সহসাই কাটছে না পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা
প্রকাশিত : ১৭:৪১, ২৮ আগস্ট ২০২২ | আপডেট: ১৮:৪৬, ২৮ আগস্ট ২০২২

ভারতের সঙ্গে ‘স্থায়ী শান্তি’ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চকণ্ঠ হলেও ক্ষমতা হারানো ইমরান খানের দলের নেতা শাহবাজ গিলকে গ্রেপ্তারের পর দেশটিতে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতায় আদতে ‘ক্ষীণ’ সেই সম্ভাবনা আরো ক্ষীণতর হয়ে উঠেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই অস্থিরতা আবারও প্রমাণ করে যে বাস্তবে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে প্রকৃত ‘স্থায়ী শান্তি’ অর্জন কতটা কঠিন।
শেহবাজ শরীফের দল তথা বর্তমান পাকিস্তান সরকার মনে করছে ইমরানের আক্রমণাত্মক মনোভাব ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
গত ২০ আগস্ট হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় শেহবাজ শরীফ বলেছিলেন, টেকসই শান্তি কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের উপায়।
আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে ‘স্থায়ী শান্তি’ চান বলেও জানিয়েছিলেন শেহবাজ। দুই দেশের জন্যই যুদ্ধ বিকল্প পথ নয় বলে মনে করেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দাবি, তার দেশ কখনই আগ্রাসী ছিল না; ইসলামাবাদ তার সামরিক বাহিনী দেশের সীমান্ত রক্ষার জন্যই ব্যবহার করে, আক্রমণাত্মক ব্যবস্থার জন্য নয়।
শরীফ বলেছেন, ইসলামাবাদ এবং নয়াদিল্লির উচিত বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং তাদের জনগণের অবস্থার উন্নতিতে সহযোগিতা করা।
তার কথাগুলো ইতিবাচক সন্দেহ নেই। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরি জেলায় ভারতীয় সেনাদের গুলিতে পাকিস্তানী এক সন্ত্রাসী আহত হওয়ার খবর সেখানকার গণমাধ্যমে আসার পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে তবারক হুসেন নামের ওই সন্ত্রাসী জানিয়েছেন, তাকে পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তা কর্নেল ইউনুস চৌধুরী অর্থ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন।
এদিকে দেশটির এক নারী বিচারক ও ইসলামাবাদের পুলিশপ্রধানকে নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য করে যে মামলায় জড়িয়েছেন ইমরান খান, সম্প্রতি সেটি থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন তিনি।
এর আগে শাহবাজ গিলের গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় ইমরান ২০ আগস্ট ইসলামাবাদে একটি সমাবেশে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে কাজ করায় দেশটির বিচার বিভাগ এবং সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করেছিলেন।
তিনি ইসলামাবাদের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এবং ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশকে ‘আমরা আপনাকে রেহাই দেব না’ বলে সতর্ক করেছিলেন। আর নারী বিচারককে বলেছিলেন, ‘আপনিও এর জন্য প্রস্তুত হন, আমরাও আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আপনাদের সকলের অবশ্যই লজ্জিত হতে হবে’।
ইমরানের এ ধরনের বক্তব্য দেশটির সশস্ত্র বাহিনী এবং সরকার উভয়কেই বিচলিত করে তুলেছে। তারা মনে করছে, সাবেক এই ক্রিকেটার তার সমালোচনা করার সীমা অতিক্রম করেছেন।
যেকারণে ইমরানের বক্তব্যকে পুলিশ ও বিচার বিভাগকে ভয় দেখানো এবং তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে পাকিস্তান সরকার। এরপরই ইসলামাবাদের মারগাল্লা থানায় ইমরানের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়।
ইমরানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের (সন্ত্রাসবাদের জন্য শাস্তি) ৭ এর ধারায় মামলা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা এবং বিচার বিভাগকে হুমকি দেওয়ার গুরুতর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে ইমরানকে কয়েক বছরের জেলও খাটতে হতে পারে।
এ অবস্থায় ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নয়নে শুধু শেহবাজ শরীফই নয়, ইমরান খান এবং দেশটির সেনাবাহিনীকেও উদ্যোগী হতে হবে। তাদের বুঝতে হবে কী উপায়ে দুই দেশের মধ্যে শান্তির পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব এবং বাস্তবে আদৌ তা সম্ভব কিনা।
সর্বপরি পাকিস্তানকে প্রথমে নিজ দেশের সমস্যা মেটাতে হবে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে ‘সন্ত্রাসী রপ্তানি’ বন্ধ করতে হবে।
এসবি/
আরও পড়ুন