীনির সাফাই গেয়ে বক্তব্য দেন তিনি।
আরাকানে মুসলমানদের ইতিহাস বর্ণনা করে দেশটির স্টেট কাউন্সেলর ও এজেন্ট সু চি সাম্প্রতিক রাখাইনের ঘটনাগুলোকে সংঘাতের ফল হিসেবে অভিহিত করেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার আইসিজেতে ১৭ জন বিচারপতির উপস্থিতিতে মিয়ানমার সেনাবাহীনির বিরুদ্ধে আনীত গণহত্যার অভিযোগের প্রথম দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন আদালতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির উপস্থিতিতে অভিযোগকারী আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু মানবতাবিরোধী নৃশংসতার অভিযোগগুলোর সারাংশ তুলে ধরেন।
গণহত্যার উদ্দেশ্য, গণহত্যার কার্যক্রম, ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতা, গাম্বিয়া এবং মিয়ানমারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির পটভূমি, আদালতের এখতিয়ার এবং অন্তর্বর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কী কী ব্যবস্থা প্রয়োজন, সেগুলো গাম্বিয়ার পক্ষে আদালতে তুলে ধরেন আরও সাত আইন বিশেষজ্ঞ।
রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গাম্বিয়া যেসব অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধ রাখা, গণহত্যার কোনও আলামত নষ্ট না করা, জাতিসংঘের তদন্তকারীসহ অন্যদের আরাকানে ধ্বংসপ্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে অবাধে প্রবেশাধিকার দেওয়া।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি তল্লাশি চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত নিধন অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও নির্যাতনের মুখে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ওই ঘটনার দুই বছরের বেশি সময় পর গত ১১ নভেম্বর অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) সমর্থনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ দায়ের করে গাম্বিয়া।
একে//
আরও পড়ুন