ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

সুযোগ পেলে ‘তারা’ হয়েই জ্বলবেন ধ্রুব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৭, ৫ আগস্ট ২০২১

আফিফের সেই রাজকীয় শট

আফিফের সেই রাজকীয় শট

বাঁধিয়ে রাখার মতো একটা শট। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বল। হাটু গেড়ে, কাভারের ওপর দিয়ে রাজকীয় স্টাইলে বলকে পাঠিয়ে দিলেন সীমানার বাইরে। ছবির মতই দাঁড়িয়ে রইলেন ফলো থ্রুতে। মনে হলো, যৌবনের অ্যাডাম গিলক্রিস্ট বা কুমার সাঙ্গাকারার টপ অফ দ্য কাভার। না, গিলক্রিস্ট বা সাঙ্গাকারা নন; আমাদেরই আফিফ হোসাইন ধ্রুব।

যে ধ্রুবর কল্যাণে মাইটি অস্ট্রেলিয়াকে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হারালো বাংলাদেশ। ভিতটা অবশ্য বোলাররাই গড়ে দিয়েছিলেন অজিদেরকে ১২১ রানে অলআউট করে। কিন্তু তারপর সাকিব, মেহেদীর দৃঢ়তার পরও ৬৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে ভেড়াতে একটা জাদুকরী ইনিংস দরকার ছিলো। নুরুল হাসান সোহান নিজে সেই জাদুটা দেখাতে না পারলেও সঙ্গ দিয়েছেন। আসল জাদুটা দেখালেন ওই ধ্রুবই।

ম্যাচ জেতানোর চেয়েও ধ্রুবর এই ইনিংসটার একটু বেশি গুরুত্ব আছে। এটা আসলে ‘অরিজিনাল ধ্রুব’কে চেনার একটা ইনিংস।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে ধ্রুবর নামটা জোরেসোরেই উচ্চারিত হয়েছিলো এক বিপিএল ম্যাচের পর। সেখানে ক্যারিয়ারের শুরুতে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আর এখানেই একটা গোলমাল হয়ে গেলো, লোকেরা ধরে নিলো, আফিফ একজন মিনি অলরাউন্ডার!

আসলে অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে উঠে আসা ধ্রুব নিখাঁদ এবং অত্যন্ত সলিড একজন ব্যাটসম্যান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যার ছাপ খুব দ্রুতই রেখেছেন এই তরুণ। কিন্তু জাতীয় দলের ম্যানেজমেন্টের তাঁকে নিয়ে ভ্রান্তি কাটেনি। তাঁরা ধরেই রেখেছেন, এই ছেলেটি মিনি অলরাউন্ডার; ফলে তাকে নিচের দিকে ব্যাট করাতে হবে।

সেখানেও যে আফিফ খুব খারাপ করছেন, তা কিন্তু নয়। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেই ৭ বা ৮ নম্বরে নেমে ফিফটি করে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। এ ছাড়াও নিচের দিকে ব্যাট করে তার ৪৫ রানের ইনিংসও আছে। ওয়ানডেতেও এসব জায়গায় কিছু ভালো ইনিংস আছে তার।

কিন্তু এটা করতে গিয়ে দুটো ক্ষতি হচ্ছিলো: প্রথমত, আফিফ নিজের সেরাটা খেলতে পারছিলেন না। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশ একজন জেনুইন ব্যাটসম্যানের সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলো। কারণ, আফিফ কোনোক্রমেই ট্রাডিশনাল স্লগার নন। তিনি উইকেটে গিয়ে শামিম হোসেন পাটোয়ারি বা নুরুল হাসান সোহানের মতো খ্যাপা ঘোড়া মার্কা শট করতে পারবেন না। তিনি ইনিংস তৈরি করবেন। একেবারে নিখুঁত ক্রিকেটীয় শটেই ১২০-এর ওপরে স্ট্রাইক রেটে রান তুলতে পারবেন। এখন যার ক্ষমতা আছে বড় ইনিংস খেলার; ইনিংস গড়ে তোলার। তাকে আপনি কেনো অন্তিম সময়ে ছক্কা মারার দায়িত্ব দিয়ে বারবার উইকেটে পাঠাবেন?

এই চক্রটা যেন কিছুতেই ভাঙা যাচ্ছিলো না। অবশেষে একটু ওপরের দিকে ব্যাট করার সুযোগ পেতে শুরু করেছেন আফিফ। সুযোগ পেয়েই দেখালেন, তিনি এমন সুযোগ পেলে কী করতে পারেন। দারুণ সব উদ্ভাবনী শট করতে পারেন এবং ব্যাকরণ বইকেও মাঠে নিয়ে আসতে পারেন। এই দুইয়ের সমন্বয় বাংলাদেশে খুব একটা দেখা যায় না।

একটা জিনিস নিশ্চিত করে বলা যায়, আফিফ যদি মিডল অর্ডারে নিয়মিত সুযোগ পান, খুব দ্রুতই বাংলাদেশের সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মিডল ওভারের যে সংকট, সেটা কেটে যাবে। সোজা কথায়, ২০ ও ৫০ ওভারের খেলায় তাকে চার নম্বরে খেলাতে হবে। আর সেটা করলে অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। শুধু ধ্রুব নয়, তারা হয়ে উঠতে পারবেন আফিফ।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি