ঢাকা, বুধবার   ০৮ মে ২০২৪

ব্রেক্সিট কী, কবে এবং কীভাবে কার্যকর হবে?

প্রকাশিত : ১৯:৪৩, ১৩ মার্চ ২০১৯ | আপডেট: ১৯:৪৬, ১৩ মার্চ ২০১৯

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্রেক্সিট ইস্যুতে একটির পর একটি আপডেট নিয়ে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে? কোন সমস্যা নেই। পুরো বিষয়টি সংক্ষেপে বুঝতে পারবেন এখানে।

ব্রেক্সিট কী?
`ব্রিটিশ এক্সিট` নামটিকে সংক্ষেপে ডাকা হচ্ছে ব্রেক্সিট নামে। এটি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাবার প্রক্রিয়া।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কী?
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) হচ্ছে ২৮টি দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক জোট। এই জোটের সদস্য দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করে থাকে, এসব দেশের নাগরিকরা জোটভুক্ত যেকোন দেশে গিয়ে থাকতে ও কাজ করতে পারেন।

১৯৭৩ সালে যুক্তরাজ্য ইইউতে যোগ দেয়। তখন এটির নাম ছিল - ইইসি ( ইউরোপিয়ান ইকনোমিক কম্যুনিটি)।

ইইউ ছাড়ছে কেন যুক্তরাজ্য?
৪০ বছরের বেশি সময় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে থাকার পর ২০১৬ সালের ২৩শে জুন একটি গণভোট নিয়েছিল যুক্তরাজ্য। সেখানে সেদেশের নাগরিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল - যুক্তরাজ্যের কি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে থাকা উচিত নাকি উচিত না?

৫২ শতাংশ ভোট পড়েছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে,আর থাকার পক্ষে ছিল বাকি ৪৮ শতাংশ ভোট। কিন্তু সেই ভোটের ফলাফলের সাথে সাথেই ব্রেক্সিট হয়ে যায়নি। এই বিচ্ছেদ ঘটবে আগামী ২৯শে মার্চ।

এখন পর্যন্ত কী ঘটেছে?
২০১৬ সালে সবেমাত্র শুরু হয়েছে এই প্রক্রিয়া। এরপর থেকে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতা চলছে। আলোচনা মূলত এই `ডিভোর্স` চুক্তিটি নিয়েই। আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে - ঠিক কী উপায়ে যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বের হবে; ছাড়ার পর কী হবে সেটি নয়।

এই চুক্তিটি `প্রত্যাহার চুক্তি` নামে পরিচিত। প্রত্যাহার চুক্তি কী বলছে?
প্রত্যাহার চুক্তির মূল বিষয়গুলো:
বের হতে হলে যুক্তরাজ্য ইইউকে যে পরিমাণ অর্থ দিতে হবে তা হলো - প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাজ্যের যেসব নাগরিক ইইউ ভুক্ত দেশগুলোতে রয়েছেন তাদের এবং যুক্তরাজ্যে ইইউভুক্ত দেশগুলোর যেসব নাগরিক রয়েছেন তাদের কী হবে। নর্দান আয়ারল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড রিপাব্লিক এর মাঝামাঝি ইইউ এবং যুক্তরাজ্যের সীমানা কীভাবে নির্ধারণ হবে।

যুক্তরাজ্য এবং ইইউকে একটি নির্দিষ্ট `অন্তবর্তীকালীন সময়` দেওয়া হয়েছে যেন তারা একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে এবং নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য বুঝে নিতে পারে।

এর মানে হলো - যদি প্রত্যাহার চুক্তি সবুজ সংকেত পায়, তাহলে ২৯শে মার্চ, ২০১৯ থেকে ৩১শে ডিসেম্বর ২০২০এর মধ্যে তেমন কোন বড় পরিবর্তন হবে না।

এছাড়া দুই পক্ষের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কেমন হতে পারে - সে বিষয়ে একটি রাজনৈতিক ঘোষণার উল্লেখ রয়েছে এই চুক্তিতে। তবে দু`পক্ষকে সেসব যে পুরোপুরি মানতে হবে - তা নয়। এটি হলো ভবিষ্যতে আলোচনার সুযোগের একটি চেষ্টা।

২০১৮ সালের নভেম্বরে যুক্তরাজ্য এবং ইইউ এই চুক্তিতে একমত হয়েছে। তবে তা কার্যকর করতে হলে ব্রিটিশ এমপিদেরও একমত হতে হবে। এখন পর্যন্ত তারা এই চুক্তির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।

প্রত্যাহার চুক্তিতে এমপিরা কীভাবে ভোট দিয়েছেন? এখন পর্যন্ত তারা দুই বার ভোট দিয়েছেন। প্রথমবার ১৫ই জানুয়ারিতে, প্রধানমন্ত্রী মে ২৩০ ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন।

পরে টেরিজা মে ইইউ`র সাথে দেন-দরবার করে আরো কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসলেও ১২ই মার্চ এমপিরা আবারো এই চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেন। এবারের ব্যবধান দাঁড়ায় - ৩৯১ এবং ২৪২ ভোট।

এখন কী ঘটছে?
এমপিরা আবারো ১৩ই মার্চ (আজকে) বুধবার ভোট দিবেন যে তারা কি কোন ধরনের চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট ছাড়তে চান কি-না। মনে করা হচ্ছে - তারা এবারো `না` বলবেন।

যদি এমপিরা না বলেন, তবে টেরিজা মে ১৪ই মার্চ এমপিদের কাছে জানতে চাইবেন - ইইউ থেকে বের হওয়ার তারিখ ২৯শে মার্চ থেকে আর পেছানো যায় কি-না।

মিজ. মে বলেছেন, এ বিষয়টি জুনের শেষ নাগাদ নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। আর তখন বিষয়টি একবারের জন্যই হবে। তখন ইইউকে অবশ্যই এই বিলম্ব মেনে নিতে হবে।

কিন্তু ২৩শে মে শুরু হওয়া ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের নির্বাচনে যুক্তরাজ্য অংশ না নিলে এরপর আর সময় বাড়ানো হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইইউ।

জনগণ কেন এই বিলটির বিরোধিতা করছে?
বিলটি নিয়ে বিরোধিতাকারীদের নানা ধরনের অভিযোগ আছে। অনেকেই দাবি করেন, বিলটি যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইইউ-এর প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করার মতো সুযোগ দেয়নি। তাছাড়া আরেকটি বড় আপত্তির জায়গা হলো আইরিশ সীমান্তে আসলে কী হবে - তা নিয়ে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য দু`পক্ষই এ বিষয়ে আরেকটি নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা চুক্তিতে উল্লেখ করেছে। এটি হলো ব্যাকস্টপ।

ব্যাকস্টপ কী?
ব্রেক্সিট সমঝোতায় যাই আসুক না কেন আয়ারল্যান্ড দ্বীপে একটি মুক্ত সীমান্ত রাখার সর্বশেষ চেষ্টা বোঝাতে `ব্যাকস্টপ` শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

এটা হলো এমন ব্যবস্থা যেখানে যুক্তরাজ্যের অন্যান্য অংশ ছাড়া শুধুমাত্র নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে খাদ্যদ্রব্যসহ বেশ কিছু বিষয়ে ইইউ-এর নিয়ম বলবৎ থাকবে।

প্রধামন্ত্রী টেরিজা মে বলছেন - যদি পরিকল্পনামাফিক সবকিছু হয়, এটা তেমন কোন কাজে আসবে না। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত কয়েকজন এমপি। তাদের যুক্তি, ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলেও তার অংশ উত্তর আয়ারল্যান্ড ইইউর আইনের কাঠামোর মধ্যেই থেকে যাচ্ছে, এটা হতে পারে না। আবার অনেকে ইইউ-এর কাছাকাছি বা ভেতরেও থাকতে চাইছেন।
আবার কেউ কেউ বলছেন, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডকে যুক্তরাজ্যে অন্যান্য অংশ থেকে ভিন্নভাবে দেখা উচিত নয়।

২৯শে মার্চ যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বের হচ্ছে?
আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সময় রাত ১১টায় যুক্তরাজ্য বের হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে ঐদিন কী হবে। এই তারিখ আবার পেছাতেও পারে। আগেই যেমন বলা হয়েছে যে তারিখ পেছানো নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের মধ্যে ভোটাভুটি হবে।

যদি তারা তারিখ পেছাতে না চায় - তখন কী হবে?
মিজ. মে বলেছেন, যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তারা তা তারিখ পিছিয়ে লাভ হবে না। এমনকি ইউরোপীয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস বলেছে যে কোন ধরনের সম্মতি ছাড়াই যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিট থেকে বের হয়ে আসতে পারে। কিন্তু মিজ. মে বলেছেন, তিনি সেটা করবেন না।

চুক্তি ছাড়া বের হলে যুক্তরাজ্য কী করবে?
চুক্তিহীন থাকার অর্থ হচ্ছে যুক্তরাজ্য একটি প্রত্যাহার চুক্তিতে সম্মত হতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মানে দাঁড়ায়, ২৯শে মার্চের পর যুক্তরাজ্য অন্তর্বর্তীকালীন কোন সময় পাবে না এবং যুক্তরাজ্যে সমস্ত ইইউ আইন অকার্যকর হয়ে যাবে। সরকার এই পরিস্থির জন্য `প্রস্তুতি নিচ্ছে` বলে জানিয়েছে।

সরকার ধারণা করছে - এর ফলে কিছু খাদ্য দ্রব্যের দাম বাড়তে পারে এবং কাস্টমস-এর চেকিং এর জন্য হাজার হাজার পাউন্ড খরচ হতে পারে। তবে পোষা প্রাণী, পাসপোর্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহসহ - সব বিষয়ে একটি বিস্তর নীতিমালা প্রকাশ করেছে ব্রিটেন।

সূত্র-বিবিসি

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি