ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৪ মে ২০২৪

দুবেলা খেতে না পাওয়া শরিফুলই দলের সেরা অস্ত্র!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

শরিফুল ইসলাম

শরিফুল ইসলাম

দুবেলা ঠিকমতো খাবারই জুটতো না, সেখানে মাছের তরকারি তো দিবাস্বপ্নই। তাই অভাবের সংসারে বড়শি হাতে নিজেই পুকুরপাড়ে বসে পড়ত কিশোর ছেলেটি। ধৈর্য ধরে বসে থাকত, মাছ যদি পাওয়া যায় তাহলে একদিনের জন্য খাবারটাই হয়তো এলাহি হয়ে যাবে। 

পঞ্চগড়ের সেই ধৈর্যশীল কিশোরই আজ পরিণত হয়েছে টগবগে গতিময় তরুণে। পরিস্থিতি পালটে গিয়ে সে-ই এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের সেরা বোলিং অস্ত্র হয়ে ওঠার পথে। শরিফুল ইসলাম নামের সেই ছেলেটি আজ লড়াই করে হতে বসেছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের প্রধান কাণ্ডারি।

বর্তমানে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের যে কজনকে জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ হিসেবে ভাবা হচ্ছে, তাদের অন্যতম বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। লম্বা গড়নের এ পেসার যেমন একই জায়গায় টানা বল ফেলে ব্যাটসম্যানকে বিরক্ত করতে ওস্তাদ, তেমনি প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে পারে বাউন্সারেও।

অথচ ক্রিকেটার হওয়ার ভাবনাটাই ছিল না শরিফুলের। ২০১৬ সালে স্থানীয় এক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে টেপ টেনিসে তার বল দেখে মুগ্ধ হন রাজশাহীর স্বনামধন্য কোচ আলমগীর কবির। তার ডাকেই দিনাজপুর থেকে রাজশাহীতে আসে শরিফুল।

আলমগীর কবিরের কথা তাই প্রতিমুহূর্তে বলে চলেন শরিফুল। বলেন, 'আমার খেলার কোনও সরঞ্জাম ছিল না। তিনিই আমার হাতে ভারত থেকে আনা একজোড়া নতুন বুট তুলে দেন। সকালে শুধু আমাকে নিয়েই একটা আলাদা প্র্যাকটিস সেশন রাখতেন। বিকেলে যত্ন নিতেন নিজের সন্তানের মতো করেই।'

তবে, ২০১৭ সালের ঢাকা প্রিমিয়ার লীগেই প্রথম সবার নজর কাড়েন শরিফুল। ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন এই তরুণ। ওই সাফল্যই তাকে খুলে দেয় বিপিএল ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের দরজা। সেবার বিপিএলে খুলনা টাইটান্সের হয়ে অভিষেক হয় তার।

তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি শরিফুলকে। খেলার টাকায় বাবার জন্য গরুর ফার্ম করে দিয়েছেন শরিফুল, পঞ্চগড়ে বানাচ্ছেন নতুন বাড়ি। অথচ একটা সময় সারাদিনে একবেলা পান্তাভাতের সঙ্গে লবণ-পেঁয়াজ মাখিয়ে খেয়ে চালিয়ে যেতে হয়েছে অনুশীলন। সেখানেই এখন যেন আলোময় চারিদিকে। শরিফুলে প্রতিভাই বদলে দিয়েছে কতকিছু।

তবে শুরুটা এমন মসৃণ ছিলনা শরিফুলেন জন্য। পরিবারের তেমন কোনও ইচ্ছাই ছিল না তিনি ক্রিকেটার হন। তাদের কাছে এটা ছিল আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখার মতো। শরিফুলে ভাষায়, ‘আমার বাবা-মা চাইতেন না আমি ক্রিকেটার হই। তারা বলতেন, তুমি পারবে না। প্রথম ২-৩ মাস তো আমাকে কোনও সাহায্যই করেননি তারা, শুধু আমার ভাই ছাড়া।’

ভাইয়ের রক্ত পানি করা সমর্থনেই এতদূর আসা শরিফুল বলেন, ‘আমার ভাই আমাকে বলেছিলেন, দরকার হলে গায়ের রক্ত বিক্রি করে তোকে খেলাবো। চিন্তা করিস না। এরপর আবাহনীর হয়ে ৪ উইকেট পাওয়ার পর টিভিতে একদিন বাবা-মা আমার সাক্ষাৎকার দেখতে পান। তখনই তারা প্রথম উপলব্ধি করেন যে, বড়কিছু হওয়ার সামর্থ্য আমার আছে।’

সুতরাং বয়সভিত্তিক, ঘরোয়া ক্রিকেটে শরিফুল যে ঝলক দেখিয়ে চলেছেন, সেটা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে অচিরেই জাতীয় দলে দেখা যেতে পারে তাকে। আর সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ দল যে পেস বোলিংয়ে একজন লম্বা রেসের ঘোড়া বা রত্ন পেতে যাচ্ছে সেটা বলাই যায়। 

কেননা, লম্বা সময় ধরেই পেস বোলিং সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ। শুধু মাশরাফী আর মুস্তাফিজ ছাড়া জাতীয় দলে স্থায়ী হতে পারেননি কেউই। তাই টাইগার পেস বিভাগে শরিফুল যোগ হলে বোলিংয়ে বাংলাদেশের ধার যে আরও বাড়বে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সূত্র-ক্রিকইনফো।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি