ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কে এই ভিকারুণ নিসা নুন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

রাজধানীর ভিকারুণ নিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ চেনেন না- এমন কেউ নেই। বিশেষ করে, বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সময় প্রতিষ্ঠানটির নাম আসে সবার সামনে। বর্তমান প্রজন্মের শহরমুখী বেশিরভাগ তরুণীরই স্বপ্ন থাকে এই প্রতিষ্ঠানে পড়ার। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি যার নামে নামকরণ করা হয়েছে তাকে ক’জনই-বা চেনে। কে ছিলেন এই ভিকারুণ নিসা নুন, কেমন ছিলেন- তা অনেকেই জানিনা। 

ভিকারুণ নিসা নুন ছিলেন ফিরোজ খান নুন-এর স্ত্রী। ফিরোজ খান নুন ছিলেন পাকিস্তানের সপ্তম প্রধানমন্ত্রী (১৯৫৭-৫৮)। এর আগে তিনি ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার গভর্নর ছিলেন। তার পরের তিন বছর ছিলেন (১৯৫৩-১৯৫৬) পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী। 

এর আগে ১৯৪৫ সালে ফিরোজ খান নুন বিয়ে করেন ভিক্টোরিয়া (ভিকারুণ নিসার পূর্ব নাম) নামের অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত এক সুন্দরীকে। বিয়ের পর ভিক্টোরিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে 'ভিকার-উন-নিসা' নাম পরিবর্তন করেন।

ফিরোজ খানের রাজনৈতিক জীবনেরও সক্রিয় সঙ্গী ছিলেন ভিকারুণ নিসা। ফিরোজ খানের সাথে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনিও। তৎকালীন ভারতের ভাইসরয়ের মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগ করে স্ত্রীকে নিয়ে লাহোর চলে আসেন ফিরোজ খান নুন। তারপর ফিরোজ খানের পাশাপাশি সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হন ভিকারুণ নিসা। 

পাঞ্জাবে যখন আইন অমান্য আন্দোলন চলছিল, সে সময় ভিকারুণ নিসা নুন তিনবার গ্রেফতার হওয়ার পরেও দমে যাননি। ব্রিটিশ সমর্থিত খিজরের মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে পুনঃরায় আন্দোলনকে সংগঠিত করতে সহযোগিতা করেন তিনি।

স্বামীর মৃত্যুর পরেও ভিকারুণ নিসা বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক কাজে জড়িত থাকেন। পূর্ব বাংলার মেয়েদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এই দেশ থেকে যেন মেয়েরা অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ-এর মতো উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য যেতে পারে, সেজন্য চেষ্টা করে যান ভিকারুণ নিসা নুন। এ উপলক্ষে ১৯৫২ সালের ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন ভিকারুণনিসা নুন স্কুল। প্রতিষ্ঠার কয়েকমাস পরই ভিকারুণনিসা সিনিয়র কেমব্রিজ স্কুল হিসেবে পরিবর্তিত হয়।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হলে এটি একটি সম্পূর্ণরুপে বাংলা মাধ্যম স্কুল হিসাবে পরিচিত হয়। ১৯৭৮ সালে স্কুলটি মাধ্যমিক পর্যায় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। সেই ছোট পরিসরের ভিকারুণ নিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ আজ দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ। 

পাকিস্তান বিভাজনের পর ভিকারুণ নিসা বিভিন্ন শরণার্থী কমিটি এবং ক্যাম্পে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। তিনি ঘনিষ্ঠভাবে রেডক্রসের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তিনি রাওয়ালপিন্ডিতেও মেয়েদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘ অসুস্থতার পর ভিকারুণ নিসা নুন ২০০০ সালের ১৬ জানুয়ারি ইসলামাবাদে মৃত্যুবরণ করেন।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি