ঢাকা, সোমবার   ১২ মে ২০২৫

লুঙ্গি-গেঞ্জি-মাস্কের ছদ্মবেশে বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:০৫, ১১ মে ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

জনরোষ এড়িয়ে অনেকটা ছদ্মবেশে দেশত্যাগ করতে বিমানবন্দরে যান সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বুধবার দিবাগত রাতে দেশে ছেড়েছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। তিনি থাইল্যান্ডে গেছেন বলে জানা গেছে। তাঁর দেশ ছাড়া নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার মধ্যরাতে তিনি লুঙ্গি, গেঞ্জি ও মুখে মাস্ক পরে শাহজালালের ভিআইপি টার্মিনালে হাজির হন। এরপর কঠোর গোপনীয়তায় তাকে বিমানবন্দরের ভেতরে ঢোকানো হয়। এক পর্যায়ে সব ধরনের নিরাপত্তা তল্লাশি এড়িয়ে তাকে নির্বিঘ্নে বিমানে তুলে দেন। 

এ সময় ইমিগ্রেশনে তিনি কূটনৈতিক সুবিধার বিশেষ লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করেন বলে জানা গেছে। 

মামলার আসামি হয়েও কিভাবে তিনি দেশ ছাড়লেন এমন প্রশ্ন উঠেছে।

ইমিগ্রেশনে কূটনৈতিক সুবিধার বিশেষ লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করেন আবদুল হামিদ। কূটনৈতিক সুবিধার বিশেষ পাসপোর্টে (নম্বর ডি০০০১০০১৫)।

সূত্র জানায়, ওই দিস রাত পৌনে ১টায় আবদুল হামিদের ব্যক্তিগত গাড়িটি বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছায়। এ সময় সেখানে দায়িত্বরত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তার গাড়ি আটকে দেন। তারা আরোহীদের পরিচয় জানতে চান। গাড়িচালক জানালার কাচ নামিয়ে বলেন, গাড়িতে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পরিবারবর্গ রয়েছেন। এ কথা শোনার পর গাড়িটিকে সেখানেই অপেক্ষা করতে বলা হয়। 

এসময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গাড়ি বাইরে অপেক্ষমাণ রেখে ভেতরে ঢোকেন। এ সময় নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্সের খোঁজ চলাকালে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হন্তদন্ত হয়ে গাড়ির সামনে এসে হাজির হন। সাবেক রাষ্ট্রপতির বহির্গমন অনুমোদন রয়েছে বলে জানান তিনি। 

এক পর্যায়ে আবদুল হামিদসহ তার সফরসঙ্গীদের বিমানবন্দরের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার হয়। এ সময় আবদুল হামিদ গাড়িতে বসেই পোশাক বদল করেন। পরনে থাকা লুঙ্গি গেঞ্জি পরিবর্তন করে প্যান্ট ও শার্ট পরে নেন। 

সূত্র জানায়, আবদুল হামিদের সুবিধার জন্য তাকে বহনকারী থাই এয়ারওয়েজের বিমানটিকে (ফ্লাইট নম্বর টিজি৩৪০) ভিআইপি টার্মিনালের কাছাকাছি আনা হয়। এরপর বিমান ছাড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বিশেষ গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দরের ১২ নম্বর আউট-বে এলাকায়। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় কঠোর গোপনীতার মধ্য দিয়ে।

রাষ্ট্রপতি থাকার সময় ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি তার নামে ১০ বছর মেয়াদি এই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। ২০৩০ সালের পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত এর মেয়াদ রয়েছে। শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের লাল পাসপোর্ট ইতোমধ্যে বাতিল হলেও আবদুল হামিদের পাসপোর্ট বাতিল হয়নি।

এ বিষয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতিরা আমৃত্যু বিচারপতির পদমর্যাদা ভোগ করে থাকেন। এছাড়া বিদ্যমান আইনেও সাবেক রাষ্ট্রপতিদের ব্যবহৃত পাসপোর্ট সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই।’

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তারা বলছে, তার (আবদুল হামিদ) দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা কিংবা কোনো বাহিনীর আপত্তি ছিল না। নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাকে দেশত‍্যাগে বাধা দেওয়া হয়নি।

এদিকে আব্দুল হামিদের দেশ ছাড়ার ঘটনায় পরদিন তার জেলা কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে নিয়োজিত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার এবং উপপরিদর্শক ও সহকারী উপপরিদর্শক পদমর্যাদার দুজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগে কারা জড়িত, তা জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। তদন্তে যারা দায়ী প্রমাণিত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি