ঢাকা, রবিবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষা হবে ঝঞ্জাটমুক্ত ও প্রায়োগিক

ধীরা ঢালী

প্রকাশিত : ১৮:৪১, ৫ অক্টোবর ২০২০

শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার সম্পর্ক হলো স্বরবর্ণ-ব্যঞ্জনবর্ণ এবং বাক্যের মতো। স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জণবর্ণ ব্যতীত যেমন বাক্য গঠন করা সম্ভব নয়। তেমনি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী ব্যতীত শিক্ষার প্রয়োগ সম্ভব নয়। একইভাবে শিক্ষকের কাজ শুধু জ্ঞান পরিবেশন নয়, শিক্ষার্থীর আত্মতৃপ্তির জাগরণ ঘটানো। শিক্ষার্থীর যোগ্যতানুযায়ী পথ দেখিয়ে তার বুদ্ধিবৃত্তিকে জাগ্রত করাই হলো একজন আদর্শবান শিক্ষকের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। 

সমাজের এ সকল আদর্শবান শিক্ষকদের সম্মানার্থে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ৫ অক্টোবর 'বিশ্ব শিক্ষক দিবস' হিসেবে পালিত হয়। ইউনিসেফ থেকেও ৫ অক্টোবর দিনটিকেই  'বিশ্ব শিক্ষক দিবসের' স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

এই বিশেষ দিবসে এমনই একজন আদর্শবান শিক্ষক সম্পর্কে আমরা অবগত হতে যাচ্ছি- যিনি হলেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন এবং বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মনসুর মুসা। শিক্ষক দিবসের অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'এবারের শিক্ষক দিবসের অনুভূতি একটু ভিন্ন রকম। আমি মনে করি, আমার শিক্ষার্থীদের সুস্থ এবং ভালো থাকাটাই একান্ত কাম্য। শ্রেণিকক্ষে যখন পাঠদান করি, তখন তাদের হাস্যোজ্জ্বল মুখগুলোই আমার প্রাণের স্পন্দন হয়ে ওঠে। অথচ এই করোনা মহামারি যেন সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। আমি আবার আমার প্রিয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাসে ফিরতে চাই, এটাই আমার শিক্ষক দিবসের চাওয়া।'

গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল বলেছেন, 'যাঁরা শিশুদের শিক্ষাদানে ব্রতী তাঁরা অভিভাবকদের থেকেও অধিক সম্মানীয়। পিতামাতা আমাদের জীবনদান করেন ঠিকই। শিক্ষকরা সেই জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন।' শিক্ষার্থীদের জীবনকে সুন্দর এবং সাবলীলভাবে গড়ে তুলতে ডাক্তারী পেশাকে পিছনে ফেলে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে সাদরে গ্রহণ করেছেন এমন একজন মহৎপ্রাণ শিক্ষক হলেন- গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত ও গাণিতিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন এবং বাংলাদেশের প্রথম নারী ফিজিসিস্ট অধ্যাপক ড. হাসিন অনুপমা আজহারী। 

দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা পেশায় পথচলার অনুভূতি এবং যে স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষকতা পেশায় এসেছিলেন তার প্রাপ্তি কতটুকু? এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে বলেন তিনি, 'আমি মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে আসি। এই সাবজেক্টটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল, কারণ- বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটা ছিল একদমই অপরিচিত। তখন আমি ডাক্তারী পেশাকে পিছনে ফেলে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করি এবং শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করি।

আমার লক্ষ্য ছিল ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতিকে সহজলভ্য করা এবং এটাকে দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এজন্যই মূলত আমার শিক্ষকতা পেশায় আসা। আমি মনে করি, আমি যে স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষকতা পেশায় এসেছিলাম তার একশো ভাগের বেশি পূরণ হয়েছে। কারণ আজ আমার ছাত্ররা দেশের স্বনামধন্য সব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। যেটা আমার এবং দেশের মানুষের কাছে একটা বড়ো পাওয়া। আমি মনে করি, তারা আরও ভালো কিছু করবে এবং এই পেশাটাকে দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে।'

'আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির, সত্যিই তুমি মহান উদার বাদশাহ আলমগীর।' - বিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট কবি কাদের নেওয়াজের সৃষ্টিকে সম্মান জানিয়ে বলতে চাই, শিক্ষকের মর্যাদা রাজা-বাদশা, জমিদার, নবাব সবার ঊর্ধ্বে। পর্বতকে ভেদ করার সামর্থ্য যেমন আমাদের নেই। তেমনি শিক্ষকের মর্যাদাকে হানী করার স্পর্ধাও আমাদের নেই। শিক্ষক হলো সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। ব্যর্থতার গ্লানি মুছে ফেলে সাফল্যের দ্বারে পৌঁছে দেয়ার যে মহান স্রষ্টা, তাঁর নামই শিক্ষক। 

শিক্ষার্থীর সাফল্য নিয়ে উদিত হওয়া শুকতারার নামই হলো শিক্ষক। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনই এক সাফল্য বয়ে আনা শুকতারা হলো কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান এবং আণবিক গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক ডিরেক্টর অধ্যাপক মোঃ করম নেওয়াজ। অন্য পেশা এবং শিক্ষকতা পেশার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? এমন প্রশ্নের বিশ্লেষণে বলেন তিনি, 'শিক্ষক মানেই একজন ছাত্র। যাকে সবসময় তৎপর থাকতে হবে। আশেপাশের সবকিছুই পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। ছাত্র এবং শিক্ষকের সম্পর্ক হবে মধুর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ।'

তিনি আরও বলেন, একটা অংকের যখন সমাধান টানা হয়, তখন যে আনন্দটা অনুভব হয়। তার চেয়ে শতগুণ আনন্দ অনুভব হয়- একজন ছাত্র যখন তার লক্ষ্যে পৌঁছায়। আমি মনে করি, এখানেই শিক্ষকতার সঙ্গে অন্য পেশার পার্থক্য। 

প্রখ্যাত নাট্যকার শেক্সপীয়র বলেছেন— 'Home keeping youth ever homely wits'. অর্থাৎ- যে যুবক আলালের ঘরের দুলাল হয়ে আরাম আয়েসে ঘরে বসে থাকে তার চিন্তা-ভাবনাও সীমাবদ্ধ থাকে। তাই আমাদের উচিত শিক্ষাকে নিজ গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ না রেখে তার যথাযথ প্রয়োগ ঘটানো। যে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োগ করে দেশ এবং জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়, সেই শিক্ষা ব্যবস্থা নিছক মূল্যহীন। তাই শিক্ষাব্যবস্থা হতে হবে ঝঞ্জাটমুক্ত এবং প্রায়োগিক। যে শিক্ষার প্রয়োগে সমৃদ্ধ হবে একটি পরিবার, একটি সমাজ, একটি রাষ্ট্র, সর্বোপরি একটি বিশ্ব।

(লেখক- শিক্ষার্থী, ভাষা-যোগাযোগ ও সংস্কৃতি বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।)

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি